3:04 pm , June 9, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদের পঞ্চম দিনে বরিশাল নৌ বন্দরে রাজধানীমুখি যাত্রীদের ভীর দ্বিগুন বেড়েছে। ঈদের গত চার দিনে যে যাত্রী হয়নি তার থেকে অনেক বেশি যাত্রীর সমাগম ঘটেছে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার লঞ্চ গুলোতে যাত্রী ভিরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
এদিকে যাত্রী বাড়লেও বাড়েনি লঞ্চের সংখ্যা। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে সরাসরি ২৩টি বিলাসবহুল লঞ্চ থাকার পরেও রোববার ১৭টি যাত্রীবাহী নৌ-যান বিশেষ সার্ভিস দেয়া হচ্ছে। যা শনিবারের তুলনায় কম। ওই দিন বরিশাল থেকে ১৮টি নৌ যান যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। যার মধ্যে তিনটি দিবা সার্ভিসের ওয়াটার বাস। পর্যাপ্ত লঞ্চ না থাকায় অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠছেন রাজধানী মুখি যাত্রীরা। ফলে লঞ্চের ডেক থেকে শুরু করে কেবিনের বারান্দাও যাত্রীদের ভীর। যদিও লঞ্চ মালিকদের দাবী যে যাত্রী রয়েছে তা রাত্রিকালিন ১৪টি লঞ্চেই বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌছে দেয়া যাবে। আর বন্দর কর্মকর্তা বলছেন অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কোন সুযোগ নেই। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে লোড লাইন দেখে লঞ্চ ঘাট থেকে ছাড়ানো হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. কবির হোসেন বলেন, গত ৬ জুন থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে ঈদ ফেরত যাত্রীদের বরিশাল থেকে যাত্রা শুরু হয়। গত কদিন ধরে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো ছিলো না। থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে নদী বন্দরে যাত্রীদের চাপ তুলনামুলক ছিলো না।
তিনি বলেন, ঈদের পঞ্চম দিনে আবহাওয়া পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক ভালো। নদী বন্দরে এখন পর্যন্ত কোন সিগনাল নেই। তাই রোববার যাত্রীদের চাপা বেড়েছে। সকাল থেকেই যাত্রীরা রাজধানীর উদ্দেশ্যে বরিশাল নৌ বন্দরে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নৌ বন্দর যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়। তাছাড়া সন্ধ্যা হতেই নদী বন্দরে লঞ্চ ও পন্টুনে যাত্রীদের কারনে তিল ধরানোর ঠাই ছিলো না।
সরেজমিনে দেখাগেছে, রোববার রাত্রিকালিন সার্ভিসের ১৪টি লঞ্চে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি লঞ্চ বার্দিং করা বিআইডব্লিউটিএ’র জেটিতে। বাকি ৪টি লঞ্চ জেটির অভাবে অন্য লঞ্চগুলোর পেছনে নোঙর করেছে। লঞ্চগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা উঠছে।
অবশ্য এর আগে বিকাল পৌনে ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে গ্রীন লাইন কোম্পানির দুটি এবং নিজাম শিপিং লাইন্স এর মোট ৩টি ওয়াটারবাস বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঝালকাঠি, বরগুনা সহ বিভিন্ন রুটের আরো ৬টি লঞ্চ বরিশাল ভায়া হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
লঞ্চ যাত্রীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ভির বেশি। কিন্তু কোন সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই নদী বন্দরে পর্যাপ্ত জেটি না থাকা এবং ভ্রাম্যমান হকার। এদের কারনে স্বাভাবিক যাত্রা ব্যহত হচ্ছে। তাদের দাবী বরিশাল ঢাকা নৌ রুটে পর্যন্ত লঞ্চের ব্যবস্থা থাকতেও সিন্ডিকেট করে মাত্র ১৪টি লঞ্চ ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। তাই সবাই ওই লঞ্চগুলোতেই গো-গাদাগাদি করে উঠছে। এজন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নিমে এমন প্রশ্ন যাত্রীদের।
যাত্রীবাহী নৌ-যান চলাচল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, গত ক’দিন ধরেই যাত্রীদের চাপ কম ছিলো। কিন্তু তার পরেও অতিরিক্ত লঞ্চ চলেছে। তাই মালিকদের লোকশান গুনতে হয়েছে। এ কারনেই রোববার লঞ্চের একটু কম মনে হচ্ছে। তবে যে যাত্রী রয়েছে তা ওই লঞ্চগুলোতে করেই পৌছে দেয়া যাবে।
বরিশাল নৌ-বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, পূর্বের থেকে যাত্রী একটু বেশি এটা সত্যি। কিন্তু আমরা কোন লঞ্চই ওভার লোড হয়ে ছাড়তে দিচ্ছি না। লঞ্চ ছাড়ার আগে চেক করে নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে লোড লাইন দেখে নিচ্ছি। এজন্য জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী কর্মকর্তাও লঞ্চ ছাড়ার পূর্বে পর্যন্ত ঘাটে অবস্থান করছেন।
এদিকে যাত্রীদের চাপ বাড়ার সাথে সাথে নৌ বন্দরের ভেতরে এবং বাইরে নজিরবিহন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাব-৮, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিবি, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন বলে জানিয়েছেন সদর নৌ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, যেসব যাত্রী লঞ্চে উঠতে পারবে না তাদের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা রয়েছে। তারা অস্থায়ী এবং স্থায়ী ছাউনিতে রাত কাটাতে পারবে। সকালে আবার যে লঞ্চগুলো বরিশালে পৌছাবে সেগুলোতে করে বরিশালের যাত্রীদের ঢাকায় পাঠানো হবে।