3:00 pm , June 12, 2019
মর্তুজা জুয়েল ॥ ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফিরতে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা রুটের প্রতিটি লঞ্চে। ধারন ক্ষমতার দ্বিগুন-তিনগুন বেশী যাত্রী নিয়ে প্রতিদিন লঞ্চ নৌ বন্দর ছেড়ে গেলেও নিরব বিআইডব্লিইটিএ কতৃপক্ষ। এমনকি দপ্তরটির নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই লঞ্চে কয়েকগুন যাত্রী পরিপূর্ন করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নৌযান মালিকদের নিকট থেকে বন্দর কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে এ ধরনের ঝুকি নিয়ে লঞ্চ চলাচলের বৈধতা দিচ্ছেন । গতকাল বিকেলে সরেজমিনে বরিশাল নদী বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে বরিশাল-ঢাকা রুটের ১১ টি লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে । এরমধ্যে এমভি কীর্তনখোলা -১০ লঞ্চে সর্বাধিক ১৫‘শ ৫০ জন যাত্রী ধারন ক্ষমতা রয়েছে। এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে ১৩’শ ৫০,এমভি টিপু-৭ লঞ্চে ১২’শ ৮০, এমভি পারাবাত-১১ লঞ্চে ১ হাজার ২৫, এমভি ফারহান-৮ লঞ্চে ৬৩৯, এমভি সুন্দরবন-৭ লঞ্চে ৭০৯ জন, এমভি সুরভী-৮ লঞ্চে ৮৯০ জন, এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চে ১৩’শ ৫০ জন, এমভি পারাবাত-৯ লঞ্চে ৯৯০ জন যাত্রী ধারন ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও এ রুটে নিয়মিত চলাচলকারী এমভি সুরভী-৭ এর ধারন ক্ষমতা ১২শ’ ৫জন, পারাবত-৭ এর ৭৫০ জন, পারাবত-২ এর ১ হাজার ৫ জন, কালাম খানে ৯শ, কামাল- ১ লঞ্চে ৭১৫ জন এবং কীর্তনখোলা-২ লঞ্চে ১১শ ৩০জন যাত্রীর ধারন ক্ষমতা রয়েছে ।
এ সকল নৌযানে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা নির্ধারন করা থাকলেও কোন লঞ্চেই ঈদ মৌসুমে আসা যাওয়ার সময়ে ৩ হাজারের কম যাত্রী পরিবহন করা হয়না। বিশেষ করে স্পেশাল ট্রিপের লঞ্চগুলোতে এক প্রকার তীল ধারনের ঠাই না হওয়া পর্যন্ত যাত্রী উত্তোলন করা হয়। এ সময়ে দেখা যায় লঞ্চের ছাদ থেকে কেন্টিনের মধ্যেও যাত্রী পরিবহন করা হয়। লঞ্চগুলো ওভার লোড হয়ে স্বাভাবিকের তুলনায় ১/২ ফুট বেশী ডুবে যায়। এমন অবস্থায় হাজার হাজার যাত্রীর তীব্র জীবনের ঝুকি নিয়ে লঞ্চগুলো চলাচল করে।
নৌযানে কর্মরত একাধিক মাষ্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঈদের সময়ে বাড়তি যাত্রী চাহিদা থাকার কারনে বেশী যাত্রী পরিবহন করা হয়। তবে কোন কোন সময়ে তা ঝুকিপূর্ন পর্যায়ে চলে যায়। বেশী যাত্রী পরিবহন হলেও এ সকল নৌ-যানে নিয়ম অনুযায়ী যাত্রীদের জীবন রক্ষার সরঞ্জামাদি নেই। এমভি পারাবাত-১১ লঞ্চের যাত্রী ধারণের ক্ষমতা ১ হাজার ২৫ জন। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী লঞ্চটিতে লাইফ বয়া থাকার কথা ২৫৩টি, আছে ১১৬টি। ২২টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে মাত্র ১২টি থাকলেও তার মধ্যে তিনটি বিকল। এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮৯০ জন। লাইফ বয়া দুইশটির পরির্বতে আছে ১০৫টি। ফায়ার বাকেট ১৮টির মধ্যে তিনটি বিকল। এ লঞ্চের কোথাও বালুভর্তি বাক্সের দেখা মেলেনি। সুন্দরবন-৭ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৯৯০ জন। বয়া আছে ১৫৩টি। একই অবস্থা অন্য লঞ্চগুলোরও। প্রতি যাত্রীর জন্য একটি করে লাইফ জ্যাকেট থাকার বিধান থাকলেও ২/৩টি লঞ্চে সামান্য কিছু থাকলেও অন্যসব লঞ্চে একটি লাইফ জ্যাকেটেরও খোঁজ মেলেনি। প্রতি চার যাত্রীর জন্য একটি করে বয়া থাকার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা নেই। এছাড়া কোন লঞ্চেই প্রয়োজনীয় ষ্টিংগুইসার/অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র/ফায়ার বাকেট, পাম্প, ফাষ্ট এইড বক্স, বালির বাক্স নেই। এমন অবস্থায় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি না থাকলেও লঞ্চগুলো ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ-তিনগুণ যাত্রী পরিবহন করে থাকে। দক্ষ-মাস্টার সুকানির পরিবর্তে লস্কর দিয়ে মাঝে মধ্যে লঞ্চ চলাচলকরার অভিযোগ রয়েছে। ভরা বর্ষায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এ সব লঞ্চ চলাচল করলেও কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ হয়ে নির্বিকার। নৌ বন্দরে ঢাকাগামী যাত্রী মনির আকন,বাবলু মিয়াসহ অন্যান্য যাত্রীরা অভিযোগ করেন কর্মস্থলে যাওয়ার প্রয়োজনে তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে পরিবহর করেন । তবে লঞ্চ মালিকরা এ সময়ে দ্বিগুন ভারা রাখলেও কোন ধরনের নিরাপত্তার ব্যাবস্থ্যা রাখে না। কোন ধরনের দূর্ঘটনা ,সংঘর্ষ কিংবা প্রাকৃতিক দূর্য়োগের কবলে পরলে বিপুল প্রনহানি,হতাহতসহ অপূরনীয় ক্ষতি শংকা রয়েছে বলে মনে কওেরন যাত্রীরা। এ সকল বিষয়ে একাধিক লঞ্চ মালিক দাবী করেন ,লঞ্চের যাত্রী ধারন ক্ষমতা কম হলেও লঞ্চে পন্য পরিবহনের ব্যাবস্থা থাকে । কিন্তু ইদের সময়ে স্পেশাল ট্রিপে কোন পন্য পরিবহন করা হয়না। ফলে বেশী যাত্রী পরিবহর করা হলেও কোন ঝুকি নেই। এ সকল বিষয়ে বরিশাল নৌ বন্দরের উপ-পরিচালক আজমাল হুদা মিঠু সরকার বলেন, আমরা ঝুকি নিয়ে কোন লঞ্চকে নৌ বন্দর ত্যাগ করতে দেয়া হয় না। বর্তমানে লঞ্চগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্র থাকায় দূর্ঘটনার আশংকা নেই। যাত্রীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারে বলে দাবী করেন তিনি।