3:01 pm , July 13, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চুরির অভিযোগে গৌরনদীতে যুবককে গণধোলাই’র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ফেসবুক ব্যবহারকারিরা। আর পরিবারের দাবী তাদের সন্তান এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নয়। তবে থানা পুলিশ বলছে চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে গণধোলাই’র শিকার হয়েছে যুবক জিসান হাওলাদার (১৯)। তবে ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা না হলেও রহস্যজনক কারনে অপর একটি চুরি মামলায় জিসানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। চোর সন্দেহে নির্মম নির্যাতনের শিকার জিসান হাওলাদার গৌরনদী উপজেলার উত্তর ধানডোবা গ্রামের আলমগীর হাওলাদারের ছেলে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একই গ্রামের মোক্তার বাজারে তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
একই সময় উপজেলার ধানডোবা গ্রামের শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে সাগরকে (২০) চুরির অপরাধে আটক করা হলেও ভাইরাল হাওয়া ভিডিতে তাকে মারধর বা নির্যাতনের কোন দৃশ্য নেই।
জানাগেছে, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্য রাতে মোক্তার বাজারে মুদি দোকানে চুরির অভিযোগে জিসান ও সাগরকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তাদের মধ্যে সাগরকে হাত-পা বেধে ফেলে রাখা হয় এবং জিসানকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
যার পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করা হয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় পক্ষে বিপক্ষে শুরু হয় নানান বিতর্ক।
ভাইরাল হাওয়া ভিডিওতে দেখা যায় জিসানকে নির্মমভাবে নির্যাতন করছে কিছু লোক। আর তার সাথে থাকা সাগরকে হাত-পা বেধে বাজারের মেঝেতে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দু-তিনজন লোক জিসানের হাত ধরে আছে এবং অপর একজন ব্যক্তি তাকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে এবং কিল-ঘুষি মারছে। জিসান আত্মরক্ষায় ছোটা-ছুটি করলেও অপর দু’জন তাকে ধরে রেখেছে।
এদিকে ঘটনার সময় বাজারে অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। জিসানকে নির্যাতনের থেকে রক্ষায় তাদের কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। খবর পেয়ে জিসানের মা মুকুলি বেগম ছেলেকে রক্ষায় ছুটে আসেন। তিনি সন্তানকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়।
জিসানের মা মুকুলি বেগম ও নানা ফজলুল হক হাওলাদারের দাবী তাদের সন্তান জিসান এমন অপরাধ করতে পারে না। তাকে চুরির অপবাদ দিয়ে একদল সন্ত্রাসী পরিকল্পিতভাবে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ তাদের। তাই এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করেন তারা।
জানতে চাইলে গৌরনদী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, তদন্ত করে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানাগেছে তাতে এটি একটি চুরির ঘটনা। চুরি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
এদিকে গৌরনদী মডেল থানার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে চুরির অভিযোগ দিয়ে যুবকটিকে নির্দয়ভাবে পেটানো হলেও ওই ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। যুবককে অন্য একটি চুরি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ওসি গোলাম সরোয়ারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ওকে একটি চুরি মামলায় দেয়া হয়েছে। তবে এ মামলার বাদী কে সেটা এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া জিসানের পরিবার যে অভিযোগ তুলেছে সেটাও মনগড়া দাবী করে ওসি বলেন, চুরির সময় স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে অভিযোগ থাকলে পরিবারকে তা থানায় লিখিতভাবে জানাতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।