দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি ফেরি পয়েন্টের ইজারাদারের কাছে জিম্মী যাত্রীরা দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি ফেরি পয়েন্টের ইজারাদারের কাছে জিম্মী যাত্রীরা - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি ফেরি পয়েন্টের ইজারাদারের কাছে জিম্মী যাত্রীরা

3:17 pm , June 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফেরি সার্ভিস এখনো সম্পূর্ণভাবেই ইজারাদারের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের ৬টি জেলায় সড়ক অধিদপ্তরের ১৬টি ফেরি পয়েন্টে ইজারাদারের নিজস্ব নিয়মকানুনই এখনো শেষ কথা। ফলে এ অঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সংযোগ সড়কের ফেরি পয়েন্টগুলোতে জনগনের নিত্য দূর্ভোগ এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। সড়ক বিভাগ থেকে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ইজারাদারগন সড়ক অধিদপ্তর সহ সাধারন মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। আর সব সময়ই ফেরি ঘাটের ইজারাদারগন সরকারী দলেরই লোক হয়ে থাকেন। ফলে এসব ফেরি ঘাটে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আইন অচল হয়ে পড়ায় সচল জীবনের ঝুকিও ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষকরে রাতের বেলা এসব ফেরি পয়েন্টে ফেরি পারাপার হয় ইজারাদারের ইচ্ছের উপর। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কোন দায়িত্বশীল ভূমিকাও লক্ষনীয় নয়।
ফলের রাতের আঁধারে দুর দুরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার যাত্রী দক্ষিণাঞ্চলের ফেরিঘাটগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই অনিশ্চিত প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে। চট্টগ্রামÑবরিশালÑখুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদী ও বরিশাল Ñ পটুয়াখালী Ñ কুয়াকাটা / বরগুনা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর ফেরি পয়েন্ট দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যাত্রীসহ যানবাহনের চালক ও কর্মীরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। বেকুঠিয়ার ফেরিটি প্রতি ঘন্টায় একবার করে যাত্রী পারাপারের নিয়ম তৈরী করে নিয়েছে ইজারাদার। কিন্তু সে নিয়মই তারা এখন মানছে না। আর ঐ ফেরি পয়েন্টে ৩টি ফেরি থাকলেও ১টিতে কোন ইঞ্জিনই নেই। অপর দুটির মধ্যে পর্যায়ক্রমে সচল থাকছে ১টি। ফলে যেকোন কারনে ফেরি পারাপারে নুন্যতম ব্যতয় ঘটলেই এক ঘন্টা অন্তর পারাপারের নিয়মটিও প্রতিপালন হয়না।
উপরন্তু রাত ৮টার পরে বেকুঠিয়া ফেরি পয়েন্টে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করে। এ সময়ের পরে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমতে শুরু করায় ইজারাদার তাদের খেয়াল খুশি মতই ফেরি পারিচালন শুরু করে। পন্টুনে ফেরি মোতায়েন থাকলেও গ্যাংওয়ের মুখে ওয়ার রোপ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ফেরির চালক সহ কর্মীরা কিনারায় অদৃশ্য হয়ে যায়। ফলে যশোর, খুলনা, সাতক্ষিরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও ভোলার দুর দুরান্ত থেকে আসা যানবাহনগুলো নারীÑপুরুষ ও শিশু যাত্রীদের নিয়ে বেকুঠিয়া পয়েন্টের দুপ্রান্তের ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে। অথচ ঐ ফেরি পয়েন্টের উপরই বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৬টি জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল। অভিযোগ রয়েছে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বেকুঠিয়া পয়েন্টে দু ঘন্টা অন্তরও ফেরি পারাপার হচ্ছে না। ফলে অনেক অসুস্থ যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েন বেকুঠিয়া ফেরি পয়েন্টে। প্রায় একই পরিস্থিতি আমতলী ও মির্জাগঞ্জ ফেরি পয়েন্টেও।
দীর্ঘ দিন ধরে এ অব্যবস্থাÑঅনিয়ম অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতিরও লক্ষন নেই। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে পিরোজপুর ও পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদের এসব বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে জনস্বার্থে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক অধিদপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বেশীরভাগ ইজারাদারই ফেরিঘাট ইজারা নেয়ার পরে সরকারী বিধিবিধানের খুব একটা তোয়াক্কা করেন না। এরা ঘাট ইজারা নেয়ার জন্য যেমনি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন, তেমনি খেয়াল খুশি মত ফেরি পরিচালন-এর মাধ্যমে যাত্রীদের জিম্মি করতেও রাজনৈতিক পরিচয় প্রদান করে থাকে। অথচ সরকার জনগনের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এসব ফেরিঘাট তৈরী সহ আরো বিপুল অর্থে ঘাটগুলোতে ফেরি মোতায়েন করে আসছে। উপরন্তু ঘাট ও ফেরি রক্ষনাবেক্ষনেও বিপুল অর্থ ব্যয় করলেও তার প্রকৃত সুফল-এর পরিবর্তে জনগন প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনাই ভোগ করছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT