3:06 pm , April 8, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষা প্রকল্পের কাজ বিলম্বে শুরুর পর বন্ধ রয়েছে। মজুরী পরিশোধ না করায় কাজে যোগ দিচ্ছে না শ্রমিকরা। তাই বন্ধ রয়েছে কীর্তনখোলা নদীর প্রতিক্ষীতি চরবাড়িয়া এলাকার ভাঙ্গন রোধে গৃহীত প্রকল্পের কাজ। দীর্ঘ সময়ক্ষেপনের পর গত মাসে শুরু হয়। গতকাল সরেজমিনে চরবাড়িয়ায় গিয়ে দেখা যায় সেখানের কর্মরত প্রায় ৩৫/৪০ জন শ্রমিক ৮ দিনের বকেয়া মজুরী না পেয়ে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। ভোলা ও চাঁদপুর থেকে থেকে আসা ওই সকল শ্রমিকরা জানান, শাহজাহান জমাদ্দার নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তারা এখানে কাজ করছেন। ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে গত ৮ দিন ধরে দৈনিক মজুরী না দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত খোড়াকির টাকাও পরিশোধ করা হচ্ছে না। কোন শ্রমিকের কাছে খাওয়ার টাকা পর্যন্ত নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করেছি। নৌ বাহিনীর অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড’র বাস্তবায়নাধীন ২০৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়ন নিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানরীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জুলফিকার আলী হাওলাদার জানান, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা এ বিষয়ে একাধিকবার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ডকে চিঠি দিয়েছি। খোজ নিয়ে জানাগেছে, প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ১% কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে ঠিকাদারি কাজ ৪ বার হাত বদল হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই জন সাব ঠিকাদার পরিবর্তনও করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত থুলনা শিপইয়ার্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মূল ঠিকাদার কনফিডেন্স গ্রুপ নিজেই কাজ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে বর্ষা মৌসুম হলেও এখন পর্যন্ত ব্লক তৈরীর কোন কাজই শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ইতিমধ্যে নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে কাজ করার প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হলেও এ বিষয়ে কোনো দেখভাল করছে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ।
বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম কাজের উদ্বোধন করে এ বিষয়ে ঠিকাদারদের কড়া নির্দেশ দিলেও মাঠ পর্যায়ে কাজের কোন বাস্তবায়ন নেই। এদিকে মৌসুম পরিবর্তিত হয়ে নদীর পানি বৃদ্ধি আরম্ভ হওয়ায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের সময় সীমা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। নদী তীর পানির দ্বারা ভরাট থাকলে যথাস্থানে কখনোই জিওব্যাগ স্থাপন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন একাধিক ঠিকাদার। এছাড়া ব্লক তৈরির জন্য কোন ধরনের সরঞ্জাম এখন পর্যন্ত প্রকল্পের স্থানে আনা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে কংক্রিটের ব্লক তৈরির কোন সুযোগও নেই। এর ফলে আগামী মৌসুম পর্যন্ত ব্লক তৈরির জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে কাজ না হওয়ায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য নির্ধারিত স্থান পূর্বের অবস্থানে না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও তৈরি হতে পারে জটিলতা ।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সুরুজ জানান, যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে প্রকল্পের যে ইস্টিমেট তার তুলনায় বাজারে মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তখন ঠিকাদাররা কাজ উঠিয়ে নেয়ার জন্য যেনতেনভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়। এতে কাজের মান যেমন ঠিক হয়না পাশাপাশি এলাকাবাসীরও কোন উপকার হয়না। আমরা চাই দ্রুত গতিতে অন্তত ভাঙ্গন থেকে যাতে এলাকা রক্ষা করা হয় এজন্য বালুর জিও ব্যাগ ফেলা হোক। অন্যথায় এত বড় প্রকল্পটির কোন সুফল এলাকাবাসী পাবে না । এ বিষয়ে কনফিডেন্স গ্রুওেপর প্রতিনিধি সমির পন্ডিত জানান দ্রুত যাতে কাজটি সম্পন্ন হয় এজন্য অঅমরা আরো ৩ জন ঠিকাদার নিয়োগ করেছিলাম । তারা কাজ করতে না পারায় ২ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন আমরা সরাসরি নিজেরাই কাজটি করার চেষ্টা করছি । তবে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যে ভাবেই হোক আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে পারেবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য বিদায়ী তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পরিচালক রমজান আলী প্রামানিক জানিয়েছেন আমরা ঠিকাদারদের বিভিন্নভাবে কাজটি যথাসময়ে শুরু করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তবে আমরা আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করা হবে।