নৌ পথে ঈদ যাত্রার প্রধান বাধা কার্গো ও বাল্কহেড নৌ পথে ঈদ যাত্রার প্রধান বাধা কার্গো ও বাল্কহেড - ajkerparibartan.com
নৌ পথে ঈদ যাত্রার প্রধান বাধা কার্গো ও বাল্কহেড

2:50 pm , May 27, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের আগমন ঘটবে দক্ষিণাঞ্চলে। যাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী পথ। তাই নিরাপদ ঈদ যাত্রার লক্ষ্যে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ড্রেজিং ও বয়া-বিকন সহ সকল সমস্যা সমাধান হয়েছে এরই মধ্যে। তার পরেও নিরাপদ ঈদ যাত্রায় সর্বমহলের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে কার্গো ও বাল্কহেড। ঈদে ব্যস্ততম নদী পথে দুর্ঘটনার অন্যতম কারন হয়ে দাড়াতে পারে এই নৌ-যানগুলো।
বরিশাল নৌ বন্দর সূত্রে জানাগেছে, আগামী ৩০ মে ঢাকা থেকে শুরু হবে ঈদের বিশেষ সার্ভিস। ওইদিন রাতে সদর ঘাট থেকে নারীর টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে লঞ্চগুলো।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের এমভি সুন্দরবন-৮ এর প্রথম শ্রেণির মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, পূর্বের তুলনায় বরিশাল-ঢাকা নৌ পথ এবার অনেক নিরাপদ। নেই ডুব চরের ভয়। কোন কোন জায়গাতে যাও রয়েছে তাতে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। কেননা এখন বেশিরভাগ লঞ্চেই ইকো সাউন্ডার রয়েছে। তাই চরে আটকে যাবার ভয় নেই। তাছাড়া কিছু পয়েন্টে মার্কিং বাতি ও বয়া-বিকনের যে সমস্যা ছিলো তাও সমাধান হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় প্রধান বাঁধা মেঘনা নদীর মিয়ার চর চ্যানেল, কার্গো এবং বাল্কহেড। বিশেষ করে কার্গো ও বাল্কহেড ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার বড় কারন হতে পারে। এরই মধ্যে বাল্কহেড এর কারনে মেঘনার মিয়ার চর চ্যানেল লঞ্চ চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। গত ২৫ মে মেঘনার মিয়ারচর পয়েন্টে বাল্কহেড ডুবে ওই চ্যানেলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলেছে। ওই চ্যানেলে এখন লঞ্চ চলাচল করতে পারছে না।
এমভি সুরভী-১১ এর প্রথম শ্রেণির মাস্টার আলম জানান, মিয়ার চর চ্যানেলের বিকল্প মেঘনা নদীর উলানিয়া-কালিগঞ্জ হয়ে নৌ পথ রয়েছে। কিন্তু ওই রুট এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন লঞ্চ বা জাহাজ চলাচল করতে সাহস পায়না। কালিগঞ্জ নদীতে এতোটাই উত্তাল যে বড় জাহাজও ডুবে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তার মধ্যে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডুব চর রয়েছে।
তিনি বলেন, কালিগঞ্জ হয়ে লঞ্চ চলাচল করলে দীর্ঘ পথ ঘুরে যাওয়ায় ৪ ঘন্টা সময় বেশি লাগে। পুড়তে হয় অতিরিক্ত চার ব্যারেল (৮০০ লিটার) জ্বালানী তেল। তার পরেও বাল্কহেড ডুবির কারনে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি সাপেক্ষে আপাতত কালিগঞ্জ হয়েই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চলাচল করছে। কিন্তু ঈদের আগে পরে এই রুটে চলাচল সম্ভব হবে না। কারন বর্ষাকাল হওয়ায় যে কোন সময় ঝড় বা বৃষ্টিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটি উদ্ধার করা জরুরী।
অপরদিকে মিজান শিপিং কোম্পানির এমভি মানামী লঞ্চের মাস্টার জানিয়েছেন, বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌ পথে ডুব চরের কোন ঝুঁকি নাই। নিরাপদ নৌ-যান চলাচলে একমাত্র ঝুকির কারন এখন বাল্কহেড। এনালক পদ্ধতির এসব নৌ-যান যারা পরিচালনা করেন তারাও অদক্ষ। যে কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের পর থেকে বাল্কহেড কার্গোর চলাচল এতোটাই বেশি থাকে যে লঞ্চ চলাচল কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২৫ মে রাতে মেঘনার শেষ প্রান্তে বিশাল আকৃতির একটি বাল্কহেড এমভি মানামীর মাঝ বরাবর আছড়ে পড়ে। এতে তৃতীয় তলায় কেবিন ব্লকের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে যায়। তবে অল্পতে কেবিনে থাকা যাত্রীরা রক্ষা পায়। বর্তমানে মানামী ক্ষতিগ্রস্থ স্থান সংস্কারের জন্য ডক ইয়ার্ডে রয়েছে। তাই ঈদে নৌ-পথ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে কার্গো ও বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখা জরুরী বলে মনে করছেন লঞ্চ মাস্টাররা।
বিআইডব্লিউটিএ’র পরিদর্শক মৌজে আলী সিকদার বলেন, বরিশাল থেকে লাল খারাবাদ পর্যন্ত বরিশাল আঞ্চলিক নদী পথের দুরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। নদী পথ চিহ্নিত করণ ও দুর্ঘটনা মুক্ত রাখতে ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫০টি মার্কা, ১০টি বিকন বাতি, ৮টি বয়া বাতি ও ২টি স্প্যারিক্যাল বয়া রয়েছে। যার সবগুলোই এখন সচল অবস্থায় রয়েছে। চরবাড়িয়ায় ২টি বিকন বাতি, চরমোনাইতে ১টি, পোটকার চরে ১টি, রাজাপুরে ১টি, গাজীর চরে ২টি, চর শিবলি ১টি, বামনির পরে ১টি ও কাউরিয়ায় ১টি বিকন বাতি ছিলো না। সম্প্রতি পরিদর্শন করে ওগুলো লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
মৌজে আলী বলেন, এগুলো লাগানোর কিছু দিন পর পরই চুরি হয়ে যায়। যা নিয়ে গত এক বছরে ২০ থেকে ২৫টি’র মত জিডিও করা হয়েছে। তিন বছর পূর্বে পটুয়াখালীতে চুরির সময় আটক করা এক চোরের ৩ বছরের কারাদন্ডও হয়েছে। বর্তমান সময়ে মেহেন্দিগঞ্জের জয়নগর ও জাংগালিয়া ইউনিয়নে চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। যা প্রতিরোধে ইতিপূর্তে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সহযোগিতাও চাওয়া হলেও আমরা কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের মধ্যে মিয়ার চর লঞ্চ চলাচল সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এখানে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। যে কারনে ডুব চরের কোন ভয় নেই। তাছাড়া মিয়ার চর চ্যানেলে ডুবে থাকা বাল্কহেডটি টাগবোর্ড দিয়ে সোজা করে দেয়া হয়েছে। এটি আড়াআড়ি ভাবে ডুবে যাওয়ায় লঞ্চ চলাচলে সাময়িক বিলম্ব হয়েছিলো। তাছাড়া নিরাপদ লঞ্চ চলাচলের জন্য ওই স্থানে লাল ফ্লাক ও বয়া দিয়ে দিয়েছি। মাস্টার ও চালকরা একটু সতর্কতার সঙ্গে চলল্যে দুর্ঘটনার কোন সুযোগ নেই।
বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ ঈদ যাত্রার শার্থে যা করনিয় আমরা তাই করবো। নদী পথ ঝুঁকিপূর্ণ রাখতে যাতে বাল্কহেড চলাচল করতে না পারে সে বিষয়টিতে নজর দিচ্ছি। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নদী বন্দরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মেরিন একাডেমি ও স্কাউট সদস্যরা কাজ করবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, যে কোন মূল্যে নদী পথকে নিরাপদ রাখতে নৌ বন্দর, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদ যাত্রা নিরাপদ রাখতে ঈদে আগে- পরে ১৪ দিন বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্দেশ উপেক্ষিত হলে বাল্কহেড জব্দ ও সংশ্লিষ্টদের সাজা দেয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তাই আমরা আশা করছি এবারের ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ থাকবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT