সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বৃদ্ধিসহ নতুন নীতি মালায় দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগে ভাটা সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বৃদ্ধিসহ নতুন নীতি মালায় দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগে ভাটা - ajkerparibartan.com
সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বৃদ্ধিসহ নতুন নীতি মালায় দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগে ভাটা

3:28 pm , June 23, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সঞ্চয়পত্রে দ্বিগুন উৎস কর আরোপ সহ নিরুৎসাহিত করার নানামুখি পদক্ষেপে ক্ষুদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারন মানুষ সহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী-আধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎস কর দ্বিগুন করে ১০%-এ উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি গত ১ এপ্রিল থেকে সব বিভাগীয় সদরসহ মহানগরীতে এবং ১জুন থেকে সব জেলা-উপজেলা সদরে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা কার্যকর করায় ক্ষুদ্র ও সাধারন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে কতিপয় ব্যাংক মালিককে সুবিধা দেয়ার জন্যই সরকারী নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে জনগনকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষেই এমন পদক্ষেপ। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক এমপি সহ সব জনপ্রতিনিধিগনও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক এমপি এ পদক্ষেপকে ‘জনবান্ধব নয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
আর সঞ্চপত্রে করহার বৃদ্ধির এ খবরে খুশি দক্ষিণাঞ্চলের বানিজ্যিক ব্যাংক-এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগন। এতদিন যেসব ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছিল, তাদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। এমনকি বরিশালে কোন কোন বানিজ্যিক ব্যাংক ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সাথে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ১১Ñ১২% মুনাফায় ৩ বছর মেয়াদ স্থায়ী বিনিয়াগে আমানত সংগ্রহ শুরু করেছে। কোন কোন ব্যাংক আরো কিছুটা বেশী মুনাফার কথা বলেও গ্রাহকদের স্থায়ী আমানত গ্রহন করছে বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি বাজেট ঘোষনার পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটির টান লেগেছে বলেও জানিয়েছে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল।
বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সব সরকারী-বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো আরো তিন বছর আগে থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে চরম অনিহা প্রকাশ করে আসছে। এক্ষেত্রে সঞ্চয় ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাউন্টারে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ ছিল। গত ১ এপ্রিল থেকে বিভাগীয় সদর সহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক লাখ টাকার উর্ধ্বে যেকোন ধরনের সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়াও ছবি এবং এমআইসিআর চেক যুক্ত ব্যাংক হিসেব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা গত ১জুন থেকে জেলা ও উপজেলা সদর সহ পল্লী এলাকার বিনিয়োগকারীদের জন্যও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মুনাফার অর্থ অনলাইনে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তরের জন্য এ ব্যবস্থার কথা বলা হলেও গ্রামেগঞ্জে বসবাসকারী মানুষের জন্য সরকারী এ নিরাপদ বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে বলে ক্ষুদ্ধ সাধারন মানুষ।
কারন এখনো গ্রামেগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সহ যেসব বানিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে, তার বেশীরভাগই অটোমেশন সহ অনলাইন সুবিধার আওতায় আসেনি। ফলে ঐসব এলাকার ব্যাংকগুলো এমআইসিআর চেক ইস্যু করতে পারছে না। এতে করে ঐসব এলাকার গ্রাহকগন সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে নন এমআইসিআর চেকযুক্ত ব্যাংক হিসেব নম্বর দিলেও তা বাংলাদেশ ব্যাংক সহ সঞ্চয় ব্যুরো গ্রহন করছে না।
এদিকে সঞ্চপত্রের ওপর উৎস কর ৫% থেকে ১০%-এ উন্নীত করার সিদ্ধান্তের ফলে সাধারন মানুষ আরো ক্ষুদ্ধ ও হতাশ। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একলাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতি মাসে একজন নারী যেখানে ৫% উৎস কর বাদে ৯১২ টাকা পাচ্ছেন, সেখানে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পাবেন ৮৬৪ টাকা। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিসনার নির্দেশে মহিলা ও প্রতিবন্ধিদের জন্য পরিবার সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে প্রবর্তন করা তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মুনফার হার ১১.০৪%। ফলে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনমাস অন্তর একজন গ্রাহক ৫% উৎসকর বাদে ২,৬২২ টাকা মুনফা তুলতে পারতেন, এখন সেখানে পাবেন ২,৪৮৪ টাকা।
এমনকি ২০০৪ সালে প্রবর্তন করা সরকারী ও আধা সরকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের জন্য চালু করা ‘পেনশনের সঞ্চয়পত্রে বছরে ১১.৭৬% মুনাফা প্রদান করা হলেও এখন সেখানেও আয় করের খরগ নেমে এসেছে। এ স্কিমে বিনিয়োগ করে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাÑকর্মচারী প্রতি এক লাখ টাকায় তিন মাস অন্তর ২,৭৯৩ টাকা মুনফা তুলতে পারতেন। এখন সেখানে পাবেন ২,৬৪৬ টাকা। অনুরূপভাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারন হিসেব ও মেয়াদী হিসেবের ওপরও ১০% উৎস কর আরোপ করা হচ্ছে। ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের গৃহিনী থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী ও আধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে সাধারন মানুষের ওপর করের নতুন এ খরগ নেমে আসায় ক্ষুদ্ধ ও হতাশ প্রায় সকলেই। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরিশাল অফিসের কাউন্টারে ও সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের বরিশাল অফিসে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে আলাপ করে উৎস কর আরোপের নতুন সিদ্ধান্তে ক্ষোভের কথাই শোনা গেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT