3:25 pm , May 7, 2019
প্রতিবেদক ॥ ফৌজদারী মামলার তথ্য গোপন করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবৈধভাবে চাকুরী নিয়েছেন ওষুধ চুরির মামলায় অভিযুক্ত সেফালী বেগমে ছেলে আল মামুন মুছা ওরফে গালকাটা মামুন। শুধু তাই নয়, একই মামলায় চার্জশীট ভুক্ত আসামী হওয়ার পরেও চাকুরীতে বহাল রয়েছে সে। এমনকি যোগদানের শেষ তারিখ পর্যন্ত জেলে থাকা গালকাটা মামুন তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের সহযোগিতায় নিজে অনুপস্থিত থেকেই হাসপাতালে যোগদান করে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়েই মামুনের যোগদান ও আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তাকে চাকুরীতে বহাল রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দেশব্যাপী আলোচিত ২০১৫ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিয়োগ বানিজ্য। অবৈধ এই নিয়োগ বানিজ্য আইনের ফাক ফোকড় দিয়ে বৈধতা পেয়ে যান দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। যোগদানের সুযোগ পেয়ে যান দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। অবৈধ উপায়ে চাকুরী পাওয়া কর্মচারীদের মধ্যে একজন আল মামুন মুছা ওরফে গালকাটা মামুন। দাড়োয়ান পদে চাকুরী হয় তার। পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের মো. মোখলেছুর রহমানের ছেলে মামুনের শ^শুর ও মামা বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে। ওই অঞ্চলে ডাকাত সদস্য হিসেবেই পরিচিত সে। ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকাল ৫ টার দিকে মঠবাড়িয়ার তুষখালী লঞ্চঘাট এলাকায় মামুন তার মামা ও স্বজনদের সাথে মিলে ধানিশাফা ইউনিয়নের ৪নংওয়ার্ডের মেম্বর (সদস্য) ইদ্রিস তালুকদারের উপর হামলা করে। এসময় মামুন লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ইউপি সদস্য ইদ্রিস এর পা ভেঙে দেয়। এই ঘটনায় মেম্বারের স্ত্রী সেলিমা বেগম বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার ৫ নম্বর এজাহার নামিয় আসামী গালকাটা মামুন সহ ৩ জনকে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারী গ্রেফতার করে পুলিশ। এর ফলে ১৬ জানুয়ারী থেকে কারাগারে ছিলো মামুন ওরফে গালকাটা মামুন। জেলে থাকাবস্থাতেই শেবাচিম হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের যোগদান গ্রহন শুরু হয়। কর্মচারীদের যোগদানের জন্য ২৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। যার পুরো সময়টাই জেলে থাকতে হয় গালকাটা মামুনকে। যে কারনে চাকুরী হলেও নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেনি মামুন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে যোগদানের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন পরে মামুনের যোগদান নেয়া হয়। তাও পূর্বের তারিখ দেখিয়ে। যোগদান গ্রহনের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে জের থেকে বের হয়ে আসে সে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুল কাদের মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে গালকাটা মামুনকে অবৈধভাবে যোগদান করিয়েছে।
আইন ঘেটে জানাগেছে, সরকারি চাকুরীজীবি কোন ব্যক্তি ফৌজদারী মামলার চার্জশীট ভুক্ত আসামী হলে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় রাখতে হবে। কিন্তু গালকাটা মামুনের ক্ষেত্রে সেই নিয়মও ধরাশায়ী। ইউপি সদস্যকে হত্যা চেষ্টা মামলার এজারভুক্ত আসামী হলেও সে মামুন চাকুরীতে বহাল রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনিয়ম করার পরেও হাসপাতাল পরিচালকের প্রত্যক্ষ মদদে চাকুরী বহাল রয়েছে মামুন। এসব ছাড়াও মামুনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চাকুরীতে প্রবেশের পূর্বে সরকারি ওষুধসহ পুলিশের হাতে আটক হওয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন পরিবর্তনকে জানান, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়েই মামুনকে চাকুরীতে যোগদান নেয়া হয়েছে। তাছাড়া চাকুরীতে বহাল থাকার বিষয়েও আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। যে কারনে ওই মামলার সাজা না হওয়া পর্যন্ত মামুন চাকুরীতে বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।