3:04 pm , July 5, 2019
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম-তুমব্রু খাল ঘেঁষা কোনারপাড়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবির। এতে ক্যাম্পের এক হাজার পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। সেখানে সংকট দেখা দিয়েছে, খাবার পানি ও টয়লেটের। এই ক্যাম্পে প্রায় এক হাজার তিনশ’ রোহিঙ্গা পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুর অবস্থান। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, যেকোনও ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, গত বুধবার (৩ জুলাই) থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে । চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ২০১৭ সালে ২৪ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় তারা সেখানে আটকা পড়েন। সম্প্রতি মিয়ানমার কাঁটাতারের একটি ব্রিজ নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানিতে সেখানে সহজে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। নলকূপ, টয়লেটসহ রোহিঙ্গা শিবিরটি পানিতে ডুবে আছে। শূন্যরেখার উত্তর দিকে ছোট একটি খাল প্রবাহিত, যার একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে শূন্যরেখাকে আলাদা করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। শূন্যরেখার বাসিন্দারা জানান, এখানে খাদ্য সহায়তা মিললেও তারা বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেট সংকটে ভুগছেন। এখানে তারা যে ব্লকে থাকছেন সেখানে এক হাজার পরিবারের জন্য মাত্র একটি নলকূপ, আর টয়লেট রয়েছে তিনটি। প্রায় দুই বছর ধরে তুমব্রু শূন্যরেখায় বসবাস করা ওমর সুলতান বলেন, ‘এতোদিন ধরে দু’ দেশের মাঝখানে বন্দি জীবনে বসবাস করে আসছি। কিন্তু এখন এখানে থাকা মুশকিল। কারণ ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পুরো শিবিরটি পানিতে ডুবে আছে। এখানে আর ভালো লাগে না। তিনি বলেন, নিজের দেশে আমরা মানসম্মান নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন অনেক কষ্টের জীবনযাপন করছি। আমরা জন্মভূমিতে ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইনসাফ চাই, জাস্টিস চাই।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘দুই দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবির পানিতে ডুবে গেছে। সেখানকার খোজঁখবর নেওয়া হচ্ছে।’ তবে মিয়ানমার কাঁটাতারের ব্রিজ নির্মাণের কারণে শিবিরের এই অবস্থা বলে জানান রোহিঙ্গা নেতারা। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফরের সময় গত ১০ আগস্ট দেশটির পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় ত্রাণ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিয়ানমার সেখানে অবস্থানরত লোকজনকে দেশটির মানবিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করার প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মেনে নিলেও শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এতে আপত্তি জানায়। এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমার নিঃশর্তভাবে শূন্যরেখায় আটকে থাকা এই রোহিঙ্গাদের উত্তর রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল। বৈঠকের একদিন পরই মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় দৈনিক ‘দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ এ কথা জানায়। সেই উদ্যোগও কার্যকর হয়নি।