বরিশালে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ হয়নি ! উচ্ছেদ অভিযানের কোন উদ্দ্যোগ নেই বরিশালে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ হয়নি ! উচ্ছেদ অভিযানের কোন উদ্দ্যোগ নেই - ajkerparibartan.com
বরিশালে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ হয়নি ! উচ্ছেদ অভিযানের কোন উদ্দ্যোগ নেই

12:30 am , May 10, 2019

মর্তুজা জুয়েল ॥ সীমানা নির্ধারন,যৌথ জরিপ,জনবল সংকটসহ বিভিন্ন অজুহাতে বরিশালে অবৈধ নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছেনা। বছরের পর বছর এভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে অবৈধ দখলদারা এখন স্থায়ী ভাবে নদী দখল ও ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা তৈরী করছে। সারাদেশে নদী দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসন সোচ্চার হলেও বরিশালে বিআইডব্লিইটিএ,পানি উন্নয়নে বোর্ড কিংবা জেলা প্রশাসনের এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই। অনুসন্ধানে জানাগেছে, পেশী শক্তির প্রভাব আর প্রভাবশালীদের বাধার মুখে বরিশালের ৫’শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারছেনা বরিশাল বিআইডব্লিইটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ দুই দপ্তরের জমিসহ সরকারী খাস জমি ও কির্তনখোলা নদী দখল করে এসকল অবৈধ স্থাপনা ব্যাবহার করছে দখলকারীরা । উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী একাধিকবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে ফিরে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সহযোগীতা না পওয়ায় পরবর্তীতে আর বিষয়গুলো সুষ্ঠভাবে সমাধান করা হয়নি। অপ্রিতীকর ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় সরকারী কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকা পালন করছে । আর এ সুযোগে বছরের পর বছর দখলকারীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। খোজ নিয়ে জানাগেছে ,বরিশালের কীর্তনখোলা নদী দখল করে গড়ে ওঠা রসূলপুর বস্তিতে অবৈধভাবে বসবাস করছে প্রায় ১২’শ পরিবার। এছাড়া বান্দ রোড, পোর্ট রোড, খেয়াঘাট ও গোডাউন রোড, চাদমারি, ফিশারী ঘাট এলাকাসহ বিআইডব্লিউটিএ এর জমিতে রয়েছে আরো ২ শতাধিক অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা। এসকল অবৈধ স্থাপনার মধ্যে ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২১১ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামে বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় প্রশাসন। এ সময়ে একাধিকবার ম্যাজিষ্ট্রেট অবরুদ্ধ হওয়া সহ দখলকারীদের বাধার মুখে প্রশাসন পিছু হটে। তবে দখলকারীদের ছিল দাবী তাদের পূনর্বাসন না করে এবং প্রশাসন নিয়ম অনুযায়ী উচ্ছেদ না করে তাদের মারধর করা হয়েছে। ঐ সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে বরিশালে এসে বিআইডব্লিইটিএ এর ঢাকা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, একটি মহলের উষ্কানীতে অবৈধ স্থাপনা অপসারন করা যাচ্ছেনা। এনিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পরবর্তীতে কীর্তনখোলা নদী তীরে স্থায়ী বাধ দিয়ে নদী অপদখলমুক্ত করা হবে বলে জানায় বিআইডব্লিইটিএ এর প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু পরে আর এ বিষয়গুলো সামনে এগোয়নি। এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কীর্তনখোলা নদীতীরে ৫১৯ টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। এ সংগঠনের দাবী অবৈধভাবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসকল স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি নগরী ঘুরে দেখা গেছে বরিশালে প্রকাশ্যে চলছে নদী ভরাট। বালু ,মাটি ও কংক্রিটের তৈরী ব্লক ফেলে নদী ভরাট করছে প্রভাবশালীরা। এছাড়া বরিশালে নদীর তীর থেকে শুরু করে জেগে ওঠা চর এলাকায় তৈরী করা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। নদী ভরাট করে কৃত্রিম চরের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হচ্ছে চরের পরিমাণ। বছরের পর বছর ধরে এভাবে কৃত্রিম চর বৃদ্ধি করা হলেও প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের ক্ষমতার কাছে অসহায় স্থানীয় প্রশাসন। নদী ভরাট বন্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে না পারায় ওই সকল চরের জমিতে ভূমিদস্যুরা গড়ে তুলেছেন কারখানা, ইটভাটা , বহুতল ভবন, মুরগীর ফার্ম এবং ঘর তুলে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্লট তৈরী করে করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। বরিশাল নগরীকে ঘিরে রাখা কীর্তনখোলা নদীর তীরে নগরীর প্রান্তে আশির দশকে ১০ একর জমি নিয়ে জেগে ওঠে রসুলপুর চর। এরপর যে দল ক্ষমতায় এসেছে সে দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও সমর্থক চর দখল করে চর সংলগ্ন নদী ভরাট করে সৃষ্টি করেছে কৃত্রিম চর। ১০ একর চর এখন ৫০ একরে পরিণত হয়েছে। ভূমিহীন কৃষক নেতা হারুন ভান্ডারী এবং নদী তীর ও চরের বাসিন্দরা জানান, সরকারী জমিতে বহুতল ভবন থেকে শুরু করে ছোট ছোট ঘর করে তা ভাড়া দেয়া হয়েছে। এমনকি দলিলমূলে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানকার জমিও। একইভাবে কীর্তনখোলা নদীর তীরে নৌ বন্দর, পোর্ট রোড, কেডিসি, চাদমারি, ভাডারখাল, বেলতলা, মোহাম্মদপুর, দপদপিয়া, কর্ণকাঠী , পলাশপুর , খোন্নারের চর এবং চর বাড়িয়ার এলাকায় নদী ভরাট করে দখল করে নিচ্ছে অবৈধ দখলদাররা । নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সাম্প্রতি প্রকাশ্যে কীর্তনখোলা নদীর দপদপিয়া পয়েন্টে বালু ফেলে নদী ভরাট করা হচ্ছে। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির বরিশাল বিভাগীয় (বেলা) সমস্বয়কারী লিংকন বায়েন জানান, ব্যাক্তি পর্যায়ে নদী দখলের পাশাপাশি ক্ষোদ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন আইন অমান্য করে কীর্তনখোলা নদীর তীর থেকে ৫০ ফুটেরও বেশী অভ্যন্তরে তৈরী করেছে বাধ। নদীর অভ্যন্তরে বাধ দেয়ার ফলে নদী সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ এবং বিআইডব্লিটিএ এর উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু জানান, নদী তীরে অবৈধ স্থাপনা করায় নদীর গতি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে নদী তীরে পলিজমা পরে নদী ভরাট হচ্ছে। নাব্যতা সংকট তৈরী হয়ে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
যৌথ জরিপ করে সীমনা নির্ধারন করার পরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার কথা জানান তারা । সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা এবং চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরকে অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও বরিশালে চলছে সরাসরি নদী ভরাট ও দখলের কার্যক্রম । দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও প্রশাসন থেকে তেমন কার্যকরী কোন উদ্যোগে গ্রহন করা হয়নি। আর মাঝে মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও অদৃশ্য কারনে তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । নদী বেষ্টিত জেলা হলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বরিশালে নদী দখল ও উচ্ছেদের প্রতিবেদন এখোনোও প্রকাশ হয়নি ।গত ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে জেলা প্রশাসককে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশনা থাকলেও বরিশালে দখল উচ্ছেদে কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি । তবে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান,দখলের তালিকা তৈরীর জন্য সকল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এজন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছড়া নদী রক্ষায় পৃথক দপ্তর, জনবল নিয়োগ,অর্থিক বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT