মুলাদীতে ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের বানিজ্য! মুলাদীতে ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের বানিজ্য! - ajkerparibartan.com
মুলাদীতে ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের বানিজ্য!

3:27 pm , June 26, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মুলাদীতে চারটি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন প্রকার সম্মেলন বা পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই বঞ্ছিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর অর্থের বিনিময়ে এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অনুপ্রবেশকারী অছাত্র এবং ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের। এ নিয়ে ক্ষোভের আগুন জ¦লছে ওই চারটি ইউনিয়নের তৃনমুল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তারা হস্তক্ষেপ কামনা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের।
এদিকে বিতর্কিত কমিটি নিয়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের রোষানল এড়াতে গা ঢাকা দিয়ে আছেন উপজেলার নেতারা। এমনকি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে তাদের মোবাইল নম্বরও। ফলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। কেউ অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে ফোন করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত মঙ্গলবার মুলাদী উপজেলার শফিপুর, নাজিরপুর, চার কালেখা ও গাছুয়া ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে গত ২৪ জুন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়ের আহমেদ জুয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ স্বাক্ষরিত শফিপুর ও নাজিরপুর ইউনিয়নের কমিটি ঘোষনা করা হয়। এ কমিটি প্রকাশ পাওয়ার পর পরই পদবঞ্ছিত নেতা ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
নাজিরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বঞ্চিত নেতারা বলেন, চার বছর পূর্বে এই ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে ইউনিয়নে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ইতিপূর্বে বহুবার সম্মেলন করতে উপজেলা ছাত্রলীগকে তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু তারা সম্মেলনের বিষয়ে কোন সহযোগিতা করেনি। হঠাৎ করেই ২৪ জুন গোপনে ইউনিয়নের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এ কমিটিতে যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তিনি ঢাকায় থাকেন। তাছাড়া নতুন কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তার মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী, অছাত্র এবং মাদকাসক্ত।
অপরদিকে সফিপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ গোপনীয়ভাবে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছে। এই ইউনিয়নে গঠন করা ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির বেশিরভাগ অছাত্র এবং অনুপ্রবেশকারী। বিশেষ করে যাকে আরিফ হোসেন মুন্সি নামে যাকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সে ছিলো ছাত্রদল নেতা। গেলো ঈদেও সে সফিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা হিসেবে নিজের ছবি সহ শুভেচ্ছা ব্যানার টানিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। মাত্র কদিনের ব্যবধানে ছাত্রদলের সেই নেতাকে ছাত্রলীগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান ইমাম বলেন, চারটি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করা হচ্ছে বলে শুনেছি। এরই মধ্যে দুটি কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু এই কমিটির বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত এই কমিটি ঘোষনা করেছে।
তিনি বলেন, সভাপতি ও সম্পাদক সহ ৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি। কিন্তু সভাপতি-সম্পাদক বাদে কমিটির বাকি পাঁচজন উপেক্ষিত। কমিটি গঠনের পরে আজ পর্যন্ত সভাপতি-সম্পাদক আমাদের নিয়ে এক সাথে বসে কোন আলোচনা বা পরামর্শ করেনি। এমনকি যে দুটি কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে সে বিষয়েও ডাকাতো দুরের কথা কোন পরামর্শেরও প্রয়োজন মনে করেনি। মুলত আমরা উপজেলা ছাত্রলীগে আমাদের পদ থাকলেও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।
তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা উপজেলা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা দু’একদিনের মধ্যের বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো। পরে যারা আমাদের অভিভাবক তাদের কাছে যাব। যাতে ইউনিয়ন লীগের অবৈধ কমিটি বাতিল ও ঘোষনার অপেক্ষায় থাকা অপর দুটি ইউনিয়নের কমিটি যাতে না হয় সে জন্য। আমাদের স্বাক্ষর দেয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু নুন্যতম মূল্যায়ন পেতে চাই। কেননা আমাদের কর্মী সমর্থক রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুলাদীর ইউনিয়ন কমিটি গঠনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগও করেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। তাছাড়া অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠু বলেন, দুটি ইউনিয়নে কমিটি গঠন হয়েছে শুনেছি। তবে বিষয়ে আমার বিস্তারিত কিছু জানা নেই। সেরকম করে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তাই খোঁজ নেয়ার চেষ্টাও করিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT