কর্মে ফেরার যুদ্ধ শুরু কর্মে ফেরার যুদ্ধ শুরু - ajkerparibartan.com
কর্মে ফেরার যুদ্ধ শুরু

3:07 pm , June 8, 2019

খান রুবেল ॥ স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ শেষে এবার শুরু হলো কর্মে ফেরার পালা। কর্ম এবং জীবন-জীবিকার তাগিদে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঈদের চতুর্থ দিনেই লঞ্চ ও বাসে বরিশাল ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। যদিও তাদের কর্মে ফেরার যুদ্ধ শুরু হয় ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৬ জুন থেকেই। তবে চতুর্থ দিন ৮ জুন নদী বন্দর ও বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভীর পূর্বের দিনের তুলনায় অনেক বেশি।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারি লঞ্চ মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উল ফিতরে স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে শেখরের টানে রাজধানী ছেড়ে বরিশালে আসে ১২ লক্ষাধিক মানুষ। ঈদ আনন্দ উপভোগ করে তারা আবার কর্মের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। তবে পূর্বের ঈদ গুলোতে একটু আগেভাগেই যাত্রীদের ভীর ছিলো লক্ষনীয়। এবার ছুটি একটু বেশি হওয়ায় এখন পর্যন্ত সে রকমের ভীর বাড়েনি। বরিশাল নদী বন্দরে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার অপেক্ষায় থাকা গাজীপুরের গার্মেন্টস সুপারভাইজার আলমগীর হোসেন জানান, রোববার ছুটি শেষ। তাই একদিন আগে শনিবার বরিশাল থেকে যেতে হচ্ছে। রোববার ঢাকা পৌছে কর্মস্থলে যোগদান করবেন তিনি। অপরদিকে বাকেরগঞ্জর বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মাস্টার্স এর ছাত্র জসিম উদ্দিন শান্ত বলেন, স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ করেছি। এখন লেখা-পড়ায় মনযোগি হতে হবে। তাছাড়া ঢাকায় বন্ধুরা রয়েছে। ওদের সাথেও দু-একটা দিন কাটাতে চাই। তাই একটু আগেভাগেই বরিশাল ত্যাগ করছি।
এদিকে বরিশাল নৌ বন্দরে কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে বৈরি আবহাওয়া ও পন্টুন সংকট। তার মধ্যে যাত্রী ছাউনিতে থাকা অসংখ্য চেয়ার গায়েব হয়ে গেছে। তাই সকাল থেকে নগরীতে থেমে থেমে বৃষ্টির কারনে যাত্রী ছাউনিতে অবস্থানের সুযোগ হলেও বসার জায়গা নেই যাত্রীদের।
অপরদিকে বৃদ্ধির মধ্যে পন্টুনের অভাবে ঝুকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। সরেজমিনে দেখাগেছে, শনিবার বরিশাল থেকে রাত্রিকালিন সার্ভিসের ১৫টি লঞ্চ নদী বন্দরের জেটিতে বার্দিং করা রয়েছে। প্রতিটিতেই যাত্রী তোলা হচ্ছে। তবে সর্বোচ্চ ১০টি লঞ্চ সরাসরি জেটিতে বার্দিং করতে পারলেও বাকি ৫টি জেটিতে বার্দিং করা লঞ্চের পেছনে বার্দিং করেছে। এক লঞ্চের মধ্যে থেকে পেছনের লঞ্চে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাও আর নেই কোন সিঁড়ির ব্যবস্থা। ঝুকি নিয়ে এক লঞ্চের মধ্যে থেকে অপর লঞ্চে উঠতে হচ্ছে। কোন কোন যাত্রী ট্রলার ভাড়া করে মাঝ নদী থেকে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছেন।
বরিশাল সদর নৌ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের থেকে চতুর্থ দিন শুক্রবার একটু ভির বেড়েছে। তবে তা তুলনামুলক নয়। সোমবার ভির আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কর্মে ফেরা যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ বন্দরে নৌ পুলিশের পাশাপাশি, মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি যাত্রীদের সহযোগিতা ও বন্দরের শৃঙ্খলা রক্ষায় ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা রয়েছে।
এদিকে বরিশাল নৌ বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ঈদের পর দিন থেকেই কর্মে ফেরা মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৬ জুন বরিশাল থেকে ৬টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। তবে ওইদিন যাত্রীদের তেমন চাপ ছিলো না।
তিনি বলেন, শুক্রবার (৭ জুন) নদী বন্দরে যাত্রীদের চাপ পূর্বের দিনের থেকে একটু বেশি ছিলো। তাই ওইদিন বরিশাল থেকে ১০টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো সবই ভোর রাতে সদর ঘাটে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বরিশালে এসে পৌছেছে।
বন্দর কর্মকর্তা বলেন, শনিবার চতুর্থ দিনে নদী বন্দরে যাত্রীদের চাপ পূর্বের দিনগুলোর তুলনায় বেশি। তবে পূর্বের ঈদের মত নয়। শনিবার সকাল থেকেই যাত্রীদের পদচারনা শুরু হয় বরিশাল নদী বন্দরে। যার মধ্যে থেকে কিছু যাত্রী নিয়ে দুপুর পৌনে ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ৩টি ওয়াটার বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। তাছাড়া রাত ৮টার মধ্যে রাত্রিকালিন বিশেষ সার্ভিসের আরো ১৫টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে। এগুলো ঢাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে পুনরায় বরিশাল নদী বন্দরে ফিরে আসবে।
আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ঈদ উপলক্ষে নৌ বন্দরে বিআইডব্লিউটিএ ১৪ দিন ব্যাপি সেবাপক্য পালন হচ্ছে। যার কারনে বন্দরে কোন ভোগান্তি নেই। ভোগান্তি একটাই, তা হলো পন্টুন সংকট। পন্টুনের অভাবে একটি লঞ্চের পেছনে অরেকটি লঞ্চ বার্দিং করতে হচ্ছে। যাত্রীরাও এক লঞ্চ থেকে ঝুঁকি নিয়ে অপর লঞ্চে উঠছে।
তিনি বলেন, ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের জন্য যাত্রী ছাউনি নির্মান করা হয়েছে। সেখানে এক সাথে পাঁচ শতাধিক যাত্রী অবস্থান করতে পারবে। সেখানে অসংখ্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যাত্রী ছাউনিতে থাকা বেশ কিছু চেয়ার উধাও হয়ে গেছে। যে কারনে লঞ্চ যাত্রীরা ছাউনিতে বসতে পারছে না। শনিবার যাত্রীদের ভির বেশি এবং বৃষ্টির কারনে ভোগান্তিও বেড়েছে।
অপরদিকে শুধুমাত্র লঞ্চেই নয়, কর্মে ফেরা যাত্রীদের ভির বাড়ছে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেও। সকাল থেকে বেশি কিছু পরিবহন ঈদ ফেরত যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT