12:30 am , May 10, 2019
রুবেল ॥ ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের লোমহর্সক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। এজন্য আরো আধুনিকায়ন করা হবে দেশের একমাত্র ও অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরীত নগরীর ওয়াপদা টর্চার সেল ও বাংকারগুলো। ৭১’র নির্মম নির্যাতনের অবয়ব ফিরিয়ে আনা হবে স্মৃতিগুলোতে। বধ্যভূমির মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও টর্চার সেলে থাকবে মা-বোনদের নির্মম নির্যাতনের স্মৃতি ও নানা ইতিহাস। যা দেখে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাসকে খুঁজে পাবে। কথাগুলো বলেছেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার বধ্যভূমির নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও টর্চার সেল নিয়ে ডকুমেন্টারী তৈরীর কাজ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন মেয়র। এর আগে দুপুর দেড়টায় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে নগরীর বান্দ রোডস্থ ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কলোনীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরীত বধ্যভূমি পরিদর্শনে যান। এসময় তার সাথে ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি ও নাট্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল প্রমুখ। বধ্যভূমির টর্চার সেল, বাংকার, ব্রিজ পরিদর্শন শেষে মেয়র বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ বছর অরক্ষিত ছিলো নগরীর বধ্যভূমি। বর্তমান সরকারের ইচ্ছাতেই এটি সংরক্ষণ হয়েছে। সংরক্ষণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু ৭১’র যুদ্ধে মা-বোন সহ সাধারণ মানুষের ওপর যে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ হয়েছে সেই ইতিহাস ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। বধ্যভূমি সংরক্ষনের পরে এটি একটি পার্ক বা পিকনিক স্পটে পরিনত হয়েছে। মেয়র বলেন, সাবেক মেয়র এর আমলে বধ্যভূমি সংরক্ষণ কাজ হয়েছে। কিন্তু সেই কাজ সঠিকভাবে হয়নি। তাই ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়া হয়েছে। যদিও এখানে ঠিকাদারের কোন দোষ দেখা যাচ্ছে না। কেননা এ প্রকল্পটাই ছিলো বধ্যভূমির সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। সেভাবে করেই একটি পার্ক তৈরী করা হয়েছে। বধ্যভূমি ও ৭১’র যুদ্ধ চলাকালে যে ব্রিজটিতে দাড় করিয়ে নিরিহ মানুষদের ব্রাস ফায়ার করা হয়েছিলো সেই ব্রিজটিকেও রঙিন রং দিয়ে সাজানো হয়েছে। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের অবয়ব হারিয়ে ফেলেছে। তাই বধ্যভূমিকে নতুন করে আধুনিকায়ন করতে আমরা কাজ শুরু করেছি।
মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও মুরব্বিদের সাথে নিয়ে আমি ঢাকায় বধ্যভূমির বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর ও ঢাকা মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরের সাথে কথা বলেছি। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে বরিশাল বধ্যভূমি আধুনিকায়নের জন্য ডিজাইন করে দিবেন। সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বরিশাল বধ্যভূমি সংস্কার ও জাদুঘর বাস্তবায়ন করবেন। এরই মধ্যে তারা বরিশালে এসে বধ্যভূমি পরিদর্শন করে গেছেন। তাদের এই প্রকল্পটি অনেক পছন্দ হয়েছে।
মেয়র বলেন, বধ্যভূমির পুরোটাই আধুনিকায়ন করা হবে। সবার আগে ওয়াপদা কলোনীর ২৫ নম্বর বিল্ডিং যেটা মুক্তিযুদ্ধকালিন মা-বোনদের ধরে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছি সেই টর্চার লেস, একটি বাংকার ও ব্রিজটিতে মুক্তিযুদ্ধের অবয়ব ফিরিয়ে আনা হবে। এমনকি আগামী ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্তি দিবসে টর্চার সেল, বাংকার ও ব্রিজটির উদ্বোধন করা হবে। টর্চার সেল ও জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে। তাছাড়া ওয়াপদার টর্চার সেলে যুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার বা প্রান হারিয়েছে এমন কোন নারী বা ব্যক্তির আত্বীয় স্বজন থাকলে তারাও তাদের কাছে সংরক্ষিত স্মৃতি এই যাদুঘরে সংরক্ষণ করতে পারবে।
বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্পের নতুন এই কাজে ব্যয়ের ব্যাপারে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, এর ব্যয় কি হবে সেটা এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত নই। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে আমাদের বাজেট দেয়ার পরে খরচের বিষয়টি বোঝা যাবে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সকলের অভিভাবক আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি’র সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ^স্থ করেছেন বধ্যভূমি ও মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের বিষয়ে। তাছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তাও নেয়া হবে বধ্যভূমির উন্নয়নে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং নাট্যজন সৈয়দ দুলাল বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এটি বিনোদনের একটি পার্কে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ উদ্যোগ না নিলে বধ্যভূমি তথাগত বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেই থেকে যেত।
তারা বলেন, পূর্বে যারা এই বধ্যভূমি সংরক্ষণে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই। যার কারনে এখানে মুক্তিযুদ্ধের নির্মমতার অবয়ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিধায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বধ্যভূমি’র উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসতে ঝাপিয়ে পড়েছেন। এজন্য তিনি সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।