3:17 pm , July 18, 2019
খান রুবেল ॥ বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার এরশাদের সাথে আপোষ করে ক্ষমতায় গেছে। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি জণগনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছেন। স্বাধীনতার মুলমন্ত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করেছেন সেই নেত্রীকে কারান্তরীন করে রেখেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে বরিশাল নগরীর বান্দ রোডস্থ হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে তা নজিরবিহীন। সরকার এ দেশকে নারকীয় দেশ করে রেখেছে। বসবাসের অনুপযোগী দেশ করে রেখেছে। সারা দেশে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের এক লাখের উপর মামলা দিয়েছে। এক হাজারের অধিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। গুম-খুন ও নির্যাতন করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার সমস্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রন করছে। তারা বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রন করছে। যে কারনে শত চেষ্টার পরেও দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিচ্ছে না। আজ আমরা এমন একটি পর্যায়ে পৌছেছি যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন অধিকার রক্ষায় ঘুরে দাড়াতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ৭৫ সালে ক্ষমতায় এসে বাকশাল কায়েম করেছিলো। সেই দল পুনরায় ক্ষমতায় এসে লুকোচুরির মাধ্যমে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আর তাই আজ দেশে শিশু থেকে একশ বছর বয়সি নারীও ধর্ষিত হচ্ছে। আদালতে বিচারকের সামনে খুন হচ্ছে। জণগন আজ কোথায় গিয়ে দাড়াবে, কি বিচার চাইবে?
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার আমলাদের মাধ্যমে লুকোচুরির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। সে জন্যই আজ আমলাদের খুশি করার বাজেট করেছে। কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অথচ সরকারি আমলাদের দিন দিন বেতন বাড়ছে। এ সরকার আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবে।
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, আমরা বিএনপি নিয়মতন্ত্রে বিশ^াসী, আমরা গণতন্ত্রে বিশ^াসী, আমরা নির্বাচনে বিশ^াস করি। সে জন্যই আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কি হলো, ৩০ জুলাই’র ভোট ২৯ জুলাই রাতেই লুকোচুরি করে শেষ করেছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে তাদের কথায় আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিলাম। কিন্তু ক্ষমতায় বসে তারা তা দেয়নি। কারন তারা জানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ একটি ভোটও পাবে না।
জণগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করুন। তাকে মুক্তি না দিলে আপনারাও রেহাই পাবেন না। কারন তিনি মুক্তি না পেলে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। কারান্তরীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে বরিশাল থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিতে হবে। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্তি করে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, বরিশালের সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। এ ঢল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ঢল। এদের সকলের দাবী একটাই স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।
তিনি বলেন, দেশ আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। এক ধর্ষণের নগরীতে পরিনত হয়েছে। বিচার বিহীন হত্যাকান্ড, গুম, খুন, শিশু-কিশোরদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এ সরকারের লোকজন তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো। কিন্তু বর্তমান সরকার লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। আমরা হারতে জানি না। সংগ্রাম করতে জানি। গণ বিষ্ফোরণের মধ্য দিয়ে অবৈধ সরকার পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।
বিভাগীয় সমাবেশের সভাপতি ও বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বরিশাল থেকে আন্দোলনের শুরু করেছি। অতি সত্ত্বর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। শুধু মাত্র মানববন্ধন এবং সভা করে অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের মুক্তি সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন রাজনীতির সিস্টেম চেঞ্চ করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। রাজনীতি চলে গেছে সরকারি আমলাদের কাছে। আমলাদের খুশি করতেই বাজেট করা হয়েছে। জণগনের মধ্যে আজ বড় হতাশা তাদের ভোটাধিকার নেই। জণগনের ভোটের দায়িত্ব দিতে হবে। জণগেনের ভোটের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদেরকেই দিতে হবে।
বিভাগীয় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব: শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবঃ হাফিজ উদ্দিন আহেমদ-বীর বিক্রম, এয়ারভাইস মার্শাল অব: আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুছুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারের সঞ্চালনায় বিভাগীয় সমাবেশে বরিশালের ছয় জেলা বিএনপি’র সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগন বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল, জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চানসহ জেলা, উপজেলার নেতৃবৃন্দ।