আহত মায়ের শিহরে চোখের পানিতে ভাসছে দুই কন্যা আহত মায়ের শিহরে চোখের পানিতে ভাসছে দুই কন্যা - ajkerparibartan.com
আহত মায়ের শিহরে চোখের পানিতে ভাসছে দুই কন্যা

3:11 pm , May 12, 2019

সোহাগ, কলাপাড়া ॥ স্বামীর সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে দেবর সমীর হাওলাদারের হামলায় মারাত্মক আহত বাসন্তী রানী কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বিছানায়। পিতৃহারা এতিম স্বার্ণা ও সমাপ্তি দিন-রাত মায়ের শীয়রে বসে ক্ষতস্থানের দিকে তাকিয়ে এবং মায়ের যন্ত্রা অনুভব করে চোখের জল ঝড়াচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে বসে। বাসন্তী রানীর ওপর দেবরের হামলার ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নীগঞ্জ ইউনিয়নের নিজকাটা গ্রামে গত বুধবার (৮ মে) বিকালে । রবিবার হাসপতালে গিয়ে দেখাগেছে, দেবর সমীর হাওলাদারের হামলার শিকার বাসন্তী রানীর মাথার কাছে বসে মায়ের ক্ষত স্থানের দিকে তাকিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছে দশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী স্বার্ণা। বোনোর চোখের পানি দেখে পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সমাপ্তিও কান্না করছে; কেননা তাদের এই অসহয়ত্বের সময়ে পাশে নেই কেউ। যে আছে সেতো আপন কাকার হাতে আহত হয়ে শয্যাসায়ি ! মা দিবসে সকল ছেলে-মেয়েরা যখন মায়ের কাছে থেকে হেসে খেলে সময় কাটাচ্ছে তখন পিতৃহীন এ দুইবোন হাসপাতালে আহত মায়ের যন্ত্রনায় নিজেরাও শোকে দুঃখে কাতর হয়েগেছে।
কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাসন্তী রানী জানায়, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নিজকাটা গ্রামের এ গৃহবধু স্কুলের গন্ডি পার হতেই বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। বয়স মাত্র ২৮ হলেও স্বামীকে হারিয়েছে একযুগ আগে। তখন ছোট মেয়ে দুই মাসের গর্ভবতী।
নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে দুই মেয়েকে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন কখনও রাস্তার মাটি কাটার শ্রমিক হয়ে, কখনো হোগলা বুনে বাজারে বিক্রি করে। দুই মেয়ের উজ্জল ভবিষতের স্বপ্ন দেখে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের স্বাধ-আহলাদ এবং ভবিষ্যৎ। বড় মেয়ে স্বর্ণা এখন পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দমশ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে সমাপ্তি বাড়ির নিকটস্থ নিজকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।
বাসন্তী রানী আরো জানান, তাদের আতংক এখন দেবর সমির হাওলাদার। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটা দখল নিতে একেরপরএক চক্রান্তের পর এবার তাদের ঘর থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে উঠানে ফেলে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করে তার উপর। রডের আঘাতে মাথায় প্রায় তিন ইঞ্চি ফেঁটে চৌচির হয়ে যায়। মাথা থেকে প্রচন্ড বেড়ে রক্ত বের হলেও তার নির্যাতন থেকে থাকেনি। দুই মেয়ে মায়ের উপর নির্যাতন করতে দেখে কাকাকে বাঁধা দিলেও তাঁদেরও মারধর করে। গত ৮ মে বিকালে এ নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে প্রতিবেশী নারীদের উপরও হামলা চালায় সমির।এ হামলার খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী একজোট হয়ে এগিয়ে আসলে সমির পালিয়ে যায়। ওই রাতেই মা, দুই মেয়ে ও এক প্রতিবেশীকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মায়ের উপর নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য এখনও ভুলতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা। স্বর্ণা জানায়, মায়ের মাথা থেকে যখন দরদর করে রক্ত বের হচ্ছিল তখনও তাকে কিল ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মেরে যাচ্ছে কাকা। সে দৌড়ে গায়ের ওড়না দিয়ে মায়ের মাথার ক্ষতস্থান বাঁধতে গেলে তাকেও মারধর করে। আজ রবিবার সব বন্ধুরা মাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে, ঘরে কতো ভালো মন্দ রান্না হবে। কিন্তু আমারতো যন্ত্রনায় ছটফট করছে। মায়ের চোখের জল আমাদের দুই বোনকে ভুলিয়ে দেয় এ দিবসের কথা। বাবার মুখটা মনে নেই আমার। ছোট বোনতো বাবাকেই দেখেনি। মায়ের ঘামে ভেঁজা কষ্টের শ্রমে তারা দু’মুঠো ভাত খেয়ে লেখাপড়া করছে। কিন্তু আজ যদি মায়ের কিছু হয়ে যায় তখন কে দেখবে তাঁদের। তারা তো এতিম হয়ে যাবেন। তাঁর মাকে যারা মেরেছে তাদের কী শাস্তি হবে না এ প্রশ্ন করে কেঁদে ফেলে তারা। এই দুই বোনের চোখের জল ও আর্তনাদ দেখে হাসপাতালে অন্য রোগীর স্বজনরাও চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।
এ ঘটনায় ৯ মে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দেবর সমির ও পুতুল রানীর নামে মামলা দায়ের করেন বাসন্তী রানী। আদালত কলাপাড়া থানার ওসিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দেন।
এব্যাপারে করাপাড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনা পত্র এখনো পাইনি। পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলাটি গ্রহন করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT