3:15 pm , May 22, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরবাসীর কৌতুহলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র জানান, নতুন করে কোন হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং ২০১৬ সালে পূর্বের মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও তার পরিষদ যে ট্যাক্স নীতি করে গেছেন বর্তমান পরিষদ সেই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করছে মাত্র। এ নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হবার জন্য নগরবাসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র। গতকাল বুধবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নগর ভবনের তৃতীয় তলায় সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এই আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরীতে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। নগরবাসী ভাবছেন আমি দায়িত্ব নেয়ার পরে ইচ্ছাকৃতভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করে নগরবাসিকে বিপদে ফেলেছি। আসলে এমন ধারনা ঠিক নয়। আমি হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করিনি। বরং নগরবাসির কথা চিন্তা করে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনশীলতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি। মেয়র বলেন, ১৯৮৬ সালের ট্যাক্স রুলস অনুযায়ী মুল শহরে বাসা ভাড়ার ২৭ ভাগ এবং বর্ধিত এলাকায় ১০ ভাগ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। পূর্বের মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও তার পরিষদ ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারী একটি হোল্ডিং ট্যাক্স আইন পাশ করেন।
ওই আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে মূল শহর, মধ্যম শহর ও বর্ধিত এলাকা হিসেবে তিনভাগে বিভক্ত করে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারন করা হয়। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে আলাদা আলাদা ট্যাক্সের আওতায় আনা হয়। সে হিসেবে প্রতি স্কয়ার ফুটের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ টাকা থেকে সর্বনিম্ম দেড় টাকা পর্যন্ত নির্ধারন করা হয়েছে।
মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ২০১৬ সালে এই ট্যাক্স আইন হলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। এক শ্রেণির নগরবাসি ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। সাবেক মেয়র, কাউন্সিলর এবং কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুপারিশের কারনে হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে বিসিসি’র আয় কমে যায়। আমি ও আমার পরিষদ দায়িত্ব গ্রহন করার পরে পূর্বের সেই ট্যাক্স আইন চালু করেছি।
এর ফলে ইতিপূর্বে যেখানে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ বাৎসরিক আয় মাত্র ৯ কোটি টাকা ছিলো সেখানে ২০১৬ সালের হোল্ডিং ট্যাক্স আইন অনুযায়ী ট্যাক্স আদায় করলে আয় বেড়ে হবে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা পর্যন্ত। এমনটি হলে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম আরো গতিশীল এবং একটি আধুনিক নগরীতে পরিনত করা যাবে।
মেয়র বলেন, ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বাড়ি ভাড়া প্রতি স্কয়ার ফুট ১৫ টাকা নির্ধারন করে একটি আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু গনপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে যে ভাড়া নির্ধারন করে দিয়েছে তা বরিশালের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছে না। তাই আমরা নগরবাসীর কথা ভেবে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় না করে আমরা বরং সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করছি। তার মধ্যে বাড়িতে বসবাসকারী বাড়ি মালিকের কাছ থেকে ২০ ভাগ কম, ঋন করে বাড়ি নির্মান করা ভবন ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে নেয়া হচ্ছে। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ কিছু কিছু স্থাপনা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে যে ট্যাক্স আইন হয়েছিলো তখনওই আমি এখানে একই দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত তৎকালিন মেয়র এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাখেন। হোল্ডিং ট্যাক্সের ফাইলের যে জায়গাটাতে আমার স্বাক্ষর দেয়ার কথা সেখানে কখনো মেয়র আবার কখনো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই স্বাক্ষর করেছেন। যার যথেষ্ঠ প্রমান রয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন মেয়র ক্ষমতায় আসার পরে আমি পূর্বের হোল্ডিং ট্যাক্স এর বেশ কিছু নথি যাচাই বাছাই করেছি। দেখতে পাই যে কোম্পানির হোল্ডিং ট্যাক্স ২৫ লাখ টাকা মূল্যায়ন হয়েছে তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চায়না প্যালেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দুটি ভবনের জন্য ট্যাক্স দিয়েছে ২৭ হাজার। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের মাত্র একটি ভবনেই ট্যাক্স মূল্যায়ন করা হয় এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
বিসিসি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তার ট্যাক্স মূল্যায়ন করা হয় ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি ট্যাক্স দিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকা। কর্পোরেশনের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী যার ট্যাক্স মুল্যালয় করা হয় লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু তিনি ট্যাক্স দিয়েছেন ১০/১২ হাজার টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাউন্সিলর সহ যার যেভাবে ক্ষমতা ছিলো সে তার মত করে হোল্ডিং ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। অবশ্য বিসিসি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও লাভবান হয়েছে কিছু কর্মকর্তা এবং বাড়ি মালিকরা। হোল্ডিং গ্রহিতরা ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে এক লাখ টাকার ট্যাক্সের পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করেছে। এমন একাধিক প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে।
সবিচ ইসরাইল হোসেন বলেন, নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পরে স্থাপনা পরিবর্তন হওয়া ৪ হাজার বিল্ডিং জরিপ করিয়েছি। জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জখন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারন করা হলো তখন দেখা যায় ট্যাক্স এর পরিমান কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কারো কারো হোল্ডিং ট্যাক্স ২৭৩ গুনও বেড়েছে। যা নিয়ে এখন বাড়ি মালিক বা হোল্ডিং গ্রহিতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়টি এখনো পর্যালোচনায় রয়েছে। আমি নগরবাসির সেবক। তাদের দুর্ভোগ লাগবের জন্য আমি কাজ করছি। যে কারনে এই হোল্ডিং আইন বাস্তবায়ন হলেও মেয়র হিসেবে আমার ব্যক্তিগত ক্ষমতা রয়েছে ট্যাক্স কমানোর। যে কারনে কাউকে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মেয়র।
তিনি বলেন, এমনেতেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আমার বড়ই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই নগরবাসী ট্যাক্স না দিলে আমরা সেবা দিতে পারব না। আমরা আপনাদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেই। তাই আপনাদের সেবা দেয়াটাই আমাদের প্রথম কাজ। এজন্য সাংবাদিক সহ নগরবাসির কাছে সহযোগিতা চান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হাসান, বিসিসি’র প্যানেল তিন প্যানের মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, রফিকুল ইসলাম খোকন ও আয়শা তৌহিদ লুনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।