বরিশাল নৌ-বন্দরে ২৪ লঞ্চের জন্য পন্টুন মাত্র ৩টি বরিশাল নৌ-বন্দরে ২৪ লঞ্চের জন্য পন্টুন মাত্র ৩টি - ajkerparibartan.com
বরিশাল নৌ-বন্দরে ২৪ লঞ্চের জন্য পন্টুন মাত্র ৩টি

3:11 pm , May 21, 2019

খান রুবেল ॥ বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশালবহুল যাত্রীবাহী নৌ-যান। প্রতি বছর ঈদ বা কোরবানীর পূর্বে এ রুটে যুক্ত হচ্ছে লঞ্চ। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পূর্বেও এ রুটে যুক্ত হয়েছে এমভি মানামী লঞ্চ। বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে সরাসরি চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা ২৪টি। তবে বছর বছর টাইটানিক আকৃতির লঞ্চ যুক্ত হলেও বরিশাল নদী বন্দরে বাড়েনি পন্টুনের সংখ্যা। ৬টি পন্টুনেই ভরসা খুজে নিতে হচ্ছে লঞ্চগুলোকে। যার মধ্যে আবার তিনটি পন্টুন অভ্যন্তরিন রুটের এক তলা লঞ্চের জন্য নির্ধারিত। এর ফলে ঈদ মৌসুমে ৩টি পন্টুনে জায়গা না পেয়ে অধিকাংশ লঞ্চ মাঝ নদীতে নোঙ্গর করে যাত্রী ওঠা-নামা করে। এতে ছোট বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে লঞ্চগুলোও। তাই আসন্ন ঈদেও বরিশাল নদী বন্দরে লঞ্চে যাত্রী ওঠা-নামা করানো নিয়ে চিন্তিত বন্দর ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মাস্টাররা বলেন, বরিশাল নদী বন্দরে দূরপাল্লার রুটের লঞ্চের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য তিনটি পন্টু নির্ধারন রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ হলে এক সাথে ৮টি লঞ্চ নোঙ্গর করা যায়। যে কারনে স্বাভাবিক দিনে কোন ঝামেলা হয় না। কারন ওই সময় রোটেশন এর কারনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬টি করে লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদ বা কোরবানী মৌসুমে ঝামেলায় পড়তে হয়। তারা বলেন, বর্তমানে ২৪ লঞ্চ বরিশাল-ঢাকানৌ রুটে সরাসরি চলাচল করছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র দ্বিপরাজ লঞ্চের মালিকানা পরিবর্তনের কারনে ঈদে চলবে না। তবে ঈদে বরিশাল ভায়া হয়ে প্রতিদিন চলাচল করবে আরো অন্তত ৮টি লঞ্চ। যে কারনে নৌ বন্দরে লঞ্চ ঘাট দেয়া নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। লঞ্চের মাস্টাররা বলেন, ঈদ মৌসুমে বিশেষ ট্রিপ দেয়ার কারনে ২০/২২টি লঞ্চ এক যোগে চলাচল করে। যে লঞ্চটি আগে ঘাটে পৌছায় সেটির যাত্রী না নামা পর্যন্ত অপর লঞ্চটিকে মাঝ নদীতে অপেক্ষমান থাকতে হয়। কোন কোন সময় এক লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাতে হচ্ছে। এর ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা অতি জরুরী বলে মনে করেন লঞ্চের মাষ্টাররা। বরিশাল বিআইডব্লিউটি’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. কবির হোসেন বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যে লঞ্চগুলো চলাচল করছে তার প্রতিটির প্রস্থ সর্বোচ্চ ৪৪ থেকে সর্বনি¤œ ৩৮ ফুট পর্যন্ত। বন্দরে যে ৬টি পন্টুন রয়েছে তার এক একটি ১০০ ফুট করে। সে হিসেবে ৬০০ ফুটের মধ্যে ৩০০ ফুট পন্টুন বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের লঞ্চের জন্য বরাদ্দ। ৩০০ ফুটের ৩টি পন্টুনে সর্বোচ্চ ১০টি লঞ্চ আমরা নোঙ্গর করাই। তবে ঈদ মৌসুমে পন্টুনে জায়গা দিতে পারছি না। তাই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ একটি লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ থামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায়। তাছাড়া দিবা সার্ভিসের গ্রীনলাইন ওয়াটার ওয়েজ নদী বন্দরের জেটিতে নোঙ্গর করতে পারছে না। এ দুটিকে নোঙ্গর করাতে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি’র জেটিতে। যাত্রীবাহী নৌ-যান মালিকদের সংগঠন জাপ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি পন্টুনের সংখ্যা। আমরা লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে বহুদিন ধরেই পন্টুন বৃদ্ধির জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে দাবী জানিয়ে আসছি আরো দুটি পন্টুন বৃদ্ধির জন্য। তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আন্ত.মন্ত্রনালয়ের মিটিং হয়। যেখানে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক সহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। লঞ্চ মালিক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে আমিও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বরিশাল নদী বন্দরে দুটি পন্টুন বৃদ্ধির জন্য দাবী জানানো হয়। ওই মিটিংএ আসন্ন ঈদে দুটি পন্টুন বাড়িয়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত সেই আশ^াসের বাস্তবায়ন হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ (নৌ-নিটা) এর উপ-পরিচালক ও বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুন সংকটের কথা সর্বমহলই জানে। আমরা চিঠি দিয়ে তাদের জানিয়েছি। তাছাড়া সংকট নিরসনে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অধিনে বিশ^ ব্যাংক একটি প্রকল্পও গ্রহন করেছে। এ প্রকল্পের অধিনে বরিশাল নদী বন্দরে নতুন দুটি পন্টুন, গ্যাংওয়ে নির্মান সহ আনুসাঙ্গিক উন্নয়ন করা হবে। এরই মধ্যে বিশ^ ব্যাংকের কনসালটেন্ট টিম পরিদর্শন করে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনো অনেক সময়ের প্রয়োজন। এর কারন উল্লেখ করে বিআইডব্লিউটিএ’র এই কর্মকর্তা বলেন, নতুন পন্টুন স্থাপনের জন্য নদী বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। নতুন জায়গা তৈরী করতে হলে লঞ্চ ঘাটের পাশে থাকা ট্রলার ঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। তার আগে ট্রলার ঘাটের জন্য জায়গা নির্ধারন করতে হবে। কেননা ট্রলার ঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মামুষ নদী পারাপার করছে। এজন্য ট্রলার ঘাট সরানোর আগে পন্টুন স্থাপন সম্ভব নয়। যদিও ট্রলার ঘাটের জন্য সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারন করে রাখা হয়েছে। নৌ বন্দরে সিডি ঘাট সংলগ্নে ট্রলার ঘাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ঈদের আগে কিছুই সম্ভব নয়। তাই আসন্ন ঈদেও পূর্বের মত করেই লঞ্চ নৌঙ্গর ও যাত্রী ওঠা-নামা করাতে হবে বলে জানিয়েছেন আজমল হুদা মিঠু।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT