3:07 pm , May 20, 2019
সাঈদ পান্থ ॥ প্রতি বছরের মত এ বছরও ঈদকে পূজি করে বাড়ছে লঞ্চ ভাড়া। লঞ্চ স্পেশাল সার্ভিসে শতকরা ২০ ভাগ এই ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে লঞ্চের তুলনায় চাহিদা রয়েছে প্রায় ১০ গুন। তাইতো ঈদে লঞ্চের কেবিন পেতে লটারি নামের ভাগ্যের খেলার উপর নির্ভর করছেন অনেকে। যদিও গতকাল সোমবার থেকে এই টিকেট বিক্রি শুরু করেছে লঞ্চ কোম্পানীগুলো। অবশ্য সুন্দরবন এবং সুরভি লঞ্চ কোম্পানী এই পদ্দতিতে টিকেট বিক্রি করছেন। তবে এই দুই কোম্পানির বাইরে কীর্তনখোলা, এ্যাডভেঞ্চার, পারাবত এবং টিপুসহ অন্যান্য লঞ্চগুলো আগে থেকেই বিক্রি শুরু করেছে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের টিকিট। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে চলছে এই টিকিট বিক্রি।
ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে সরকারী রেটের দোহাই দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রস্তুতিও চুড়ান্ত করে ফেলেছে লঞ্চ মালিকরা। মাথাপিছু গড়ে ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ছে লঞ্চ ভাড়া। ঈদের আগে ৩ জুন থেকে শুরু হয়ে ঈদ পরবর্তি ৭ দিন স্পেশাল সার্ভিস চলবে বলে জানানো হলেও বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হবে ২৫ মে থেকেই। তবে গতকাল সোমবার থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হলে ২০ ভাগ বেশী টাকা দিয়েই টিকেট কিনতে হয়েছে যাত্রীদের।
বরিশাল এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবারের ঈদে রাজধানী ঢাকার সাথে বরিশালে যাত্রী পরিবহন করবে ২৬টি বৃহৎ আকারের লঞ্চ। অপরদিকে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার ঈদ যাত্রা সামাল দিতে ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-বরিশাল-হুলারহাট-মোড়েলগঞ্জ রুটে নিয়মিত সার্ভিসের ৪টি স্টীমারের পাশাপাশি আরো ২টি জাহাজ যোগ করা হবে স্পেশাল সার্ভিসে। এক্ষেত্রে যাত্রীদের অগ্রিম বুকিং নেয়া শুরু হবে ২২ মে থেকে।
সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক আকতার হোসেন আকেজ বলেন, ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের যাতায়াতে সরকারী রেট অনুযায়ী ভাড়া আদায় করবো আমরা। সেক্ষেত্রে ডেক যাত্রীদের কাছ থেকে বর্তমানের ২০০ টাকার স্থলে আদায় করা হবে ২৫০ টাকা। একইভাবে সিঙ্গেল কেবিন, ডাবল কেবিন, সোফা এবং ভিআইপি’র ক্ষেত্রে গড়ে ৩ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়বে লঞ্চ ভাড়া।’ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সুরভী নেভিগেশনের অন্যতম মালিক রেজিন উল কবির বলেন, ‘সারা বছর সরকারী রেটে লঞ্চের ভাড়া আদায় করা হয়না। যাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে নির্ধারিত রেটের তুলনায় কম ভাড়া নেই আমরা। তবে ঈদ-কোরবানীতে সেই হারে ভাড়া নেয়া সম্ভব না। ঈদে অনেক বাড়তি খরচ আছে। কর্মচারীদের বোনাস, ঈদের খরচ। তাছাড়া প্যাসেঞ্জার আনতে ডাবল ট্রিপ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবার খালি লঞ্চ চালিয়ে যেতে হয় ঢাকায়। এসব লোকসান পোষাতে সরকারী রেটে ভাড়া আদায় ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। তাছাড়া যে রেটে ভাড়া নেয়া হবে তাও তো পুরোপুরি সরকারী রেট নয়। সরকারী রেটে নিতে গেলে ভাড়া আরো বাড়তো।’
লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার কথা ভেবে যে তারা সারা বছর ভাড়া কম নেয় তা ঠিক নয়। আসলে বছরের অন্যান্য সময় যাত্রী কম থাকার পাশাপাশি লঞ্চগুলোর মধ্যে থাকে কঠিন প্রতিযোগীতা। ফলে ব্যবসায় টিকে থাকতে ভাড়া কম নেয় তারা। আর ঈদের সময় ঘরে ফিরতে ব্যাকুল মানুষ অনেকটাই জিম্মি থাকে লঞ্চ মালিকদের কাছে। এই জিম্মি দশাকে পূঁজি করেই আদায় করা হয় সরকারী রেটের নামে বাড়তি ভাড়া। ৬ সদস্যের একটি পরিবারকে যদি মাথা পিছু ৫০ টাকা বাড়তি দিতে হয় তাহলে অতিরিক্ত গেল ৩০০ টাকা। আসা-যাওয়ায় ৬০০। নিম্মবিত্ত একটি পরিবারের জন্যে এটি কোন সামান্য টাকা নয়। সরকারের কাছে আবেদন জানাই অন্ততঃ ঈদের সময় যেন সরকারী রেটের প্রয়োগ না হয়। ঘরে ফেরা মানুষ তাতে বিপাকে পড়বে। হয় সারা বছর একই রেটে ভাড়া আদায় নয়তো ঈদে বন্ধ হোক বাড়তি রেটে ভাড়া আদায়।’