দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়া আর চিকেন পক্সের সংক্রামনে জনজীবন বিপন্ন দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়া আর চিকেন পক্সের সংক্রামনে জনজীবন বিপন্ন - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়া আর চিকেন পক্সের সংক্রামনে জনজীবন বিপন্ন

3:17 pm , May 13, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বৃষ্টিবিহীন লাগাতার তাপ প্রবাহের সাথে ডায়রিয়া ও চিকেন পক্সসহ নানা ব্যাধিতে দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটাই বিপন্ন। গত ১২ মে পর্যন্ত সরকারী হিসেবেই বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলায় প্রায় ৩১ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ হিসেব শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসার জন্য আসা ডায়রিয়া রোগীদের। বাস্তবে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আক্রান্তের বেশীরভাগই শিশু। গ্রামের চেয়ে শহরের বেশীরভাগ ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ কোন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেনা। ফলে তাদের কোন হিসেবও সিভিল সার্জন সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। এমনকি বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ডায়রিয়া অক্রান্ত শিশু আসলেও তারও কোন হিসেব স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।
চিকেন পক্স আক্রান্তের কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগ সংগ্রহ ও সংরক্ষন করে না। নগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের ঘরে ঘরে এখন চিকেন পক্সের রোগী। এ রোগ ও রোগীর কোন পরিসংখ্যান জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল জুড়েই ঘরে ঘরে চিকেনপক্সের সংক্রামন অব্যাহত রয়েছে। এক ঘরে একজন আক্রান্ত হলে তা ঘরের আরো অনেকের মধ্যেই সংক্রমিত হচ্ছে। ডায়রিয়ার মত চিকেন পক্সে আক্রান্তের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাধীক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথমে জ্বর থেকে শরীর ব্যথা দিয়ে উপসর্গ শুরু হয়ে পড়ে পানি সহ বিচির মত ভরে যাচ্ছে। অনেকেরই গা ব্যথা আর জ্বর ৫-১০ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। শরীরে ছড়িয়ে পড়া জলবসন্তের এ গোটাগুলো শুকাতে ১৫ থেকে কুড়ি দিনেরও বেশী সময় লাগছে অনেকের। ফলে লেখাপড়া থেকে শুরু করে কর্মস্থলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকতে হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের লেখাপড়া ব্যহত হচ্ছে।
তবে চিকিৎসকগন চিকেনপক্স আক্রান্ত রোগীকে ঘরে আলাদা পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কোন মতেই ঘরের বাইরে বিশেষ করে রোদে বের না হবার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকগন। এসময় যতটা সম্ভব ঠান্ডায় ও পরিপূর্ণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সহ সহজ পাচ্য খাবার গ্রহনেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঘরের সকলকেই অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অনুরোধ করেছেন চিকিৎসকগন।
এদিকে গত জানুয়ারী থেকে ১২ মে পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হবার কথা বলা হয়েছে। তবে এ সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে। সরকারী হিসেব মতে এ সময়কালে সবচেয়ে বেশী মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে দ্বীপজেলা ভোলাতে। সেখানে এ সময়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর পরে ছোট্ট জেলা ঝালকাঠীর অবস্থান। এ সময়কালে ৪টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠীতে প্রায় ৭ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়াও পিরোজপুরের প্রায় ৬ হাজার, বরিশালে প্রায় ৩ হাজার এবং পটুয়াখালী ও বরগুনাতে প্রায় ৭ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এবার বৃষ্টির ঘাটতির সাথে অব্যহত তাপ প্রবাহে দক্ষিনাঞ্চলের জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। গত জানুয়ারী মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি মাসেই দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান যথেষ্ঠ কম। অথচ তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ৩-৪ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে। গত ২৪ এপ্রিল বরিশালে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪ ডিগ্রী বেশী।
যদিও গত দুদিন ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি সহ বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া বিভাগ, কিন্তু এখনো আকাশ জুড়েই মেঘের কোন দেখা নেই। তাপমাত্রা পারদ এখনো ৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT