3:08 pm , May 12, 2019

প্রতিবেদক ॥ নগরীর হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী যৌন নিপিড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজের ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে বিদ্যালয়টির নবম ও দশম শ্রেনীর একাধিক শিক্ষার্থীকে তিনি যৌন নিপীড়ন করে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষক নাসিমের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরং তাকে রক্ষায় শনিবার রাতে বিদ্যালয়ে গোপন বৈঠক করেছে কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজন। এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষক নাসিমের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া না হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের সুত্রে জানা গেছে, হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসিম গোরাচাদ দাশ রোডের কালভার্ট সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসার নিচতলায় কয়েকমাস ধরে হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাচ্ছেন। গত সপ্তাহে বিকেলে কোচিং শেষ হলে বিদ্যালয়টির দশম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীকে পড়ার অজুহাতে কৌশলে কোচিং সেন্টারে রেখে দেন। সকলে চলে গেলে ওই শিক্ষার্থীর স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করেন শিক্ষক নাসিম। এ সময় শিক্ষার্থী কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে ছেড়ে দেন নাসিম। ওই শিক্ষার্থীসহ সহপাঠি ও তাদের অভিভাবকরা জানান, দুঃশ্চরিত্র শিক্ষক নাসিম একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে এ ধরনের শ্লীলতাহানী করেছে। প্রায়ই অশ্লীল ও কু-প্রস্তাব দেয়াসহ জোর পূর্বক কোচিং করানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনা বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে তারা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ স্বরুপ নাসিম স্যার থেকে সাবধান এমন লেখা লিখে রেখেছে। তবে শনিবার রাতে এ ধরনের লেখা নিজেই মুছে ফেলেন শিক্ষক নাসিম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক ও তার শিক্ষার্থী সন্তান জানান, কয়েকদিন পূর্বে নবম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীতে প্রমোশন দেয়ার কথা বলে এক শিক্ষার্থীকে বিকেলে কোচিং সেন্টারে আসতে বলেন নাসিম। ঐ কোচিংয়ে তার একটি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে শিক্ষার্থীকে জানানো হয়। ঐ শিক্ষার্থী কোচিংয়ে গিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। এরপর নাসিম তাকে কু প্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে প্রমোশন দেয়া হবে না বলে জানায়। এ ঘটনা ঐ শিক্ষার্থী তার সহপাঠিদের সাথে আলোচনা করলে অন্যান্য ভুক্তভোগীরা তাদের অভিভাবকদের জানান। এরপর প্রধান শিক্ষক মোঃ ফখরুজ্জামানকে জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করলে শিক্ষক নাসিম কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে জোর করে তার পক্ষে একটি পাল্টা লিখিত তৈরী করানোর চেষ্টা করেন। এছাড়াও নাসিমের পক্ষে ঘটনা ধাপাচাপা দিতে তৎপরতা শুরু করেছে একটি মহল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিও বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে তোলপার চললেও বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি অনেকটা আড়ালে চলে যায়। এরই মধ্যে শনিবার রাতে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসিম সহ অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বৈঠক করে এ ঘটনা সমাধানের নামে ভুক্তোভোগীদের ম্যানেজের মিশন শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফখরুজ্জামান প্রথমে বলেন, আমি তো কিছু জানি না। এররপর তার নিকট অভিযোগ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আসলে একটা অভিযোগ আমার কাছে বলা হয়েছে। আমি তাদেরকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছি এবং মহিলা এ্যাসিষ্টেন্ট হেডমাষ্টারকে সকল ঘটনা বলতে বলেছি।
এ বিষয়ে বরিশাল মহিলা পরিষদের নেত্রী প্রতিমা সরকার বলেন, এ ধরনের ধটনায় যারা ঘটায় এবং যে সকল ব্যক্তি তাদের সহায়তা করে প্রত্যেকের সমান সাস্তি হওয়া উচিত। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। যে সকল শিক্ষার্থী এ ধরনের ঘটনার ভূক্তভোগী প্রয়োজনে তাদের সকল ধরনের আইনী সহায়তা করবে মহিলা পরিষদ। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।