3:15 pm , May 26, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পরে হত্যা করে গলায় ওড়না বেঁধে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ মে শুক্রবার নগরীর কাউনিয়া কালাখার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটলেও গতকাল রোববার দুপুরে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধ ঘরে জানালার পাশে ঝুলন্ত অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পর নানা নাটকীয়তা শেষে রোববার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। নিহত শিশু শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার (১০)। সে নগরীর কাউনিয়া থানাধীন কালাখাল বাড়ি’র নূর খলিফার ভাড়াটিয়া দিন মজুর আলমগীর হোসেন এর মেয়ে এবং কাউনিয়ায় এনজিও আভাস পরিচালিত আনন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। শিশুর মা মরিয়ম বেগমঅভিযোগ করেন, মেয়েকে ধর্ষণের পরে হত্যা করে লাশ জানালার পাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর এর পেছনে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ার জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ তার। অবশ্য কারো কারো সন্দেহের তীর শিশুর পরিবারের উপরও রয়েছে।
মা মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী কাউনিয়া বাঁশের হাটে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। তিনি বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। সংসারে তাদের এক ছেলে ও একটি মাত্র মেয়ে। প্রতিদিনের ন্যায় গত শুক্রবার সকালে মরিয়ম তার মেয়ে ও শিশু পুত্রকে সাথে নিয়ে প্রতিবেশির ঘরের গৃহপরিচারিকার কাজে যান। একই সময় স্বামী কাজে বের হয়। কিছু সময় পরেই ফারজানা ঘরে তার নিজ ঘরে ফিরে যায়। এর পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মা মরিয়ম ঘরে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ দেখতে পান। মরিয়ম বলেন, জানালা থেকে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পান জানালার পাশে একটি চিকন বাশেঁর সাথে মেয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলে আছে। এসময় তার সালোয়ারের পেছনের দিকে কিছু অংশ ছেড়া ও মুখ থেকে ফ্যানা বের হতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফারজানাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
মায়ের অভিযোগ প্রতিবেশী আব্দুস ছালাম তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। কেননা ঘটনার সময় একমাত্র তিনিই ওই বাড়িতে ছিলেন। বাকিরা সবাই বাইরে ছিলো। তাছাড়া প্রতিবেশির ঘর এতটাই নিকটে যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকলে তার ঘোঙ্গানীর শব্দ প্রতিবেশির পাওয়ার কথা। তাছাড়া ছালামের ঘরের পেছনের অংশ থেকে আলমগীরের ঘরে প্রবেশের সুক্ষ্ম পথ রয়েছে বলেও দাবী মরিয়মের। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে প্রতিবেশী ছালাম এর সাথে ঝগড়া-বিবাধ রয়েছে। তিনি আমাকে, আমার স্বামী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকিও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, যেদিন ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তখন ছালাম ঘরে থাকার পরে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। বরং তিনি প্রতিবেশি নারীদের মাধ্যমে এটি আত্মহত্যা নয় বরং স্বাভাবিক মৃত্যু বলতে শিখিয়ে দেয়।
এদিকে ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলে দাবী করেছেন প্রতিবেশীরা। কেননা ঘটনার দিন মেয়ের বাবা আলমগীর সবাইকে জানায় যে পছন্দের ঈদের পোশাক কিনে না দেয়ার অপরাধে তার মেয়ে ফারজানা নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। আবার তিনিই হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে পালিয়ে আসেন। তাছাড়া প্রথম দিন আত্মহত্যা বললেও পরবর্তীতে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে অভিযোগ তোলেন। তার এলোমেলো বক্তব্য ও আচরন মেয়ে হত্যায় অভিযোগের তীর বাবার দিকেই ছুড়ছেন প্রতিবেশিরা।
প্রতিবেশিরা বলেন, ঘটনার পরে মেয়ের মৃতদেহ ময়না তদন্ত করতে রাজি ছিলো না তার বাবা-মা। তাদের এই ইচ্ছার সাথে সহোমত ছিলেন বিসিসি’র ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ্যাডভোকেট একেএম মুরতজা আবেদিন। তারা সঙ্গবদ্ধভাবেই ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। যদিও নিহতের মামা শাহ আলম বলেন, কাউন্সিলর ময়না তদন্তে বাঁধা দেননি। বরং যাতে দ্রুত লাশ দাফন ও আইনী জটিলতা দুর করা যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন।
কাউনিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি প্রথমে আত্মহত্যা বলে দাবী করেছিলো শিশুর বাবা-মা। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই আবার ধর্ষণ এবং হত্যা বলে অভিযোগ তোলে। তাছাড়া ঘটনার পরে হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে পালিয়ে আসে স্থানীয়রা। সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। শ্বাসরোধ , বিষপান পানে অন্য কোন কারনে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি মেডিকেল বোর্ড তদন্ত করে দেখবেন। তাছাড়া শিশুটি মৃত্যুর পূর্বে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা সে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শেবাচিমের গাইনী বিভাগের প্রধানকে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে। তাই ময়না তদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারন বলা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও এই ঘটনায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন নিহতের বাবা আলমগীর হোসেন।