3:09 pm , June 24, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের এ.ডি.এম (অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) এর লাশ ৯০ দিনের মধ্যে গুমের হুমকি দিয়ে স্থানীয় পত্রিকা অফিসে চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৪ জুন) ডাক যোগে “আল্লাহর হক বান্দাগন” পরিচয়ে দেয়া হুমকি’র চিঠি স্থানীয় আজকের পরিবর্তন পত্রিকা কার্যালয়ে এসে পৌছায়। প্রেরিত ওই চিঠি’র খামে প্রেরক হিসেবে “জনাব আনিসুর রহমান, জজ কোর্ট, বরিশাল। মোবাইল ০১৭১১-৪৭৮৮৬৭” লেখা রয়েছে। আর হুমকি’র চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, আইন মন্ত্রী, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, বরিশাল জেলা প্রশাসক ও কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল নামক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে।
কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠিতে অনুলিপি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল এর নাম সাইন পেন দিয়ে লেখা এবং তার পাশেই নিবেদক হিসেবে লাল কালি দিয়ে ‘পক্ষে কমান্ডার’ লেখা রয়েছে।
তাছাড়া চিঠির ডান পাশে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার একটি গোল সিল ব্যবহার করা হয়েছে। যার নিচে অনুমোদিত লেখা সিল রয়েছে। আর ভেতরে তারিখের ঘরে ‘২০/৬/১৯ লেখা রয়েছে।
দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার সম্পাদক বরাবর এডিএমকে হত্যার হুমকি দিয়ে প্রেরিত চিঠিতে লেখা হয়েছে, “ জনাব, ১৪৫ ধারার মামলা মূলত দখল বিষয়ক মামলা। এই মামলার বেশিরভাগ লোক একে অপরকে হয়রানি করার জন্যই দায়ের করে। তদন্ত প্রতিবেদনে যাহার মালিকানা সঠিক এবং দখল পজিশন আছে সেই পক্ষই কাজের অনুমতি পাইবার হকদার।
কিন্তু এ.ডি.এম রাজিব আহমেদ ঘুষ খাইবার আশায় কোন মামলাই কাজের অর্ডার দিচ্ছে না। অনেকের ঘর ভাঙা অবস্থায় প্রতিপক্ষ মামলা করেছে, কাহারও মাটির কাজ বাকী, কাহারো সীমানা প্রাচীরের কাজ বাকী, কাহারো টিন ছাওয়া বাকী ইত্যাদি।
বাদি বিবাদীর মধ্যে যেই পক্ষের মালিকানা ও দখল পজিশন ঠিক আছে সেই পক্ষকে কেন কাজের অনুমতি দিচ্ছে না এ.ডি.এম রাজিব আহমেদ ? পুট-আপ দিলেও ধার্য্য তারিখ শুনানীর আদেশ দিয়ে রাখে রাজিব। এই হল তার চরিত্র। আইনের চর্চা তাহার মধ্যে নাই।
তাই আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এ.ডি.এম রাজিব আহমেদ এর লাশ গুম হবে। ঝালকাঠীর দুই জন জজের মত মৃত্যু হবে। শব্দ কম হবে এবং লাশ ছাই হয়ে যাবে। শব্দ কম হওয়া এবং লাশ ছাই হওয়া আমাদের নতুন আবিস্কার। ডিজিটাল প্রযুক্তি।”
এ প্রসঙ্গে বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এ.ডি.এম) রাজিব আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমি আমাকে হুমকি’র বিষয়টি শুনেছি। এ ধরনের কোন চিঠি আমি এখনো পাইনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এক মাস হয় বরিশালে এ.ডি.এম হিসেবে যোগদান করেছি। হতে পারে মামলা মোকদ্দমার ক্ষেত্রে কারোর বিচার পছন্দ হয়নি। তাই কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারে। তবুও হুমকির চিঠিতে যেসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা ভয়ের ব্যাপার। তাই এই বিষয়ে থানায় ডায়েরী করার কথা বলেন তিনি।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এডিএম স্যার আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তবে হুমকি দেয়ার পদ্ধতিটা কেমন মনে হচ্ছে। কেননা কেউ হুমকি দিয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে চিঠি বা অন্যকোন উপায়ে হুমকি দিবে। কিন্তু পত্রিকা অফিসে চিঠি পাঠিয়ে অন্য ব্যক্তিকে হুমকি দেয়ার ঘটনা আমি আগে কখনো শুনিনি। তার পরেও বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। এরই মধ্যে হুমকি’র রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু হয়েছে।
বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যমে হুমকি’র বিষয়টি শুনেছি। পরে লেখাগুলোও পড়েছি। হতে পারে কেউ ভয় এবং কাজের বাধা সৃষ্টি করতে এমন কাজ করেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও বিষয়টি দেখছেন।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। ১৪৫ ধারা মুলত জমির মামলা। যা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। হতে পারে জমি বিরোধ নিয়েই কেউ চিঠি দিয়ে হুমকি’র ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ডাকের মাধ্যমে প্রেরিত চিঠি’র কামে প্রেরক হিসেবে যে নম্বরটি (০১৭১১-৪৭৮৮৬৭) লেখা রয়েছে তাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা কেউ রিসিভ করেনি।