2:58 pm , June 2, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাত্র আট মাসেই আলোচনায় উঠে এসেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। কখনো নগর ভবনকে দুর্নীতি মুক্ত আবার কখনো সড়ক উন্নয়নে নজিরবিহীন দৃষ্টন্ত তাকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে এসেছে। সেই সাথে পাল্টে যাচ্ছে নগরীর চিত্র। দুর্নীতি ও অর্থের অপচয় রোধে পাঁচ বছরের চুক্তিতে প্রথমবারের মত আধুনিক পেভার মেশিন দিয়ে অভ্যন্তরীন সড়ক নির্মান কাজ করাচ্ছেন তিনি। সড়কে রোড সাইন, মুল শহরে যানজট নিরসনে ডিভাইডার আর দুর্ঘটনা রোধে সড়কে চলছে আধুনিক থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং এর কাজ। যা সারাদেশেরমধ্যে প্রথম বলে দাবি নগর কর্তৃপক্ষের।
জানাগেছে, ২০০২ সালে তৎকালিন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। সে সময় প্রথম মেয়র ছিলেন বিএনপি’র মজিবর রহমান সরোয়ার। এরপর আওয়ামী লীগের প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন, বিএনপি’র আহসান হাবিব কামাল ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
পূর্বের তিনটি পরিষদের মধ্যে শওকত হোসেন হিরন এর সময়ে সর্বোচ্চ উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার। কিন্তু কোন উন্নয়নই স্থায়ীত্ব পায়নি। নির্মান করা সড়ক বছর না যেতেই ভেঙে একাকার হওয়া, নি¤œমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারনে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি বড় সমস্যায় রূপ নেয়। তাছাড়া এক সড়ক এক বছরে একাধিকবার সংস্কারের মাধ্যমে টাকা ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সিটি’র ৪র্থ পরিষদে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পরে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহন করেন। তার প্রথম উদ্যোগ ছিলো নগর ভবনকে ঘুষ, অনিয়ম এবং দুর্নীতি মুক্ত করা। এজন্য নগর ভবনে বিভিন্ন দপ্তরের ১২/১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ওএসডি করেন। এর ফলে বর্তমানে নগর ভবনে শতভাগ নাগরিক সেবা নিশ্চিত হয়েছে। ঘুষ বা বকশিস দিতে চাইলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে ধমক শুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
রোধ হয়েছে জ্বালানী তেল চোর চক্র। জ্বালানী খাতে বছরে অর্ধ কোটি টাকার বেশি লুটপাট হতো। তা বন্ধ করার পাশাপাশি জ্বালানী ও খরচ বাচাতে বিসিসি’র গাড়ি ব্যবহার না করে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন মেয়র। ঈদের আগে প্রথমবারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করে উদাহরন সৃষ্টি করেছেন তিনি।
তাছাড়া সম্প্রতি আধুনিক পদ্ধতিতে সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন মেয়র। ‘ডেঞ্চ কার্পেটিং’ এর মাধ্যমে নগরীর অভ্যন্তরে নির্মান করছেন উন্নতমানের সড়ক। আধুনিক বিটুমিন মিক্সিং প্লান্টে চার প্রকারের পাথর এবং বিটুমিন মিক্সিং করে পেভার মেশিন দিয়ে প্রায় ৬০ মিলিমিটার পুরু সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। যাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যেই নগরীর আমতলা বিজয় বিহঙ্গ মোড় থেকে সদর রোড, নাজিরের পুল ও স্ব-রোড সোনালী আইসক্রিম মোড় হয়ে পলাশপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার, জেলখানার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সোয়া ২ কিলোমিটার সড়কে কাজ শেষ হয়েছে।
বিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মু. আনিচুজ্জামান বলেন, ‘পিচ ঢালাই শেষে তিনটি রোলার দিয়ে কমপেকশন করায় সড়কের স্থায়িত্বকাল বেড়ে গেছে। পানি জমে না থাকলে এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হলে পাঁচ বছরেও সড়কের কিছু হবে না বলে চুক্তি রয়েছে।
তিনি জানান, উন্নয়নত সড়কে আধুনিক প্রযুক্তির (থ্রিডি) জেব্রা ক্রসিং দেয়া হচ্ছে। ‘প্রাথমিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পয়েন্টে থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং দেয়া হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে- জিলা স্কুল মোড়, জেলখানার মোড়, কাকলীর মোড়, লঞ্চ ঘাট মোড়, বান্দ রোডে প্লানেট পার্কের সামনে, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, নথুল্লাবাদ ও আমতলার মোড়। উন্নয়ন শেষে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং করা হবে।
এদিকে শহরের প্রানকেন্দ্র সদর রোড সড়ক সংকুচিত না করে লোহার তৈরী স্থায়ী সরু ডিভাইটার স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্যে সদর রোডে লাইন রোড পর্যন্ত ডিভাইডার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের যানজট নিরসন ও সড়ক পরিচিতির জন্য দেয়া হচ্ছে রোড সাইন।
বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, নগরীর সড়কে আন্তর্জাতিক মানের কাজ হচ্ছে। এতে কিছু টাকা বেশি লাগলেও টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে। এ উন্নয়নের কারনে প্রতি বছর সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। সাশ্রয় হবে টাকা।
তিনি বলেন, প্রথম বারের মতো নগরীর সড়কে থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং করা হচ্ছে। যা শুধুমাত্র বরিশালেই নয়, বাংলাদেশের মধ্যেও প্রথম। থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং ৫০ থেকে ১শ ফুট দূর থেকে চালক সহজেই দেখতে পাবে। যা ৮-৯ ইঞ্জি উঁচু মনে হবে। এতে যানবাহনের গতি কমে এসে রোধ হবে দুর্ঘটনা।
সিটি মেয়র বলেন, আমার আপন ছোট ভাই’র পরামর্শে থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং পরিকল্পনা মাথায় আসে। এর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে না। যা ব্যয় হয়েছে তা আমার ছোট ভাই ওর প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যয় করেছে।
সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কোন কিছুই ঠিক নেই। সব কিছু এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। এ সমস্যা অনেক বছর আগে থেকেই। তাই সব কিছু গুছিয়ে উঠতেও সময় লাগছে। আমি এই নগরীর সন্তান। আমার পূর্ব পুরুষ সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। আমার স্বপ্ন এই নগরীকে তিলোত্তমা নগরীতে রূপ দেয়া। এজন্য সকলের সহযোগিতা চান মেয়র।