3:12 pm , May 16, 2019
প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ জালিয়াতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তদন্তে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সাথে কর্পোরেশনের বাজেট কাম হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তেও মাঠে নেমেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে ভূয়া ব্যাংক একাউন্ট খুলে জালিয়াতি করে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন বিসিসি মেয়রকে লেখা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আব্দুস সাত্তার মিয়ার গত ২৩ মে ২০১৭ সালের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে রাজশাহী সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজী ইউনিভার্সিটির দেয়া সনদটি অবৈধ বলে তদন্ত কমিটিতে স্পষ্ট হয়েছে। বিসিসির চাকুরীর বিধি অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতী পেতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিষয়ে ¯œাতকপাশের সনদ থাকতে হবে। সিটি কর্পোরেশেন সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল মোতালেব ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজী ইউনিভার্সিটিতে থেকে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ সংগ্রহ করে সিটি কর্পোরেশনে জমা দেন। কিন্তু ওই সনদ অবৈধ বলে উপায়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিচুজ্জামন। তিনি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। তার অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের তিন সদস্যের কমিটি ২৩ এপ্রিল ১৭ প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় মঞ্জুরী কমিশন ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল রাজশাহী সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজী ইউনিভার্সিটিতে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়। কিন্তু আব্দুল মোতালেব ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ¯œাতক সনদ দেয়া হয়। জালিয়াতি করে চার বছর মেয়াদি সনদ দেয়া হয়েছে মাত্র ১ বছর ৫ মাসে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি দীর্ঘ দিন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে দুদককে তদন্ত করতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যতো ধরনের সহযোগীতা দরকার তা আমরা করব। এদিকে কর্পোরেশনের হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে ভূয়া ব্যাংক একাউন্ট খুলে জালিয়াতি করে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি টাকা আত্বসাত করেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহেল ইাঞ্জনিয়ার্স এর স্বত্তাধীকারী গোলাম হোসেন লিখিত অভিযোগ করে জানান, গত ২৫ আগস্ট ২০১৫ এ বিসিসি/ইডি/২৬/১৫ দরপত্র বিঞ্জপ্তির ২নং ক্রমিকে নগরীর চৌমাথা বাজার থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার কাজ পান তিনি। কাজ শেষ করে বিসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে তার পাওনা ৮৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৯৬ টাকার বিল চাইতে গেলে হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা মশিউর রহমান তার সাথে বিভিন্ন ভাবে টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তিতে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন মশিউর রহমান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার শাখায় মেসার্স সোহেল ইঞ্জিনিয়ার্স প্রতিষ্ঠানের নামে ভূয়া ব্যাংক একাউন্ট খুলে চেকের মাধ্যমে ৮৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৯৬ টাকার বিলটি জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করেন। পরবর্তিতে বিষয়টি তিনি দুর্ণীতি দমন কমিশনকে লিখিত অভিযোগ করলে দুদক বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন। বর্তমানে অভিযোগের বিষয়টি দুদক তদন্ত করছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারের বিলের ভ্যাট টাক্স্র সরকারের কোষাগারে না দিয়ে আত্মসাত করার মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোঃ ইসরাইল হোসেন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্ণীতিসহ আরো অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। তাঁর ভিত্তিতে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ইতিমধ্যে তাকে ও এসডি করেছে। সকল দুর্ণীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সচ্চার আমাদের বর্তমান সিটি কর্পোরেশন।