জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা খালাস কার্যক্রম জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা খালাস কার্যক্রম - ajkerparibartan.com
জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা খালাস কার্যক্রম

3:12 pm , May 12, 2019

কলাপড়া প্রতিবেদক ॥ চলতি বছরের জুলাই থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আমদানীকৃত কয়লা খালাসের মধ্যদিয়ে পুরোদমে পন্য খালাস কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দর। উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়ায় নির্মিত ১৩২০ মোগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টার্মিনাল ব্যবহার করে আমদানীকৃত কয়লা খালাসে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবে। গত শনিবার পায়রা বন্দর মিলনায়তনে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংকালে তিনি আরো বলেন, পায়রা বন্দরকে ঘিরে কলাপাড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিমান বন্দর, ঢাকা হতে পায়রা পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন, ডকইয়ার্ড ও শীপ ইয়ার্ড, ইকোট্যুরিজম, এলএনজি টার্মিনাল, লিক্যুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য সুবিধা ও অবকাঠামো গড়ে গড়ে তোলার কাজ চলবে বলে নিশ্চিত করেছেন পায়রা সমুদ্র বন্দও চেয়ারম্যান কমডোর মো. জাহাঙ্গীর আলম । রাবনাবাদ চ্যানেলের চারিপাড়ায় নির্মিতব্য টার্মিনালে ২০২৫ সালের মধ্যে পায়রা পোর্ট সরাসরি পণ্য খালাশের কাজ শুরু করবে। সেই লক্ষ্যে তিনটি পরামর্শক কোম্পানি মাস্টার প্লান অনুসারে মূল বন্দরের কাজ শুরু করেছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংএর জন্য ওয়াটার এবং ল্যান্ডে মোট ২২০ একর জমি বেলজিয়ামের জান-দে-নুল কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেয়ার কাজ চলছে। অপরদিকে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ সরকারি পিপিপি অনুসারে ডিজাইন, মূল্যায়নের কাজ চলমান রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং কালে বন্দর কর্তৃপক্ষের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, আগামি সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের টেন্ডার কল করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের বাকি কাজ যৌথসার্ভের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া নিশানবাড়িয়ায় একটি কোল টার্মিনালসহ আরও একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৪৩৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর নাগাদ কোল টার্মিাণাল নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এছাড়াও বহুমুখি কাজে ব্যবহারের জন্য এক দশমিক দুই কিমি দীর্ঘ একটি টার্মিানাল নির্মিত হবে। এটি চান্দুপাড়ায় নির্মিত হবে। মধ্যমেয়াদী এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে এখন পায়রা বন্দরের কর্মকান্ড এগিয়ে চলছ্।ে বন্দরের লোকবল নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমান নাব্যতার চ্যানেলে ২০-২৫ হাজার টন পণ্যবাহী জার্মান শিপিং কোম্পানির জাহাজ পণ্য খালাশের কাজ চালাবে। পরে ক্যাপিট্যাল ড্রেজিংএর পরে ৪০-৫০ হাজার মেট্রিক টন পণ্যবাহী জাহাজ পণ্য খালাশের কাজ শুরু করবে। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে চার হাজার পরিবারের পুনর্বাসন ছাড়াও তাদের কর্মদক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। পায়রা বন্দরের অর্থায়নে উন্নয়ন সংস্থা ডরপ এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত ৬৮৬ জনকে সাতটি ট্রেডের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পটিকে ফ্যাস্ট ট্রাক প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে ১৯টি কম্পোনেন্টে বিভাজন করা হয়। যেখানে দেশের জিটুজি অর্থায়ন এবং সরকারি বেসরকারি অংশিদারিত্ব পিপিপি ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন চলছে। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট সীমিত পরিসরে পায়রা বন্দরের নৌপথে বাণিজ্যিক জাহাজ হতে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে, এ পর্যন্ত বন্দরে ৩২টি পণ্যবাহী জাহাজ পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রায় ৪৭ কেটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এছাড়া বন্দর আয় করেছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ বন্দরের প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা ভবন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ১০০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ভিএইচএফ টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার হাউস, মসজিদ, মাল্টিপারপাস ভবন, স্টাফ ডরমেটারি, সার্ভিস জেটি নির্মাণ ও সংযোগ নদীর ড্রেজিং ও মার্কিং বয়া স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দর পরিচালনায় জলযান পাইলট ভেসেল, হেভি ডিউটি স্পিড বোট, টাগ বোট, বয়া লেইং ভেসেল এবং জরীপ বোট জাহাজ নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডিটেইল মাস্টার প্ল্যান ও অন্যান্য ডকুমেন্টস প্রস্তুতির জন্য বুয়েট ও নেদারল্যান্ডভিত্তিক রয়েল হাসকিং ডিএইচভি কে পরামর্শক নিয়োগ চুড়ান্ত করা হয়েছে। মধ্য মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আরও তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। পিপিপি অর্থায়নে ক্যাপিটাল এন্ড মেইনটিন্যান্স ড্রেজিং ও ড্রাই বাল্ক/কোল টার্মিনাল প্রকল্প এবং ভারতীয় ঋণ সহায়তায় মাল্টিপারপাস টার্মিানাল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা সাড়ে দশ মিটার উন্নীতের লক্ষ্যে পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পটি মন্ত্রীসভা কর্তৃক জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। যেখানে প্রাক্কলিত ব্যয় আট হাজার ২৯৭ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা।
এছাড়া অভন্তরীণ সংযোগ সড়ক ও ১২০০ মিটারের দীর্ঘ জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণে পাঁচ হাজার এক শ’ ৫০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় সংবলিত “পায়রা বন্দরের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করেছে। এছাড়া ২১২৫ কোটি টাকা ব্যয় ড্রাই বাল্ক/কোল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প চুড়ান্ত করা হয়েছে। মোট কথা ২০২৫ সালে একটি পুর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হতে যাচ্ছে পায়রা। ইতোমধ্যে পায়রা বন্দর নির্মান কাজকে ঘিরে পাল্টে যেতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT