2:52 pm , May 31, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নাড়ীর টানে নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত দক্ষিনাঞ্চবাসী। তাই এ অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌ-পথের লঞ্চে বেড়েছে যাত্রীদের ভীড়। গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বরিশাল-ঢাকা নৌপথের বিশেষ সেবার লঞ্চে ফেরা শুরু হয়েছে। লঞ্চের বিশেষ সেবায়র প্রথম দিনে ১৮/২০ হাজারের অধিক যাত্রী ফিরেছে নিজের জন্মস্থানে। এছাড়াও সড়ক ও ও আকাশ পথেও ফিরেছে তারা। বরিশাল নৌ-বন্দর সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ছুটির দিন। তাই বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। নৌ-পথে ভ্রমনে আরামদায়ক বিধায় লঞ্চে যাত্রীদের আগমন বেশি ঘটছে। তাই এ বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসের প্রথম যাত্রায় যাত্রী হয়ে বরিশালে পৌছছে ১৮ হাজারের অধিক মানুষ। তবে বিশেষ সার্ভিসের প্রথম যাত্রায় উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। কিন্তু স্বাভাবিক দিনের তুলনায় যাত্রীদের চাপ এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চ ও স্টীমারের সংখ্যা বেশি ছিলো। শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ১৬টি নৌ যানে যাত্রী হয়ে ফিরেছে তারা। আগামী ২ জুন থেকে যাত্রীদের চাপ বহুগুন বেড়ে যাওয়ার ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছুটির দিনকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদর ঘাট থেকে শুরু হয় বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে লঞ্চ ও স্টীমারে বিশেষ সার্ভিস।
তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে সদর ঘাট থেকে সরাসরি বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ৯টি লঞ্চ। যা স্বাভাবিক দিনের থেকে ৩টি বেশি। এর মধ্যে ভোর রাত সাড়ে ৩টায় প্রথম বরিশাল নদী বন্দরে পৌছায় এমভি সুরভী-৮, এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯ ও এমভি মানামী।
এর পরে একে একে বরিশাল নৌ বন্দরে এসে পৌছায় পারাবত-১০ ও ১১, সুন্দরবন-১০, ফারহান-৮ এবং সবার শেষে এসে পৌছায় সালমা শিপিং কর্পোরেশনের এমভি কীর্তনখোলা-২ ও ১০। প্রথম যাত্রায় ৯টি লঞ্চে গড়ে ২ হাজার করে যাত্রী এসেছে বলে দাবী লঞ্চ কর্তৃপক্ষের।
এদিকে সরাসরি বরিশাল-ঢাকা ছাড়াও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ভায়া রুটের আরো ৪টি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। তাছাড়া রাত ৪টার থেকে সূর্যদয়ের পূর্বেই যাত্রী নিয়ে বরিশালে পৌছায় বিআইডব্লিউটিসি’র দুটি জাহাজ। যার একটি এমভি মধুমতী এবং অপরটি পিস টার্ন।
এছাড়া দুপুর ২টার থেকে আড়াইটার মধ্যে বরিশাল নদী বন্দরে এসে পৌছায় দিবা সার্ভিসের তিনটি ওয়াটার বাস। যার মধ্যে এমভি গ্রীন লাইন কোম্পানির দুটি এবং অপরটি নিজাম শিপিং লাইন্স এর ক্যাটামেরন এ্যাডভেঞ্চার-৫।
রাতে সর্বপ্রথম নদী বন্দরে পৌছানো সুরভী-৮ লঞ্চের যাত্রী হয়ে আসা ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আফরোজা আলম বলেন, দু’দিন পরেই যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। তাই একটু সস্তির আশায় আগেভাগেই বরিশালে এসে পড়েছি।
তিনি বলেন, আমার স্বামী সাইফুল আলম একজন পাবলিক সার্ভিস কর্মকর্তা। তিনি এখনো ঈদের ছুটি পাননি। তাই তিনি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আগেভাগেই আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঈদের ছুটে তার পরেই আসবেন।
এদিকে ঈদের বিশেষ সার্ভিস শুরু হওয়ার সাথে সাথে বরিশাল নদী বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কয়েক গুন বেড়ে গেছে। ভোর রাতে লঞ্চ নৌ বন্দরে পৌছানোর পূর্বে পন্টুনে মোতায়েন ছিল বরিশাল সদর নৌ-ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা।
এছাড়াও নৌ পুলিশ, বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ এবং মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুরুষ ও নারী সদস্যরাও যাত্রীদের নিরাপত্তায় নদী বন্দরে নিরাপত্তায় ছিল। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-নিট্রা’র কর্মকর্তারাও ছিলেন বন্দরে।
রাতে পন্টুনে দায়িত্বে থাকা নৌ সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পারভেজ জানান, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোর রাতে বিশেষ সার্ভিসের লঞ্চ ও স্টীমারে ঘরে ফেরা যাত্রীদের নিয়ে পৌছেছে। প্রথম যাত্রায় অজ্ঞান পার্টি বা প্রতারক চক্রের কার্যক্রমের কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. কবির হোসেন বলেন, শুক্রবার ভোরাত থেকে থেকে দুপুর পর্যন্ত সরাসরি বরিশাল এবং ভায়া রুট মিলিয়ে মোট ১৬টি রাত্রিকালিন ও দিবা সার্ভিসের নৌযান এসেছে। এর মধ্যে রাতেই বরিশালে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এমভি মানামী, কীর্তনখোলা-২ ও ফারহাদ-৮। তাছাড়া দুপুরে বরিশালে পৌছানো দিবা সার্ভিসের অপর তিনটি ওয়াটার বাস সাড়ে ৩টার মধ্যে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। বাকি ৬টি লঞ্চ শুক্রবার রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নদী বন্দরে বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্দর ভবনের সামনেই নির্মান করা হয়েছে অস্থায়ী যাত্রী ছাউনি। গভীর রাতে লঞ্চ থেকে নামা যাত্রীরা সেখানে অবস্থান নিতে পারবেন। তাছাড়া গোটা নদী বন্দর জুড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সার্বক্ষনিক দৃশ্যমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে নৌ পথের পাশাপাশি সড়ক পথেও যাত্রীদের ভীড় ছিলো। বিশেষ করে দুপুর ২টার পর থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটের পরিবহনগুলো বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ টার্মিনালে এসে পৌছায়। কোন কোন পরিবহন সরাসরি দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। প্রতিটি পরিবহনেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ভীড় ছিলো।
তাছাড়া বরিশালে পৌছানো পরিবহন গুলোকে বেশি সময় বাস টার্মিনালে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। এগুলো যাত্রী নামিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে পুনরায় রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঈদে বিশেষ সার্ভিসের কারনে সড়ক পথে এখন আর রোটেশন মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের টিকেট কাউন্টারের ক্লার্করা।