3:22 pm , May 9, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নিজের ও মায়ের মুখের আহার সংগ্রহে সারাদিন অন্যের দোকানে নিরলস কাজ করেও এবারের এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বরিশালের গৌরনদীর হতদরিদ্র ও অদম্য মেধাবী ছাত্র মোঃ বুলবুল হোসেন। বেঁচে থাকতে সাড়াক্ষন যাকে চরম দারিদ্রতার সাথে লড়াই করতে হচ্ছে, সেই ছেলেটির এ অভাবনীয় সাফল্যে উচ্ছাসিত তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ চাকরিদাতা মোবাইল ফোন দোকানের মালিক, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরাও। বুলবুল ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হয়ে এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার স্বপ্ন দেখছে। তবে হতদরিদ্র পরিবারের অক্ষম মা-বাবার সন্তান বুলবুল এর উচ্চ শিক্ষা নিয়ে স্থানীয়দের মনে রয়েছে নানা শংকা। তাদের জিজ্ঞাসা, শেষ পর্যন্ত বুলবুল পারবেতো তার লক্ষে পৌছাতে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড় দুলালী গ্রামের ভ্যান রিক্সা চালক সাবেক ইউপি সদস্য হতদরিদ্র মোঃ খলিলুর রহমান সরদারের সন্তান অদম্য মেধাবী ছাত্র মোঃ বুলবুল হোসেন। তার মা আলেয়া বেগম উপজেলা সদরের সাবেক নাহার সিনেমা ও বর্তমান ওয়েভ সিনেপ্লেক্স-এর সামনে একটি লেডিস টেইলার্স চালাতেন। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় খলিলুর রহমান সরদারের। ওই পরিচয় থেকে ঘনিষ্টতার এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করেন। কিন্তু স্বামীর বাড়িতে ঠাই হয়নি আলেয়া বেগমের। স্বামীকে নিয়ে থাকতেন গৌরনদী ওয়েভ সিনেপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ভাড়ার ঝুপড়ি ঘরে। এ ঘরে জন্ম নেয়া মেধাবী বুলবুল উপজেলা সদরের সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বুলবুল জানায়, তার বাবা খলিলুর রহমান সরদার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন আর কোন ভাড়ি কাজ করতে পারেন না। ফলে এখন সে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগীদের সিরিয়াল লিখে সামান্য কিছু রোজগার করেন। তা দিয়ে দুই সংসার চালাতে পারেন না। মা আলেয়া বেগমও ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার সহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে তিনিও কোন প্রকার কাজ করতে পারেন না। এ কারনে নবম শ্রেনীতে ওঠার পর অভাবের তাড়নায় সে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ মান্না’র মোবাইল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান “মান্না স্মার্ট গ্যালারী”র সেলসম্যান পদে চাকুরি নেয়। প্রতিদিন সকাল ৯টায় দোকানের সেলসম্যানের কাজ শুরু করে রাত ৯টায় কাজ শেষ করে। মাঝখানে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২ ঘন্টার ছুটি পায় সে। ওই সময়টুকু প্রাইভেট পড়া ও দুপুরের খাওয়ার কাজে ব্যয় হয়। প্রাইভেট পড়া সম্পর্কে বুলবুল জানায়, কোন শিক্ষককে বেতন দিয়ে সে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তার মেধার কথা জানতে পেরে সরকারি গৌরনদী কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ইউনুস আলী প্রতি দরদি হয়ে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ১Ñ২ঘন্টা তাকে বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়াতেন। এ ছাড়া রাত ৯ টার পরে বাসায় ফিরে ৩Ñ৪ ঘন্টা পড়াশুনা ও সকালে ঘুম থেকে জেগেও ১Ñ২ ঘন্টা পড়াশুনা করে এ সাফল্য অর্জন করেছে সে। বুলবুল অষ্টম শ্রেনীতেও একই বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সে ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। মেধাবী বুলবুলের এ স্বপ্ন পূরনে প্রয়োজন বিত্তবানদের সহযোগীতা। সে সহযোগীতা টুকু বুলবুল পাবে কি?