মিন্নি ৫ দিনের রিমান্ডে মিন্নি ৫ দিনের রিমান্ডে - ajkerparibartan.com
মিন্নি ৫ দিনের রিমান্ডে

3:06 pm , July 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশব্যাপি আলোচিত বরগুনার কলেজ ছাত্র রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার প্রধান সাক্ষী নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে বরগুনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নি’র রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির। বিচারক আবেদনটি আমলে নিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বরগুনা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিদের সনাক্ত করণ এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিও সহ অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার বাসা থেকে মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে রিফাত হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশ। যে কারনে মঙ্গলবার রাত ৯টায় মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহতের স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এমনকি রাতেই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনা পুলিশ লাইন-এ ডেকে নেয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং বিশ্লেশন করে হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিন্নি’র সরাসরি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। তাই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়। রিফাতের বাবা ছেলের হত্যার জন্য মিন্নিকে দায়ি করে ১০টি অভিযোগ তুলে ধরেন। এজন্যই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্নিকে ডেকে নেয়া হয়েছিলো। এমনকি মিন্নি’র হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টিও বেরিয়ে এসেছে।
এসপি মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত হত্যাকান্ডের সাথে মাদকের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তদন্ত এবং আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানাগেছে, তাতে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কারণ এবং ব্যক্তি আক্রোশ থেকেই এই রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। তবে তদন্তের সাথে বিস্তারিত প্রকাশে অপরাগতা প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার।
অপরদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, অনেক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। তবে তা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে হত্যার সাথে মিন্নির সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ^াস। এজন্যই তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে বরগুনা সদর থানা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মিন্নি’র সাথে নয়ন বন্ডের পূর্ব সম্পর্ক রয়েছে। তা জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে। এমনকি ঘটনার আগের রাতে নয়ন ও মিন্নি’র মধ্যে যে পরিকল্পনা হয়েছে সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু মিন্নি সে অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকি মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদে একটি মুহুর্তেও সে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিজে থেকে স্বীকার করেনি।
তাছাড়া যেসব আসামী গ্রেফতার হয়েছে তাদের সনাক্ত করতে মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মিন্নি গ্রেফতার এবং পলাতক আসামী সবাইকে চেনে না বলে দাবী করেছে। সে শুধুমাত্র পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ড ও গ্রেফতারকৃত রিফাত ফরাজী এবং তার ভাই রিশান ফরাজীকেই চেনে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কলেজছাত্র রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ০০৭ গ্রুপের নয়ন বন্ড বাহিনী। পরে একই দিন বিকাল সোয়া ৪টায় চিকিৎসাধিন অবস্থায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে রিফাতকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে দেখা যায়, নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী রামদা হাতে রিফাত শরীফকে একের পর এক আঘাত করছে। তখন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি হামলাকারীদের ঠেকাতে নিজের জীবন বাজি রেখে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তবে ঘটনার কয়েক দিন না যেতেই ভাইরাল হয় সিসি ক্যামেরার আরো দুটি ভিডিও। যা রিফাত হত্যার সাথে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি’র জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন আলোচনা। তখন রিফাতের পরিবারও সন্তানের হত্যাকারী হিসেবে পুত্রবধূ মিন্নিকে অভিযুক্ত করেন। এমনকি রিফাতের বাবা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ সহ গ্রেফতারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলনও করে। যদিও ওই সংবাদ সম্মেলনের পর দিন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নি। সে রিফাত হত্যায় অভিযুক্তদের বাচাতে তার (মিন্নি) বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ করেছিলেন। পাশাপাশি নয়ন বন্ডদের প্রশ্রয়দাতা প্রভাবশালীদের বিচারও দাবী করেছিলেন মিন্নি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT