ছিঁচকে চোর থেকে নয়ন বন্ড হয়ে উঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিঁচকে চোর থেকে নয়ন বন্ড হয়ে উঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী - ajkerparibartan.com
ছিঁচকে চোর থেকে নয়ন বন্ড হয়ে উঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী

2:44 pm , July 2, 2019

খান রুবেল ॥ বন্দুকযুদ্ধে নিহত বরগুনার কলেজ ছাত্র মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। যিনি এক সময় ছিঁচকে চোর হিসেবেই পরিচিত ছিলো বরগুনা পৌর এলাকায়। চুরির টাকায় মাদক সেবন করে চলছিলো তার জীবন। তবে এক সময় মাদকের অর্থের জোগান দিতে বেছে নেয় ছোট খাট ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা। এ থেকে স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালীদের সাথে চেনা পরিচয় ও তাদের মদদেই হয়ে ছিঁচকে চোর থেকে হয়ে ওঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী। সবশেষ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে গেয়ে মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বরগুনা সন্ত্রাসের জগদের গডফাদার নয়ন বন্ড।
অবশ্য নয়ন বন্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক রাজ্যের গডফাদার হয়ে ওঠার পেছনে তার পরিবারের অবজ্ঞা এবং অবহেলাকেই দায়ি করছেন স্থানীয় কিছু মহল। পিতার ভালোবাসা না পাওয়া এবং মায়ের অনাচার তাকে সন্ত্রাসের রাজ্যে ঠেলে দেয় বলে মনে করছেন তারা।
বরগুনা থানা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন (২৫)। বিগত ১০ বছর ধরেই সে ছোট-খাটো বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে চুরি ও ছিনতাই ছিলো তার মূল পেশা। তবে নয়ন ২০১৫ সালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর নজরে আসে।
এর পর ২০১৭ সালে নয়ন বন্ড মাদক ব্যবসায়ী আবির্ভুত হয়। একই বছরের মার্চ মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা মূল্যের ৪৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১ গ্রাম হেরোইন ও ১২ বোতল ফেন্সিডিল নিয়ে ধারা পড়ে নয়ন বন্ড। সেই থেকে রিফাত শরীফ হত্যার পূর্বে পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজী ও মাদক সহ বিভিন্ন অপরাধে ৮টি মামলা হয়। যার প্রত্যেকটিতেই নয়নকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
এলাকাবাসি সূত্রে জানাগেছে, সাব্বির আহম্মেদ নয়ন পূর্বে থেকে নয়ন বন্ড নামে পরিচিত ছিলো না। ২০১৫ সালে জেম্স বন্ড ছবি দেখে নিজের নামের সাথে বন্ড শব্দটি জুড়ে দিয়ে নয়ন বন্ড বনে যান তিনি। এমনকি ওই চলচিত্র থেকেই এলাকায় আধিপত্ত বিস্তারে ০০৭ নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে নয়ন বন্ড। তার পরিচালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপও রয়েছে। যেখানে নয়ন বন্ড ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা সকল অপকর্মের পরিকল্পনা করে আসছিলো। যেমনটি করা হয় রিফাত শরীফকে হত্যার পূর্বে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নয়ন বন্ডের ছিলো বড় একটি মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট। এলাকায় আধিপত্ত বিস্তাওে গড়ে যা নয়ন বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে বসেই পরিচালনা করতো। এলাকার সকল ধরনের চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী এবং টেন্ডারবাজিতে ভাড়ায় যেত নয়ন বন্ড ও তার গ্রুপের সদস্যরা।
স্থানীয়রা আরো জানান, নয়ন বন্ড এর কোন রাজনৈতিক পদ-পদবি নেই। কিন্তু সে বরগুনা সদর আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পত্র জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলো। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নয়ন অপরাধ জগতে বেড়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাছাড়া নয়ন বন্ডের সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সদস্য বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের ভায়রা ছেলে ছাত্রলীগ নামধারী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। বরগুনা আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই গ্রুপের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে কাউকেই পরোয়া করতো না নয়ন বন্ড।
যদিও সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডকে নিজেদের লোক বলে পরিচয় দিতে নারাজ এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। তারা দু’জন নয়ন বন্ডকে একজন অপরজনের লোক বলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এমনকি সুনাম দেবনাথেরও দাবী নয়ন বন্ডের সাথে তার কোন যোগসাজস নেই।
এদিকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে নয়ন বন্ডের বেড়ে ওঠার পেছনে পুলিশকেও দায়ি করা হচ্ছে। তারা বলছেন, নয়ন একাধিক মামলার আসামী হলেও বীর দর্পে ঘুড়ে বেড়িয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়েছে সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় প্রত্যেকটি মামলা থেকেই জামিন পেয়ে যায় নয়ন। শুধু তাই নয়, এমনকি বরগুনা জেলা ডিবিতে কর্মরত এক উপ-পরিদর্শকের সোর্স হিসেবেও নয়ন বন্ড কাজ করতো বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ আগে থেকেই অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।
যদিও বরগুনা সদর থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন এর দাবী ‘নয়নের বিরুদ্ধে যখনই কোন অপরাধে প্রমান পাওয়া গেছে তাৎক্ষনিক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে। স্ত্রী’র সামনে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে। পরে তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে একই দিন বিকাল সোয়া ৪টায় অপরাশেন টেবিলে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে নয়ন বন্ড তার বাহিনীর সেকেন্ড ইন-কমান্ড রিফাত ফরাজী সহ ১২ জনকে নামধারী আসামী এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত চারজন ও সন্দেহজনক আরো ৪ আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোরে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটায় পুলিশের পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নয়ন বন্ড। সেই সাথে ইতি ঘটে নয়ন বন্ডের মাদক ও সন্ত্রাসের রাজত্বের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT