3:01 pm , May 17, 2019
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ ছাত্রজীবনে রাজনীতির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তারপর কলেজে গিয়ে.. তারপর ইউনিভার্সিটি তখনো ছাত্রলীগেরই সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতি ছাত্ররাজনীতি থেকেই শুরু। তবে কখনো কোনো বড় পোস্টে ছিলাম না, পোস্ট চাইনি কখনো। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। কখনো পদ নিয়ে চিন্তা করিনি, পদ চাইওনি। আমরা পদ সৃষ্টি করে সবাইকে পদে বসানোর দায়িত্বটাই পালন করতাম।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা উলে¬খ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘৭৫-র এত বড় দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে- এটা কখনো আমি ভাবিনি, চাইওনি, এটা চিন্তাও ছিল না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এক নম্বর পলিটিক্যাল পার্টি। যে পার্টি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছে। সেই আস্থা-বিশ্বাস আমরা দেখতে পারি এবারের নির্বাচনে, নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে যারা প্রথম বারের ভোটার তারা সকলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের কথা জানিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় থাকলে সাধারণত মানুষের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই মানুষের ভোট আমরা পেয়েছি। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার কারণ উলে¬খ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণটা হলো আমরা ক্ষমতায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষের জন্য উন্নয়ন করেছি, মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য যে কাজগুলো করেছি। সেটা মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের আস্থা-বিশ্বাসটা অর্জন করা।’ ক্ষমতায় থেকেও মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারা বিশাল অর্জন বলে উলে¬খ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। নেতাকর্মীদের জনগণের এই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নেতাকর্মীদের কাছে এতটুকু চাইব, এই আস্থা ও বিশ্বাস যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। ব্যক্তিগত জীবনে কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা না করি। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম-সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।’ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন সময়ের ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিবেশে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা উলে¬খ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যারা বারবার চেয়েছে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে তারা সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ কিন্তু আওয়ামী লীগের মতোই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে।’ ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ হাসিনা বলেন, একটা দলের সভানেত্রী হিসেবে ৩৮ বছর বোধহয় একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘না’ বলে ওঠেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘৩৮ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ক্ষুণœ হোক, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হোক-এমন কোনো কাজ আমি বা আমার পরিবারের কোনো সদস্য কখনো করিনি। নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার জন্য কাজ করিনি, কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য। সবসময় চিন্তা করেছি মানুষকে কী দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম।’ ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সবাইকে সবসময় সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই দেশটা যেন আবার স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের হাতে যেন না যায়। কেউ যেন দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সেদিকে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর বিদেশে নির্বাসিত থাকার পর ১৯৮১ সালের আজকের এই দিনে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে আসার আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি টানা ৩৮ বছর বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একবার এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে টানা তিনবার মিলিয়ে বাংলাদেশে ইতিহাসে চতুর্থ বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।