3:32 pm , July 19, 2019
নিজস্ব ও চরফ্যাশন প্রতিবেদক ॥ চরফ্যাশনের একটি পুকুরে পড়ে জ্বলে থাকা টর্চ লাইট নিয়ে হুলস্থুল কান্ড ঘটেছে। নাগ-নাগিনীর মাথার মণি, হীরার খনি, হাজার বছর পুরোনো কোনো রাজপ্রসাদ জেগে উঠেছে, তার বাতি জ্বলছে, রহস্যময় আলোসহ নানা রঙ দিয়ে প্রচার করে হুলস্থুল ওই কান্ড ঘটেছে চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গনি মিয়ার সেন্টার এলাকার হাতেম আলী হাওলাদার বাড়ির পুকুরে। গত বুধবার থেকে পুকুরে জ্বলে থাকা টর্চের ওই আলো দেখতে পায় বাড়ির নারীরা। যা পুরুষরা দেখার পর থেকে নানা কাহিনীতে পরিনত। এক কান দুই খান হতে হতে শুধু চরফ্যাশন উপজেলায় থেকে থাকেনি। সমগ্র ভোলা জেলার হাজারো মানুষের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়। উৎসুক হাজারো মানুষ টর্চের আলো দর্শনে ছুটে যায় পুকুর পাড়ে। টর্চের আলোর রহস্য সমাধানে পুকুরে নামার কোন উপায় রাখেনি অতি উৎসাহী ও রুপ কথার কাহিনীতে বিশ্বাসী সাধারন মানুষ। নানা রুপ কথার কাহিনীর বাস্তব পুকুরের আলো প্রমান করতে মনগড়া বাস্তবও তুলে ধরেছে। তাই গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর পুলিশ পুকুর পাড়টি ঘিরে রাখে। পরে রাত দুইটার দিকে পুলিশ পুকুরে নেমে লাইট উদ্ধারের পর থেমেছে কল্পকাহিনীর ঘটনা বাস্তব রুপ নিয়ে নেয়া আলোর হুলস্থুল কান্ড।
ঘটনার সুত্রপাত যেভাবে ছড়িয়েছে
বাড়ির মালিক মো. আল-আমিন সংবাদ কর্মীদের জানান, গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির গৃহবধূরা পুকুরে হাতমুখ ধৌত করতে যায়। তখন পুকুরের মাঝখানে (ফেলা কিংবা পড়ে থাকা টর্চের আলো) গোলাকার আলো দেখতে পায়। রাতে পুরুষরা বাড়ি ফিরলে ঘটনাটি তাদের অবহিত করে গৃহবধূরা। প্রথমে তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আলো আরও বেড়ে যায়। সেই আলো পুকুরের কিনারায় চলে আসে। তখন সবার চোখে পড়ে যায়। আল-আমিনের ভাষ্য অনুযায়ী, আলোর ব্যস হবে আনুমানিক ১/২ ফিটের মতো।
স্থানীয় বাসিন্দা আনিস হাওলাদার সাংবাদিকদের কাছে নিজের ও স্ত্রীর কৃতিত্ব তুলে ধরে আরো একদিন পূর্বে আলো দেখেছেন জানিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী গত মঙ্গলবার রাতে পুকুরে মাছ ধৌত করতে গিয়ে আলো দেখে আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। পরে বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির অন্য গৃহবধূরাও আলো দেখে তাদের জানিয়েছে। প্রথমে তারা বিষয়টি লেজার লাইটের আলো ভেবেছিল জানিয়ে আনিস হাওলাদার বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুকুরের কিনারে দেখলাম তখন বিশ্বাস করলাম। তিনি বলেন, এটা আসলে কীসের আলো আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। আলো দেখে অনেক লোকজন অনেক কথা বলে। কেউ বলে হীরার খনি, কেউ বলে সাপের মাথার মণি, কেউ বলে পুরোনো কোনো রাজমহল, আবার কেউ বলে সাত রাজার ধন।
স্থানীয় উৎসুক জনতা মো. সিব্বির বলেন, আমরা খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছি। আমার মতো হাজার হাজার লোকজন আসছে।
রহস্যর ফানুস আরো উড়িয়ে জানায়, এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেখতে আসা কয়েকজন লোক পুকুরে নামে। তখন তারা হঠাৎ তলিয়ে যাচ্ছিল। ওই সময় উপস্থিত জনতা তাদের বাঁশ ফেলে উদ্ধার করে।
তখন ওই বাড়ির লোকজন দেখে অবাক হয়েছে জানিয়ে সিব্বির বলে, তলিয়ে যাওয়া স্থানে কয়েকদিন পূর্বে নাকি হাঁটু সমান পানি ছিল। হঠাৎ এত গভীর হওয়ার বিষয়টি তারাও জানে না। তিনি আরও বলেন, পুকুরে নামা দুইজন বলেন সেখানে কোনো একটা ঘরের মতো রয়েছে। ঘরের উপরে মিনারে মতো তারা অনুমান করেছেন।
এছাড়াও তারা আরও বলেন, অনেক গভীর কোনো সুরঙ্গের মতো তারা অনুমান করছেন। এওয়াজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম খোকন বলেন, খবর পেয়ে আমি গিয়ে রহস্যময় আলো দেখতে পাই। অনেকে বাঁশ দিয়ে ওই স্থানে দেখার চেষ্টা করলে কোথাও বাঁশের সঙ্গে শক্ত কিছু আটকে পড়ছে। আবার কোথাও অনেক গভীর।
রহস্যময় আলোর নিয়ে বাড়ির লোকজন ভীত হয়ে পড়ে। তারা বলছেন, এটা যদি সাত রাজার ধন-সম্পদ না হয়, তাহলে ভূতের কাজ হতে পারে। এ জন্য আতংকে রয়েছেন। দ্রুত এর তদন্ত করে রহস্যময় ঘটনা অবসানের জন্য সরকারের সহযোগিতায় চেয়েছে তারা।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারকে জানায় এক সংবাদ কর্মীরা। তিনিও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, আমাকে কেউ এ বিষয়ে বলেনি। এটা হয়তো কোনো হাজার হাজার বছরের পুরোনো কিছু অথবা কোনো গ্যাস জাতীয় কিছু হবে। আমি সকালে সেখানে পরির্দশনে যাব।
কিন্তু তার আগে রাত দুইটায় পুলিশ পুকুরে নেমে টর্চটি উদ্ধার করে কল্পকাহিনীর পাখা মেলা বন্ধ করেছে।