3:10 pm , June 18, 2019
সাঈদ পান্থ ॥ বাজেট ঘোষনার পর থেকেই বরিশালে নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজেট কার্যকর হওয়ার আগেই নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গুড়া দুধ কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে গুড়া দুধের বস্তা (২৫ কেজি) এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়। তবে চিনির দাম না বাড়লেও বাজেট ঘোষণার পর থেকে চিনির সরবরাহ সংকটের কথা বলে বেচাকেনা স্থবির অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরীর বাজার রোডের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তবে বাড়তির দিকে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন এবং আদার দাম। তবে সবজি এবং মাছ-মাংসের দামের ক্ষেত্রে বাজেট ঘোষণার কোনো প্রভাব পড়েনি।
বাজার রোডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিনির দাম বাজেটের পরেও অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনি এখনো পাইকারি পর্যায়ে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও গত বৃহস্পতিবার বাজেটের দিন চিনির সরবরাহ সংকট রয়েছে বলে বেচাকেনা হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী অপেক্ষায় ছিলেন বাজেটে কি ঘোষণা হয় সেটি জানার জন্য। কারণ এই বাজেটের উপর নির্ভর করে বাড়তে বা কমতে পারে। একইভাবে সয়াবিন তেল এবং পাম তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দর বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সয়াবিন কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৭৩ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়। অপরদিকে পেঁয়াজ, রসূন এবং আদার দামও বেড়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি, রসূন ১২০ টাকা এবং আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা এবং আদা-রসূনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে।
জানতে চাইলে বরিশাল চেম্বার অব কর্মাস ইন্ড্রাস্ট্রিজ সভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু দৈনিক পরিবর্তনকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজেটের পর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই বাজেটে নতুন করে কোন কর আরোপ করা হয়নি। এরা অধিক লাভের আশায় এমনটা করছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। মুলত এখনো বাজাট কার্যকর করা হয়নি।
নগরীর পিয়াজ পট্টির এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছেন, বাজেট পরবর্তী পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু আমাদেরই কিনতে হয় অধিক দামে। যার কারণে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পরছে। তবে গতকাল নগরীর কাচাঁবাজার পাইকারী সিটি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে সবজির বাজার। বর্তমানে পটল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০ টাকা। এছাড়া টমেটো ৪০ টাকা, কাকরল ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, তিতাকরলা ৫০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঢেড়শ ৩০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, কচুর চড়া ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ২০ টাকা ও ৪০ টাকা দরে। মিষ্টি কুমড়া কাঁচা ৪০ টাকা ও পাকা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি শিং মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়, কই ৪৫০-৫০০ টাকায়, মাগুর ৭০০-৮০০ টাকা, শৈল ৩০০-৪০০ টাকা, কাতাল ৩০০-৩২০ টাকা, রুই ২৫০-৩০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৭০০-৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-১৮০ টাকা, পাঙ্গাস ১৫০-২০০ টাকা, লইট্টা ১২০-১৮০ টাকা, কই ৩৮০-৪২০ টাকা, কেচকি ২০০-২৫০ টাকা, বাটা মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা, ইলিশ আকারভেদে ৭০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা এবং সোনালী বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস হাঁড়সহ ৫৫০ টাকা এবং হাড়ছাড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। এছাড়া খাসীর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে।
এব্যাপারে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ কুমার দত্ত জানান, ‘বাজেট ঘোষনার আগ থেকে কতিপয় ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় কৃত্তিম সংকটের সৃষ্টি করে বাজার অয়েস্থিতিশীল করে তুলছে। যথাযথ বাজার মনিটরিং এর অভাবে ব্যবসায়ীরা যে যার মত মুনাফ নিচ্ছে।’