3:18 pm , June 20, 2019
সাঈদ পান্থ ॥ নগরীর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদী দখল করে খুঁটি গেড়ে বসেছে ২ শতাধিক দখলদার। অদৃশ্য কারণে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী এসব ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন। এমনকি তারা উচ্চ আদালতের রায়ও উপেক্ষা করছেন। যার ফলে দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই কীতর্নখোলা নদী। বিআইডব্লিউটিএ’র নদী তীরের ২৮ একর সম্পত্তির ২০ একরই বেদখলে রয়েছে। যদিও ২০১৭ সালে অভিযান শুরু করেছিল সংশ্লিষ্টরা। তবে তাও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে ধোয়াশার মধ্যে রয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে বরিশাল নদী বন্দর ঘোষণা হলে কীর্তনখোলা নদীর স্বাভাবিক ও পূর্ন জোয়ারের পানি উচ্চ জল রেখা থেকে ভূমির দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআইডবি¬উটিএকে দেয়া হয়। নদীর উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণে রূপাতলী সিএসডি গোডাউন পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এলাকার ফোরশোর জমি গেজেট মোতাবেক জেলা প্রশাসন বিআইডবি¬উটিএ অনুকুলে দীর্ঘ মেয়াদী হস্তান্তর করে। তবে এ জমি পিলার বা সিমানা প্রাচীর দ্বারা বুঝিয়ে না দেয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নেতাকর্মীরা সেসব জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ঘর স্থাপণ করে। সর্বশেষ গত ২০১৪ সালের নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে বিআইডবি¬উটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের জমিতে কত দখলদার আছে তা দেখার জন্য একটি জরিপ কার্য চালায়। তাতে দেখা যায় ৩০৬ জন দখলদার নানা ভাবে দখল করে রেখেছে এ নদীর তীর। যারা দখলে রেখেছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এর পর উচ্চ আদালত ২২০ জন দখলদারকে উচ্ছেদ করার জন্য নির্দেশনা দেয় বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসককে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই উচ্ছেদ কার্য চালানো যায়নি।
বরিশাল নদী খাল বাচাঁও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘নদীর ওপাড়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কীর্তনখোলা নদী ক্রমশ শহরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আর এ কারণে নদীর তীর ঘিরে গড়ে উঠছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার ফলে একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদী দুষণ, অপরদিকে দখল। এ দখল ও দুষণ রোধে এখনই আইনগত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে জেলা প্রশাসন ও নদী শাসনের দায়িত্বে থাকা দপ্তরগুলোকে। পরিবেশ অধিদপ্তরও নদী দখলের রোধে কোন দায়িত্ব পালন করছে না। পদ্মাসেতু হলে এ প্রভাবে অনেক হারে বাড়বে বলে তিনি জানান।’ বিআইডব্লিউটিএ’র নকশাবিদ মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘রসুলপুর এলাকার ৮ একরের বেশি সম্পত্তি সবটুকুই বেদখলে রয়েছে। এছাড়া জেলখাল থেকে পক্সওয়ার্ড পর্যন্ত ২৮ একরের বেশি সম্পত্তির মধ্যে ৮ একরও তাদের দখলে নেই।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল এর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র জমি রক্ষানাবেক্ষণ করার জন্য শুধু মাত্র এই বিভাগ থেকে লজেষ্টিক সার্পোট প্রদান করে থাকি। বিশেষ করে সার্ভেয়ার ও প্রকৌশলী সার্পোট দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে বন্দর বিভাগ ভাল বলতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৩৮টি সীমানা পিলার স্থাপন করেছিলাম। তবে তা ছিল অস্থায়ী ভিত্তিতে। যার কারণে দখলদাররা সেই পিলার তুলে ফেলেছে। এমনকি লাল রং দিয়ে যে চিহ্নিত করা হয়েছিল তাও উঠিয়ে ফেলেছে। পিলার লাগানোর পরই আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান চালাই।
বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপ পরিচালক মো. আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ‘আমরা স্থায়ীভাবে যৈাথ উদ্যোগে সীমানা পিলার স্থাপন করব। পর্যায়ক্রমে আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব। সরকারি সম্পত্তি কেউ দখল করে রাখতে পারবে না। এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক ভারপ্রাপ্ত মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী উচ্ছেদের জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।