কলাপাড়া পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান কাজ বন্ধ ॥ তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন কলাপাড়া পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান কাজ বন্ধ ॥ তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন - ajkerparibartan.com
কলাপাড়া পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান কাজ বন্ধ ॥ তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন

3:22 pm , June 20, 2019

কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাঙালী নিহত শ্রমিকের লাশ গুমের গুজবে চায়না শ্রমিকদের সংঘর্ষ এক চায়না শ্রমিক নিহতের ঘটনার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে। চায়না সকল শ্রমিক ও কর্মচারি কঠোর নিরাপত্তায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চায়না পল্লীতে নিরাপদে রয়েছে। এঘটনায় পুলিশ,র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যদের ব্যাপক তৎপরতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরের পরিবেশ শান্ত এবং বাইরের পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে সংঘর্ষের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বহিরাগতরা এক শ্রেনীর দুষ্কৃতিকারীরা চায়না শ্রমিক এবং কর্মকর্তাদের ইলেকট্রনিক এবং ভাড়ি যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার খবরে পুলিশ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মালামাল উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করছেন।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলেও বাঙালী ও চায়না শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেনি। তাঁরা অলস সময় কাটাচ্ছে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তখন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজে গতি ফিরে আসবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারের ওপর থেকে সবিন্দ্র দাস নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক নিচে পড়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। সবিন্দ্রর লাশ তাঁর সহকর্মীরা বাংলা ক্যান্টিন এলাকায় নিয়ে গিয়ে পাহারায় রাখেন। সেখানে লাশ গুমের গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্দ বাংলাদেশি শ্রমিকরা বয়লার এলাকার প্রকল্পের একটি অফিসসহ ক্যানটিন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়েল্ডার এবং পাশ্ববর্তী স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে চীনা শ্রমিকদের আবাসিক এলাকায় ঢুকে ভাঙচুর চালান। এ সময় ক্রেন-বুলডোজারসহ কয়েকটি ভারি যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর চীনা শ্রমিকরা এক হয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। থেমে থেমে রাত ১১ টা পর্যন্ত সংঘর্ষ, ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি চলে। দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত চীনা শ্রমিক ঝাং ইয়াং ফাং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার সকল উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে বুধবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে গেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি এসে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন। কর্মকর্তারাও তাঁকে সব বিষয় অবহিত করেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উদ্ভুত পরিস্থিতি কারণে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার এবং তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনটি কমিটিকেই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলাদাভাবে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা সুপারভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে গুরুতর জখম হওয়া চীনা শ্রমিক লিন কু মু, ঝ্যাং হুয়া, ঝ্যাং সিং থান, ঝাং হু এবং জু ঝাংকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। রডের আঘাতে এঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছে। এঁদের হাত-পা লোহার আঘাতে ভেঙ্গে গেছে। বৃহস্পতিবার এ ছয় জনের শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়েছে।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় র‌্যাব, আর্মড পুলিশ এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। এক কথায় বলা যায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।’
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর (বিসিপিসিএল) প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা বলেন, ‘কম্পিউটার বেইজড সার্ভার, ডিভাইসসহ অনেক মালামাল দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে গেছে। পুরো এলাকা জুড়ে সব মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। বহু জায়গায় বহু জিনিস ছিল। সে সবেরও ক্ষতি হয়েছে। কী ধরণের মালামাল খোয়া গেছে, তার হিসাব-নিকাশ চলছে। কেন এ ঘটনা ঘটল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
উদ্ধার অভিযানে থাকায় কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তানে না পাওয়া গেলেও বিসিপিসিএল এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহমনি জিকো জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চুরি বা হারিয়ে যাওয়া সকল মালামাল উদ্ধারের জন্য বুধবার থেকেই পুলিশ মালামাল এবং যন্ত্রাংশ উদ্ধার অভিযান অব্যহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT