12:30 am , May 11, 2019
সাঈদ পান্থ ॥ নগরীর ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল ক্রমশই সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিশেষ করে মাথার ওপরের এই ঝুলন্ত তার থেকে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি নগরীর বিবির পুকুর পাড় এলাকায় ঝুলন্ত জটাতার থেকে আগুনের সূত্রপাত নগরবাসীকে বেশিমাত্রায় উৎকণ্ঠিত করেছে। ফলে পরবর্তীতে তারের জঞ্জাল থেকে আরও বড় ধরণের অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি প্রাণহানির শঙ্কাও করা হচ্ছে। অথচ এই বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন ওয়াকিবহাল থাকলেও প্রতিরোধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে দিন দিন জটাতারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের তারের জঞ্জালের কারণে নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবনের অংশবিশেষ আড়ালে পড়ছে। এমনকি সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও ঢেকে গেছে। বিশেষ করে নগরীর সদর রোড, নতুন বাজার, নথুল্লাবাদ, বাজার রোড, গির্জা মহল্লা, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ ও চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার চিত্র এমনটি। অনেক স্থানে আবার তারের ভারে বৈদ্যুতিক খুঁটি বেকে গেছে। তাছাড়া কোথাও কোথাও তার ছিড়ে মাটিতেও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এমন বাস্তবতায় পর্যবেক্ষক মহল বলছে, যত্রতত্র ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল নগরীর সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আতঙ্কে ভুগছে। কারণ কখনও কখনও ছিড়ে মাটিতে পড়ে থাকছে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
অবশ্য বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সও ঝুলন্ত এই জটাতার থেকে বড় ধরণের অগ্নিঝুঁকির আভাস দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ১৪ মার্চ বিবির পুকুর পাড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে যে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে সেটি ঝুলন্ত তার থেকে। ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, এই বিষয়টি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে দুর্ঘটনা রোধে তারের জঞ্জাল অপসারণেও উদ্যোগ নিতে বলা হয়। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারদের ঝুলন্ত তার শুধুমাত্র নগরীর সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, নানা ধরনের দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী। এসব তারের জঞ্জাল বিদ্যুতের খুঁটিগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। যত্রতত্র এসব তার ছিড়ে পড়ে থাকছে। ভবনের অগ্নিকান্ডের জন্যও এসব কেবল দায়ী। আবার দেখা গেছে এসব ঝুলন্ত তারের জন্য ভবনের অগ্নিকান্ডের সময় উদ্ধার কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। এই তারের জঞ্জাল অপসারণে তাদের সংগঠন খুব শিগগিরই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডরদের সংগঠনকে লিখিত আবেদন দেবে বলে জানান তিনি।
অবশ্য খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে বরিশাল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডরদের কোন সংগঠন নেই। ফলে যে যার মত করে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঝুঁকির বিষয়টি একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মালিক নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্বীকার করলেও বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে আসছি। এমনকি বছর শেষে একটি বড় অংশের রাজস্বও দিচ্ছি। সরকার বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করে দেওয়ায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে তার টাঙানো বাধ্য হচ্ছি। তাছাড়া এই বিষয়ে সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কোন দিকনির্দেশনা দেয়নি। এমনকি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষও রয়েছে নিশ্চুপ। এব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলছেন, তারের জঞ্জাল থেকে বিবির পুকুর পাড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন ধরার পরে বিষয়টি নিয়ে তাদের ভাবনা রয়েছে। অবশ্য ইতিমধ্যে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তারের জঞ্জাল অপসারণে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মালিকদের নিয়ে বসে জটাতার অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।