3:24 pm , April 30, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ববি সংবাদদাতা ॥ গত এক মাসেরও বেশি দিন ধরে অচল থাকার পর গতকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) সচল হয়েছে। গত ৩৬ দিন ধরে আন্দোলনে থাকা ববি’র শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার মেতে ছিল আনন্দ উল্লাসে। নিজেদের রং দিয়ে রাঙিয়ে বিজয়ের মিছিলও করেছে তারা। তাদের সাথে একাত্ম হয়ে ছিল ববি’র শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। তাদের এ আনন্দ উল্লাসে পরিপূর্নতা এনে দিয়েছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। অচল হয়ে থাকা ববিকে সচলের শুরুও করেছেন মেয়র। তারুন্যর অহংকার ও বিসিসির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ববি ক্যাম্পাসে গিয়ে খুলে দিয়েছেন প্রধান গেটের তালা। এরপর উৎসবে মেতে থাকা ববির সকলকে শান্তিপূর্ন আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় করায় ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের সংকট নিরসন করেছেন। আমরা আশা করছি, তিনি শীঘ্রই আমাদের মাঝে নতুন ভিসি নিয়োগ দিবেন।’ ববির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক আন্দোলন করেছে। ‘আমরা শুরু থেকেই আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন দিয়ে এসেছি। আন্দোলনের মধ্যে কোন ভাংচুর এবং নেতিবাচক কর্মকান্ড করা হয়নি। ‘দীর্ঘ ৩৫ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে তোমরা আন্দোলন করেছ। অবশেষে তোমরা সফল হয়েছ। তোমাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তোমরা একটি অহিংস আন্দোলন করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছ।’
এ সময় মেয়র আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন প্রয়োজনে আমি সর্বাতœক সহযোগিতা করবো। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহনে কোন ধরনের অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সকলের বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ব বিদ্যালয় বরিশালবাসীর অহংকার। এখানে কোন অনিয়ম থাকতে পারেনা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার সময় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছান। তখন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে তিনি সকলকে নিয়ে প্রধান গেটের তালা খুলে দেন। পরে তিনি শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে কথা বলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ছাত্র শিক্ষক সবাইকে সহযোগিতার আহবান করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এবং ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইকবাল আক্তার, সিনিয়র আইনজীবি এ্যাড. এসএম ইকবাল, সাংষ্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিজয় মিছিল করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক হয়ে ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা রং মেখে আনন্দ ও উল্লাস করে।
উল্লেখ্য ,গত ২৬ মার্চ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রন না দিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান করে। সেখানে ভিসি শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকারের বাচ্চা বলে অভিহিত করে। এরপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়াসহ ৫ দফা দাবীতে গত ২৭ মার্চ থেকে বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্টার ড.হাসানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারনে ভিসির নিজস্ব ক্ষমতাবলে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়। একইসাথে সকল আবাসিক শিক্ষার্থীদেরকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, রেজিষ্টার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেনি। তবে হল ত্যাগের নির্দেশ না মেনে হলে অবস্থান করে ভিসি বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখে শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভিসি এসএম ইমামুল হক অনাকাঙ্খিত ঘটনা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। তবুও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এরপর সড়ক অবরোধ, রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন, প্রতিবাদী সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ড, মশাল মিছিল,স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচ পালন করে। সর্বশেষ তিনদিন অনশন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে আচার্য রাষ্ট্রপতির আদেশে ভিসিকে কর্মকালীন সময় পর্যন্ত ছুটিতে পাঠানো হয়।