বাড়ছে সরকারের ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা! বাড়ছে সরকারের ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা! - ajkerparibartan.com
বাড়ছে সরকারের ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা!

3:03 pm , May 23, 2019

মর্তুজা জুয়েল ॥ বরিশালে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরন হলেও লোকসানে রয়েছে কৃষকরা। ধান বিক্রয় করতে গিয়ে উৎপাদন খরচের অর্ধেক মূল্যও না পাওয়ায় হতাশ জেলার বোরো চাষীরা। প্রান্তিক কৃষক ও চাষীদের দাবী ফড়িয়াদের কারনে এমন সংকট তৈরী হয়েছে। তাদের দাবী সরাসরি সরকারের কাছে ধান সরবরাহ করতে পারলে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন হবে। এরই মধ্যে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। তবে উৎপাদিত ধানের তুলনায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সামান্য থাকায় ন্যায্য মূল্য বঞ্চিতই থাকতে হচ্ছে  অধিকাংশ কৃষককে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক সাইনুর আজম খান জানান, বিভাগের ৬ জেলায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়।  এর মধ্যে উৎপাদিত ধান থেকে ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। তবে সরকারী ভাবে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা থেকে মাত্র ৫ হাজার ১৯ টন ধান ও ১৬ হাজার ৩০ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল জেলা থেকে ১৪৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে। আবার একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৭০ মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারবে। এ হিসেব অনুযায়ী বৃহৎ উৎপাদনকারী ৫ জন কৃষকই জেলার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। ফলে জেলার বাকি ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৯ জন কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান কোথায় এবং কিভাবে সরকারের কাছে বিক্রি করবে এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, প্রতি কৃষকের কাছ থেকে যাতে করে ২০ মন করে ধান সরকারীভাবে ক্রয় করা হয় এজন্য আমি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যাতে করে সকল কৃষকই স্বল্প হলেও লোকসান কমিয়ে আনতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে । পাশাপাশি সরকারী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা আরো বেশী নির্ধারন করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার শর্শী গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক রাবেয়া ও অনোয়ার। স্বপরিবারে কৃষি কাজ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। এ বছর অন্যের এক একরের বেশি জমি বর্গা নিয়ে বোরা ধান আবাদ করেছিলেন। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে নিজেদের শ্রম এবং এনজিও থেকে  ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়ে ধান আবাদ করে ৪০ মন ফলন পেয়েছেন। যার বাজার মূল্য ২০ হাজার টাকা রয়েছে। যেখানে উৎপাদন খরচের পর ১৫ হাজার টাকা লাভবান হওয়ার আশা করেছিলেন সেখানে লোকসান ১০ হাজার টাকা বলে জানান এই কৃষক পরিবার। ক্ষুদ্র এ কৃষক পরিবার এখন এনজিওর টাকা পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত। একইভাবে বরিশালের সকল কৃষকেরই  প্রতি মন ধানে লোকসান ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। লোকসানের কবলে পড়া কৃষকরা জানান, সরকারীভাবে পাইকারদের কাছ থেকে  ধান সংগ্রহ করা হলেও কৃষকরা তা পারছেন না। কৃষি বিভাগ কার্ড দিলেও অনেকেই রয়েছেন কার্ডের বাইরে। উপজেলা ভিত্তিক কৃষকদের নিকট থেকে  সরকারীভাবে ধান সংগ্রহ করার দাবী তাদের। এছাড়া পাইকারদের নিকট ধান সরবারহ করলেও সরকার থেকে মূল্য নির্ধারন করে দেয়ার দাবী জানান তারা। এবার উৎপাদন খরচ, শ্রমিক মজুরী ফেরত না পেলে  আগামী মৌসুমে তাদের ধান আবাদ বন্ধ করে দিতে হবে বলে জানান কৃষকরা।
ধানের বাজারে বড় লোকসানের মধ্যেই সরকারীভাবে যেসব কৃষকের কাছে কার্ড রয়েছে সেইসব কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি প্রতি মণ এক হাজার চল্লিশ টাকা দরে ধান ক্রয় করছে খাদ্য বিভাগ। এতে করে বাজারের থেকে দ্বিগুন মূল্যে ধান বিক্রি করতে পেরে  খুশি কৃষকরা। তবে অনেক স্থানের কৃষকদের নিকট এখন পর্যন্ত এমন সংবাদই পৌছেনি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমাযুন কবির বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে যে সকল কৃষকরা কার্ড নিয়ে আসবেন, খাদ্য বিভাগ তাদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করবেন। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আবদুল অদুদ খান জানান, জেলায় মোট ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৪৪ টি কৃষি কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ হাজার ১৫৬ জন নারী কৃষক রয়েছেন। বর্তমানে জেলায় ৪২ হাজার ৫০০ কৃষি কার্ডের চাহিদা রয়েছে। এর বাইরে যদি কোন কোন কৃষক কৃষি কার্ড না পেয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন দপ্তর থেকে নির্দিষ্ট ফরম পূরন করে তারা কার্ড পেতে পারেন বলেও জানান তিনি। বরিশাল সদর উপজেলায় ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচির প্রথম দিন গত সোমবার থেকে কৃষি অফিস  যে তালিকা প্রেরন করেছে সেভাবেই কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কার্ডধারী কৃষকের কাছ থেকে চিটা ও ময়লা মুক্ত ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা এবং প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে খাদ্য বিভাগ থেকে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত দক্ষিনাঞ্চলে ধানের উৎপাদন ব্যয় কম হলেও কোন চাল কল না থাকায় কৃষকরা ধান উৎপাদন করে লাভবান হতে পারছেনা না ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT