অবৈধভাবে মাছ শিকারে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে আশ্রয় নেয় ভারতীয় জেলেরা অবৈধভাবে মাছ শিকারে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে আশ্রয় নেয় ভারতীয় জেলেরা - ajkerparibartan.com
অবৈধভাবে মাছ শিকারে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে আশ্রয় নেয় ভারতীয় জেলেরা

3:20 pm , July 11, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ কলাপাড়া সংলগ্ন রাবনাবাদ চ্যানেলের মুখে বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে আটক ভারতীয় জেলে ও ট্রলারগুলো অবৈধভাবে বাংলদেশের নৌ সীমায় মাছ শিকার করতে এসেই ঝড়ের কবলে পরে বলে দাবী পাথরঘাটা, কলাপাড়া, আলীপুর, মহীপুর ও গলাচিপা সহ উপকূলের মৎসজীবীদের। আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকার নিয়মিত ঘটনা বলেও অভিযোগ ঐসব মৎসজীবীদের। অথচ গত ২০ মে থেকে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। যা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন কার্যকর থাকবে। কিন্তু এসময়ে বাংলাদেশী মৎসজীবীরা সাগরে না গেলেও ভারতীয় জেলেরা অনেক আধুনিক ট্রলার নিয়ে বাংলাদেশের নৌ সীমায় বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ লুটে নিচ্ছে বলে আগেও অভিযোগ ছিল উপকূলের বিভিন্ন মোকামের মৎসজীবী সহ জেলেদের।  এমনকি আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগেÑপড়ে যে ২২ দিন উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার ইলিশ প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরন বন্ধ থাকার মধ্যেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের নৌ সীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে বলে অভিযোগ ঐসব মৎস্যজীবীদের।
সর্বশেষ গত শণিবার কলাপাড়ার অদুরে রাবনাবাদ চ্যানেলের মুখ থেকে ৫১৬ জন জেলে ও চালক সহ ভারতীয় পতাকাবাহী ৩২টি মাছধরা ট্রলার আটক করে কোস্টগার্ড পায়রা বন্দর এলাকার তাদের ঘাটিতে নিয়ে আসে। কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার ঐসব জেলেদের নাম ঠিকানা নথিভূক্ত করে তাদেরকে কোস্ট গার্ডের তত্ববধানে রেখেছে। গত মঙ্গলবার খুলনার ভারতীয় উপ-দুতাবাসের সরকারী হাই কমিশনার আর কে রায়না সহ সেদেশের কুটনীতিকগন ঐসব জেলেদের খোজখবর নিতে সরেজমিনে কলাপাড়াতে আসেন।
তবে উপকূলের বিভিন্ন মৎস্যপল্লী সহ মোকামের মৎসজীবীগন অভিযোগ করেছেন, যে রাবনাবাদ চ্যানল মোহনা থেকে ভারতীয় ৩২টি ট্রলার আটক করা হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশÑভারত নৌসীমান্ত প্রায় পৌনে ৩শ কিলোমিটার পশ্চিমে। গত শণিবার বঙ্গোপসাগরে বাতাসের যে গতিবেগ ছিল, তাতে ঐসব ট্রলারগুলো কোন ঝড়ের কবলে পরে এত দীর্ঘ সাগরপথ ভেসে আসার কথা নয়। সবগুলো ট্রলারের ইঞ্জিনও সচল ছিল। উপকূলের মৎস্যজীবীদের দাবী, এরা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক এলাকায় বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ শিকার করে আসছিল। কিন্তু দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে দক্ষিণÑপশ্চিমের বাতাস অতিক্রম করে ভারতীয় এলাকায় পৌছতে না পেরে রাবনাবাদ চ্যানেলের মুখে এসে আশ্রয় গ্রহন করে। এমনকি রাবনাবাদ চ্যানেলে পৌছার আগে একটি ভারতীয় ট্রলার সাগরে ডুবেও যায়। যার ৪জন জেলেকে অপর ট্রলারে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। রাবনাবাদ চ্যানেল মুখ থেকে কোস্টগার্ডের জওয়ানরা তাদের আটক করে নিরাপদ হেফাযতে নেয়।
মৎসজীবীদের অভিযোগ, বড় ধরনের ঝড়ের কবলে পরে ইতোপূর্বে দক্ষিন উপকূলের অনেক জেলে বাংলাদেশের নৌ-সীমান্তের ওপারে ভারতীয় এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথেই ভারতীয় কোষ্ট গার্ড তাদের আটক করে নিয়ে গেছে। এখনো দক্ষিণ উপক’লের অনেক জেলে ভারতীয় বিভিন্ন কারাগারে আটক আছে বলে দাবী করে ভারতীয় জেলেদের বিনিময়ে অবিলম্বে তাদের মূক্তি দাবী করেন মৎসজীবীগন।
পাশাপাশি বাংলাদেশÑভারত নৌ সীমান্তে নৌ বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের টহল সহ নজরদারী বৃদ্ধিরও দাবী জানিয়েছেন উপকূলের মৎস্যজীবী সহ বিভিন্ন মোকামের ব্যাবসায়ীগন। নচেত ইলিশ সহ সাগরের মৎস সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষে আশ্বিনের পূর্নিমার আগে পড়ের ২২দিন সহ মে থেকে জুলাই মাসে আরো ৬৫দিন মাছ ধরা বন্ধ রেখে দেশের জেলেদের বেকার করলেও ভারতীয়রা বাংলাদেশে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে আমাদের মাছ লুটে নেবে।
এব্যাপারে বুধবার কালাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, রাবনাবাদ চ্যানেলের মুখ থেকে ভারতীয় মাছধরা ট্রলারগুলোকে আটক করে নিয়ে এসেছে কোস্ট গার্ডের টহল দল। তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে কোস্ট গার্ডের জিম্মাতেই রাখা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের উর্ধতন মহলে জানান হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকারী নির্দেশ পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে ‘এসব মাছধরা ট্রলার বাংলাদেশের নৌ-সীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরছিল’ বলে অভিযোগ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য না করে সব বিষয়ই সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খতিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে বুধবার বিকেলে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাশের সাথে তার সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসন সহ কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে জানান হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে আসলে হয়ত কোস্ট গার্ডের পাহারায়ই ভারতীয় ট্রলার ও জেলেদের বাংলাদেশ নৌ সীমান্তে পৌছে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ভারতীয় জেলেদের ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নৌ সীমান্তে না আসতেও সতর্ক করে দেয়া হতে পারে। ভারতের কারাগারে বাংলাদেশী জেলেদের আটক থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এনিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ভারতীয় দুতাবাসের মাধ্যমে কথা বলছে বলেও তিনি জানান।
তবে কোস্টগার্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে বুধবার সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘সাগরে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে ট্রলার সহ এসব জেলেদেরকে পহাড়া দিয়ে বাংলাদেশÑভারত নৌ সীমান্তে নিয়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি দুই দেশের কোস্ট গার্ড বিষয়টি তদন্ত করবে। কেন এসব ভারতীয় জেলে বাংলাদেশের নৌ সীমান্তের এতটা ভেতরে প্রবেস করল, তাও খতিয়ে দেখা হতে পারে। তবে উপক’লের জেলে ও মৎসজীবীদের অভিযোগ সম্পর্কে কোস্টগার্ডের সদর দপ্তর থেকে কোন মšতব্য করা হয়নি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT