3:42 pm , May 3, 2019

মর্তুজা জুয়েল ॥ বড় ধরনের কোন ক্ষতি কিংবা জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে ঘূর্নিঝড় ফনি। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত কিংবা আজ ভোরে ঘূর্নিঝড়টি খূলনা ও সাতক্ষীরা উপকূলে দুর্বল অবস্থায় আঘাত করবে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে। তবে এর প্রভাবে বরিশালে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত ও দমকা হওয়া বয়ে যেতে পারে। তবে ঘূর্নিঝড় ফনীকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী সকলের মধ্যে তীব্র আতংক বিরাজ করলেও আশংকা অনুযায়ী তেমন কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়বেনা দক্ষিনাঞ্চলবাসী, এমনটিই জানিয়েছেন বরিশাল আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম। গতকাল রাত ৮ টা পর্যন্ত এ সংবাদ তৈরীর সময় উপকূলীয় এলাকা সহ দক্ষিনাঞ্চলের কোথাও কোন প্রানহানী কিংবা গুরুতর দূর্যোগের সংবাদ পাওয়া যায়নি। এদিকে ঘূর্নিঝড় ফনির প্রভাবে বরিশালে দুপুর ১ টার পর থেকে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। এরপর দুপুর ৩ টার মধ্যে দুই দফা গুড়ি বৃষ্টি পর স্বল্প সময় মাঝারি বর্ষন হয়। বিকেল সারে ৩ টা পর্যন্ত ১৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া দপ্তর। এরআগে সকাল থেকেই বরিশালে দমকা বাতাস ও নদীতে পানি কিছুটা বৃদ্ধি পায়। অধিক নিরাপত্তার জন্য ছোট নৌযানগুলো নৌ বন্দর থেকে ডকইয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান নেয়ার জন্য মাইকিং করছে ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি বিভাগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দুপুর দুইটার দিকে বরিশাল নদী বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় বৃষ্টি উপক্ষো করে সকলের খোজ খবর নেন তিনি। সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যেগে দূর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছি। ইতিমধ্যেই সিটি কর্পোরেশনের একটি দূর্যোগ প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। যেহেতু এটি একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ তাই সবাই সঠিক নিয়ম মেনে চললে নিরাপদে থাকতে পারবেন। দূর্যোগের কারনে কোন ধরনের বিরুপ পরিস্থিতি তৈরী হলে সেখানে যে কোন প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশন সকলের পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। এদিকে দুপুর ১২ টায় জেলা প্রশাসক কার্য্যালয়ের সভাকক্ষে দূর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, ঝুকিপূর্ন এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসাকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে যথাসময়ে প্রবেশ করলে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটার আশংকা থাকেনা। অন্যথায় নিজ ঘরে ঘর ও গাছ উপড়ে অনেকেরই পূর্বে প্রানহানী ঘটেছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথকভাবে অবস্থান, সৌচাগার, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও খাবার মজুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে দূর্যোগকালীন সময়ে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীও সকল ধরনের সহযোগিতা করবে। ইতিমধ্যে নৌ বাহিনীর একটি দল বরিশালে অবস্থান করছে।
এদিকে গতকাল বিকেল ৩ টার মধ্যেই জেলার মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, গৌরনদী, আগৈলঝারা উপজেলার নদী তীর ও ঝুকিপূর্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সহযোগিতা করেন।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম ও নৌ বন্দরের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু জানান, ঘূর্নিঝড় ফনির প্রভাবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৪/৫ ফুট নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পানির স্রোত কিছুটা দ্রুততর হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষা ও জনসাধারনের চলাচলের জন্য দুপুর ৩ টা পর্যন্ত খেয়া পারাপার চালু রাখলেও ৩ টার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হরিদাশ শিকারী জানান, জেলার এখন মোট ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এ ধানের অর্ধেক ইতিমধ্যে পেকে গেছে। পানি বৃদ্ধির পরিমান ৪/৫ ফুট হলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তবে তীব্র বৃষ্টিপাত হলে ধানের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান জানান, জেলার ১০ উপজেলায় ৮০ হাজার মৎস্য খামার রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং জলোচ্ছ্বাস হলে পানিতে কোটি কোটি টাকার মাছ বের হয়ে যেতে পারে।
ঘু?র্ণিঝড় ফ?নি মোকা?বেলায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সকল কর্মকর্তাদের আরো দুই দিন পূর্বে থেকেই ছুটি বাতিলসহ প্রস্তুত রাখা হ?য়ে?ছে ২৫ হাজার ৫ জন ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর স্বেচ্ছা?সেবক। সরকা?রি ও বেসরকা?রি বি?ভিন্ন বি?ভিন্ন দপ্তরের উদ্দ্যোগে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খোলা হয়েছে জরুরী নিয়ন্ত্রন কক্ষজেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, ইউনিয়ন পর্যা?য়ে ২৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হ?য়ে?ছে। সেখা?নে ১ লাখ ২৫ হাজার লো?কের আশ্রয়ের ব্যবস্থা র?য়ে?ছে। ১০ উপ?জেলার ৮২ টি ইউনিয়?নে ১টি ক?রে মে?ডি?কেল টিম গঠন করা হ?য়ে?ছে। ২৮১টি ক?মিউনি?টি ক্লি?নিক, ৯টি উপ?জেলা স্বাস্থ্য কম?প্লেক্স, ব?রিশাল সদর হাসপাতাল ও শের ই বাংলা মে?ডি?কেল ক?লেজ হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, সড়ক ও জনপথ, ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত রয়ে?ছে। রেড ক্রি?সেন্টের ৪০০ স্বেচ্ছা?সেবক?কে প্রস্তুত রাখা হ?য়ে?ছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন বরাদ্দ করা হয়েছে।