বিশাল দরিয়ায় কোথায় খুজবো তোমায় বিশাল দরিয়ায় কোথায় খুজবো তোমায় - ajkerparibartan.com
বিশাল দরিয়ায় কোথায় খুজবো তোমায়

2:58 pm , July 13, 2019

শহিদুল ইসলাম জামাল, চরফ্যাসন ॥ চরফ্যাসনে নিখোঁজ ২০ জেলে পরিবারের অন্তহীন আহাজারীতে আহমদপুর ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। জেলেদের জীবন নিয়ে দোলাচলে থাকা স্বজনদের শান্তনা দেয়ার জন্য কোন ভাষাই যেন যথেষ্ট নয়। অনবরত কান্নায় স্বজনদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। কেউ গেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কখনো কখনো নিঃশব্দ কান্না বুকফাঁটা আর্তনাদ হয়ে বাতাস ভারী করে তোলে। গতকাল শনিবার আহমদপুর ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের নিখোঁজ জেলেদের বাড়িতে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পরে। গত ৬ ও ৭ জুলাই বঙ্গোপসাগরের টেংরার চর ও ঢালচরের শিবচর এলাকায় মনির মাঝি এবং শাহজাহান মাঝির ২টি ট্রলার ডুবিতে এখনো নিখোঁজ ২০ জেলের মধ্যে ১৫ জনের বাড়ি এই ফরিদাবাদ গ্রামে।
৬ জুলাই শনিবার মনপুরা উপজেলার উপকূলে বঙ্গোপসাগরের টেংরার চরে ১৪ জেলেসহ চরফ্যাসনের সামরাজ ঘাটের মনির মাঝির ট্রলার ডুবে যায়। গত বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার কক্সবাজারের সি-গাল পয়েন্ট, হিমছড়ি, সমিতি পাড়া এবং মহেশখালীর হোয়ানক থেকে মনির মাঝির ট্রলারের ৭ জেলের মৃতদেহ এবং ২ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা ৭ জেলের মরদেহ গতকাল শনিবার সকালে চরফ্যাসনের চর নাজিমউদ্দিন, জিন্নাগড় এবং রসূলপুর গ্রামে দাফন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত মনির মাঝির ট্রলারের ৫ জন এবং শাহজাহান মাঝির ট্রলারের ১৫ জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। গত ৭ জুলাই চরফ্যাসনের ঢালচর উপকূলে বঙ্গোপসাগরের শিবচর এলাকায় ১৫ জেলেসহ শাহজাহান মাঝির ট্রলারটি ডুবে যায়। এই ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ফরিদাবাদ গ্রামের শাহজাহান মাঝি(৫২), আব্দুল জলিল (৩৬), মো. হোসেন (৩৫). আব্দুল হাই (৩২), রফিজল ইসলাম (৪২), আফসার জমাদার (৫২), রুবেল (২২), শাহজাহান (৫৩), সুলতান মাঝি (৪৭), জামাল উদ্দিন (৩২), কবির হোসেন (২৫), নাছির উদ্দিন (৪৫), জসিম উদ্দিন (২২) এবং রবিউল (১৬) নাম পরিচয় জানাগেছে।
গতকাল শনিবার সকালে ফরিদাবাদ গ্রামের খাসজমিতে গড়ে তোলা নিখোঁজ আফসার জমাদারের বাড়িতে গেলে স্বজনরা আর্তনাদে ভেঙ্গে পরেন। নিখোঁজ আফসার জমাদারের স্ত্রী আয়েশা জানান, রোববার সকালে দূর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর ট্রলার নিয়ে দূর্ঘটনাস্থল ঢালচরের শিবচর ছুটে যান। উত্তাল সাগরের ঢেউ উপেক্ষা করে এখানে ওখানে ছুটাছুটি করেও কারো কোন খোঁজ পাননি। বিশাল এই দরিয়ার কোথায় গেলে স্বজনকে খুঁজে পাবেন, তাও তাদের জানানেই। তাই হতাশ হয়ে এখন বাড়ি ফিরেছেন। আয়েশা আরো জানান, ক’দিন আগে ছোট মেয়ে শিরিনকে বিয়ে দিয়েছেন। এখনো জামাই আনা হয়নি। নতুন জামাই ঘরে আসবে। মেয়েকে শশুড় বাড়ি তুলে দেয়া হবে। এতো সব স্বপ্ন নিয়ে স্বামী আফসার জমাদার প্রতিবেশী শাহজাহান মাঝির সাথে ভাগে ট্রলার জাল কিনে নদীতে গেছেন। নিষ্ঠুর দরিয়ায় ডুবে আজ সব স্বপ্ন বিলীন হয়েগেছে। অনিশ্চিত হয়ে পরেছে কলেজপড়ুয়া ছেলে মামুনের শিক্ষাজীবন। ফরিদাবাদ গ্রামে জাকির মাঝির বাড়ির দু’জন নিখোঁজ। দরিদ্র পরিবারটি অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকেন। দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচার আশায় এই বাড়ির জাকির হোসেনের দুই ছেলে জামাল ও রুবেল শাহজাহান মাঝির ট্রলারের ভাগী হয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। ওই ট্রলারের ১৫ জেলের মধ্যে দুই ভাইও নিখোঁজ রয়েছে। পরিবারের আয়-রোজগারের জোগান দেয়া দুই ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধ বাব-মা বাকশুন্য হয়ে পরেছেন। আফসার জামাল রুবেলদের মতো ফরিদাবাগ গ্রামের ১৪টি পরিবারে স্বজনহারানোর করুণ কান্না উপকূলের আকাশ-বাসাত ভারী করে তুলেছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমীন জানান, ট্রলার ডুবিতে নিহত প্রত্যেকের দাফনের জন্য ত্রান তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মৎস্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ত্রান তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT