3:25 pm , June 26, 2019
জসীম পারভেজ, কলাপাড়া ॥ দেশের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্যই চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজে যোগ দিয়েছে দক্ষ চায়না শ্রমিকরা। নির্মানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে এক বাঙালী শ্রমিক নিহতের ঘটনায় গুজব ছড়িয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর চায়নার দক্ষ শ্রমিকদের কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিবেশ স্থাপন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় এবং জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি র্যাব পুলিশ এবং বর্ডারগার্ড সদস্যরা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে দক্ষ বাঙালী শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে পটুয়াখালী, কলাপাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নিশ্চিত করেছেন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা। গতকাল বুধবার সাড়ে ১২টায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় কালে প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, বাঙালী ও চায়না শ্রমিকদের মধ্যে ভাষাগত এবং কালচারাল বিষয় সমস্যা রয়েছে। বাঙালী ও চায়না শ্রমিকদের মধ্যে ভাষা ভাব সৃস্টির লক্ষ্যে যথাযথ লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। শুক্রবারে নামাজ, খাবারের সময়ের ছুটিসহ অন্যান্য বাঙালী কালচারাল বিষয়ে চায়না শ্রমিকরা অবহিত বা অভ্যস্ত নয়। সে কারনে শ্রমিকদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি এবং সমস্যা সৃস্টি হয়। শ্রমিকদের ঐক্য সৃস্টিতে কাজ করা হচ্ছে।
গত ১৮ জুন বাঙালী নির্মান শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস (৩২) নিহত হওয়ার বিষয় তিনি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখাগেছে নিহত শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস কাজের সময় নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত সকল সরঞ্জাম পরিহিত ছিলো। কিন্তু কাজের শেষের দিকে সে সেফটি বেল্টের হুক যথাস্থানে ভুলবশতঃ স্থাপন না করায় উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়। এর পর নিহত বাঙ্গালী শ্রমিকের লাশ গুমের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বাঙালী ও চায়না শ্রমিকরা ধাওয়া পাল্ট ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে ১০ বাঙালী এবং ছয় চায়না শ্রমিক আহত হয়। চিনা শ্রমিক ঝাং ইয়াং ফাং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। পরে গভীর রাতে সে মৃত্যুবরণ করে। আহত চায়না ও বাঙালী শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমিকরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে কাজ শুরু করেছেন। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ন শান্ত রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থেকে কম্পিউটার, সার্ভার সরঞ্জাম খোয়াগেছে এবং যানবাহনসহ ভাড়ি যন্ত্রাংশ হাইড্রলিক সিস্টেমসহ অন্যান্য নির্মান যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এগুলো পুনরায় সচল করতে ১৫ দিন সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। কী পরিমানের আর্থিক এবং সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করার কাজ চলছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, চায়না শ্রমিকরা বিসিপিসিএল এর কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকদের যানবাহন এবং ক্যামেরা ভাংচুর করেছে আতঙ্কিত হয়ে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজে নিয়োজিত বাঙালী শ্রমিক অধিকার বঞ্চিত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজ সুষ্ঠু পরিবেশ সৃস্টি করে এ বছরই বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানী লিমিটের (বিসিপিসিএল) নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক নিহতের পর অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান এলাকা পরিদর্শণ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ ম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম এবং চায়না দূতাবাসের দুইজন প্রতিনিধি। সকলের অংশগ্রহনে বাংলাদেশ ও চায়না শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেওয়া হয়। এ সময় প্রতমন্ত্রী দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং মালামাল লুটে নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেন। বাঙালী চায়না শ্রমিকদের মধ্যে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে প্রতিমন্ত্রীকে ঘটনার পরের ১৮ জুন প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন বাঙালী শ্রমিকরা। মতবিনিময় কালে উপস্থিত ছিলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান প্রকল্পের বিসিপিসিএল এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) রেজওয়ান ইকবাল খান, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জোবায়ের আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (তড়িৎ) মো. তারিক নূও, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রীক) ওয়াং শিয়াং শি এবং ম্যানেজার (ফ্যাসিলিটি) মো. শহীদ উল্যাহ ভূইয়া প্রমূক। এছাড়া পটুয়াখালী, কলাপাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।