মাদকসেবীর সাথে সাথে বাড়ছে বিকৃত অপরাধ! মাদকসেবীর সাথে সাথে বাড়ছে বিকৃত অপরাধ! - ajkerparibartan.com
মাদকসেবীর সাথে সাথে বাড়ছে বিকৃত অপরাধ!

3:07 pm , June 14, 2019

মর্তুজা জুয়েল ॥ মাদকের সরবরাহের গতি নিয়ন্ত্রন না হওয়ার পাশাপাশি মাদকের সহজলভ্যতা এবং  হাতের  নাগালে থাকায় বরিশালে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর যারা সেবন করছে তারাই খুচরা বিক্রেতা হিসেবে কাজ করায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বিক্রেতাদের সংখ্যাও। এ কারণে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মাদক সেবী ও খুচরা বিক্রেতা ধরা পড়লেও ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে মূল পাইকার ও গডফাদাররা। যার ফলে কমছে না মাদকের ব্যবহার। পাশাপশি মাদকাসক্তদের বিকৃত মস্তিষ্কের কর্মকান্ডে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষন, অগ্নিকান্ডে পুড়িয়ে নিজের স্ত্রী হত্যা, তুচ্ছ ঘটনায় নির্মম ও পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, শিশু নির্যাতনসহ পাশাবিক /অমানবিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে গডফাদারদের চিহ্নিত করে আটক করার দাবি জানিয়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পূর্বে দিন রাত সব সময়ই নগরীর বিভিন্ন ফ্ল্যাট, বাড়ি, মেস, ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে অলি গলিতে   মাদক  সেবনের আড্ডা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেও একই কক্ষে তিন চার গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চলে ইয়াবা, ইঞ্জেকশনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবন। একজন সেবনকারী এক বৈঠকে ৪ থেকে ৫ টি পর্যন্ত ইয়াবা সেবন করে। সেবনকারীদের ব্যবহারের বয়স যত বাড়ে মাদক ব্যাবহারের পরিমানও বাড়তে থাকে। এখন নগরী থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত বিস্তার হয়েছে ইয়াবা ও ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা মাদক। এ সকল মাদকে আসক্তরা জানান, মাদক ব্যবহার না করা হলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক যন্ত্রনা তৈরী হয়।  একপর্যায়ে মাদক সেবনে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তখন মাদক সেবিরাই প্রয়োজনে বিক্রেতা ও সরবরাহকারীতে রুপান্তর হচ্ছে। এতে করে দ্রুত সর্বত্র মাদকের বিস্তার ঘটছে। বর্তমানে ফেন্সিডিলের উচ্চমূল্য হওয়ায় ইয়াবার বৃহৎ বাজার তৈরী হয়েছে যা পৌছেছে গ্রামেও । ইয়াবার মূল্য সহজলভ্য হওয়ায় স্কুল-কলেজগামীরা এ মাদকে আসক্ত হচ্ছে এবং অল্প সময়েই নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলছে।
নগরীর একাধিক সচেতন  বাসিন্দা জানান, মাদকের আসক্তির কারনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্তিতির অবনতি ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে লোমহর্ষক বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক ধর্ষন, হত্যার আসামিরা ঘটনা ঘটানোর পূর্বে ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদক গ্রহনের কথা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন অপরাধীদের প্রতিবেশী,পরিবারের সদস্যসহ  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, স্পর্শকাতর ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা শিক্ষত, ভালো চরিত্রের হলেও মাদকের প্রভাবে খুবই অল্প সময়ে তারা নেতিবাচক আচরনে অভ্যস্ত হয়েছেন। যার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে তারা মাদকের প্রভাবকে দায়ী করেছেন।
নগরীতে বিভিন্ন সময়ে ইয়াবা, ফেন্সিডিল সহ বিক্রেতা ও সরবরাহকারীদের আটক করা হলেও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে মূল হোতারা। মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে খুচরা বিক্রেতাদের আটকের পাশাপাশি মাদকের  গডফাদারদেরও আটক করার দাবী জানান নগরীর বাসিন্দারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এ এ এম হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে তাদের জনবল সংকট রয়েছে। যানবাহন রয়েছে মাত্র ১ টি। এছাড়া পুরো বিভাগে রয়েছে ১৫ জন জনবল। সাম্প্রতি দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানের সময়ে পুলিশের সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছিলেন, নগরীতে ২৬৭ জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু এ তথ্য প্রদানের প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও ঐ তালিকাভূক্ত কোন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে এমন কোন তথ্য পুলিশ বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়নি।
মানসিক রোগ বিষেশজ্ঞ একাধিক চিকিৎসক জানান, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিদ্যমান মাদক গ্রহন করার অল্প সময়েই একজন মাদকাসক্ত তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। তখন তার বিকৃত ও অসুস্থ মস্তিষ্ক বেপেরোয়া কর্মকান্ড করতে থাকে । ইয়াবায় ব্যবহৃত উত্তেজন রাসায়নিক এ্যমফেটামিননের প্রভাব খুবই ভয়াবহ বলে জানান তারা।
বর্তমানে নগরীর বিসিক, কাউনিয়া ,টিয়াখালী, রুপাতলী, নবগ্রাম রোড, থানা কাউন্সিল, পোর্ট রোড, ভাটিখানাসহ শহরতলীতে অসংখ্য স্পটে ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। নগরী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেশী থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা পর্যয়ে বিভিন্ন মাদকের বৃহৎ স্পট তৈরী হয়েছে। সাম্প্রতি বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাদক বিরোধী সমাবেশ করে জনসচেতনতা তৈরীর চেষ্টা করেন। বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী তার আহবানে সারা দিয়ে আত্মসমর্পন করে। বর্তমানে  বহুল চাহিদাযুক্ত মাদক ফেন্সিডিল সরবরাহ অনেকটা কমে আসলেও গতি কমেনি ইয়াবা সরবরাহের। খোদ একাধিক মাদক বিক্রেতা বলেছেন, বৃহৎ মাদক কারবারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় থেমে নেই সরবরাহ। তাদের মাধ্যমে নতুন করে তৈরী হচ্ছে সেবনকারী ও সরবরাহকারী।
গত এক বছরে আইনশৃংখলা বাহিনী ২৬ হাজার পিস ইয়াবা, ২ হাজার ৪৮০ পিস ফেন্সিডিল, ৯৪ কেজি গাজা, সহ¯্রাধিক পিস মরফিন ইনজেকশন এবং বিদেশী মদ, স্পিরিট ও বিয়ারসহ ৯২৩ জনকে আটক করে। এদের বিরুদ্ধে ৮০১টি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে আদালতে ২ হাজার ৬শ’ মাদকের মামলা চলমান রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT