3:12 pm , June 16, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ টানা ২৪ ঘন্টা পরে ঝালকাঠি’র ৮ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু করেছে। রোববার সকাল থেকে স্থানীয় মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বাস চালাচল শুরু হয়। তবে শ্রমিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারনে দ্বিতীয় দিনের মত বরিশাল কোন বাস ঝালকাঠি সড়কে প্রবেশ বা ঝালকাঠি’র কোন বাস বরিশালে প্রবেশ করছে না।ঝালকাঠি থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দুই কিলোমিটার দুরে রায়াপুরের অস্থায়ী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। তেমনি বরিশাল রূপাতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো রায়াপুর পর্যন্ত গিয়ে যাত্রী নামিয়ে ফিরে আসছে।
এর ফলে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কের মধ্যবর্তি দুই কিলোমিটার সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অটোরিক্সা, অটো টেম্পু (মাহেন্দ্রা) সহ অন্যান্য গণ পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে দুই কিলোমিটারের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে তাদেরকে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
এদিকে দুই জেলার শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সমিতির চাঁদাবাজীর বিষয়টি নিয়ে ঝালকাঠিতে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ঝালকাঠি আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক হলেও কোন পক্ষই সমঝোতায় পৌছতে পারেনি। বরং ঝালকাঠি রুটে বাস চলাচল করতে না দিলে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ঝালকাঠি আন্তঃজেলা মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী জানান, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে রোববার (১৬ জুন) সকাল থেকে ঝালকাঠি’র অভ্যন্তরিন ৮টি রুটে বাস চলাচল শুরু করেছেন। তবে শ্রমিককে মারধরের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঝালকাঠির বাস বরিশালে প্রবেশ এবং বরিশাল বাস ঝালকাঠিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত শ্রমিককে মারধরের ঘটনার সমাধান না হবে ততদিন পর্যন্ত বরিশাল নগরীর বর্ডার এলাকা কালিজিরা ব্রিজ সংলগ্ন রায়াপুর বাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠি রুটে বাস চলাচল করবে। তাছাড়া পিরোজপুরের শ্রমিকদের সাথে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো তা সমাধান হয়েছে। তাই সোমবার (১৭ জুন) সকাল থেকে ঝালকাঠি-পিরোজপুর রুটে বাস চলাচল শুরু হবে। তবে দ্বন্দ্বের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বরিশালের বাস ঝালকাঠি সড়কে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম টিটু বলেন, দুপুরে ঝালকাঠি-বরিশাল ও পিরোজপুর সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঝালকাঠি সমিতি আমাদের কাছে কয়েকটি দাবী তুলেছে। যা মেনে নেয়ার বিষয়ে আশ^স্থ করেছে মালিক সমিতি। এ নিয়ে রাতে পুনরায় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে জানা যাবে।
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ঝালকাঠি সমিতির লোকেরা তাদের নিজ ইচ্ছাতেই অনর্থকভাবে রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে তাদের বাস সরিয়ে রায়াপুরে নিয়ে রেখেছে। সেখান থেকেই তারা বাস চলাচল করছে। কিন্তু আমাদের বাসগুলো তাদের সড়ক হয়ে পিরোজপুর বা খুলনা সহ কোন রুটেই চলাচল করতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। কিন্তু কোন প্রকার সমাধাণে পৌছানো সম্ভব হয়নি। তাই প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সমাধান দিতে না পারলে বরিশাল থেকে বৃহত্তর ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে। প্রয়োজনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন বরিশাল বাস মালিক সমিতির এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ঈদের আগে বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি রূপাতলী বাস টার্মিনালে চাঁদার পরিমান কয়েক গুন বাড়িয়ে ফেলে। যা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে ঝালকাঠি আন্তঃজেলা বাসের চালক ও শ্রমিকরা।
এর ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৫ জুন) সকালে জালকাঠির বাস চালক মিলনে বেধম মারধর করে বরিশালের শ্রমিকরা। তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবীতে ঝালকাঠির বাস শ্রমিকরা তাদের অভ্যন্তরিন ৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।