3:27 pm , April 6, 2019

প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ভিসির পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষনা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষনা দেয় তারা। এর দুই ঘন্টা পূর্বে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বিসিসির মেয়রসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের বৈঠকের পর আন্দোলনের কর্মসুচী প্রত্যাহারের ঘোষনা দেয়া হয়। এমনকি সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বৈঠকের স্থান সার্কিট হাউসের সামনে ‘ভি’ প্রতীক দেখিয়ে আনন্দ উল্লাস করে শিক্ষার্থীরা। এ উল্লাস বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। মাত্র দুই ঘন্টা পর গতকাল শনিবার নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৬ টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষনা দিয়ে সমঝোতা বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্তের অপপ্রচারের অভিযোগও করেছে শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলেম বৈঠকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে একটা অংশ এসেছি। সকলের সাথে আলোচনা করে যে যেসব বিষয় উঠে আসবে, সেই বিষয় নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের উপর ভিত্তি করেই আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহ কিছু লোক আন্দোলন স্থগিতের অপ-প্রচার করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। আমরা স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই ভিসির পদত্যাগ কিংবা ছুটির বিষয়ে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। সে অনুযায়ী পূর্বের ন্যায় আজ রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। পাশাপাশি পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানালেও পূর্বে বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্তের সহমত প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত। এসময় তিনি সকলের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রী, মেয়র ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আমাদের দাবীগুলোর যথাযথা সমাধান পেয়েছি। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং আমাদের দাবী দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। যা আমরা পূর্বে কখনো পাইনি। যেহেতু পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সিটি মেয়র আমাদের আশ্বস্থ করেছেন যে ভিসি আর বরিশালে আসবেন না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছি’। সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সার্কিট হাউসের সামনে ‘ভি’ প্রতীক দেখিয়ে আনন্দ উল্লাস করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সার্কিট হাউস চত্ত্বর থেকে এক আনন্দ মিছিল বের করে। যা সদর রোড প্রদক্ষিণ করে। এর আগে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বরিশাল সার্কিট হাউসে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রশাসন, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে রুদ্ধতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসি’র পদত্যাগের দাবীতে যে আন্দোলন করছে তা সম্পূর্ন যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। বর্তমানে উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক এর আর অল্প কিছুদিন মেয়াদ আছে। তাই ওই সময় পর্যন্ত তিনি আর যাতে বরিশালে আসতে না পারে সে জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে জানাবো। তাকে যেন স্বেচ্ছায় ছুটিতে পাঠানো হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি আরো বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের তালা ও ডাইনিং খুলে দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতি শুরুর বিষয়ে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও রোববার থেকে নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম শুরু করবে বলে আমাদের আশ্বস্থ করেছেন। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ২২ দফা দাবী তুলে ধরেছেন। তাদের এই দাবীগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পর্যায়ক্রমে দাবীগুলো বাস্তবায়নের কাজ করবেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবী অনুযায়ী ববি’র সিন্ডিকেট কমিটিতে বরিশালের একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি চায় তবে শনিবার সন্ধার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ডাইনিং চালু করে দেয়া হবে। আর একাডেমিক ভবনের তালা খুলে দিলে প্রশাসনিক ও একাডিমিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। আশা করি রোববার সকাল থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে সমঝোতা বৈঠক চলাকালে সকাল থেকে নগরীর সার্কিট হাউস চত্ত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থী। তবে সমঝোতা বৈঠক শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাই নগরীতে আনন্দ মিছিল ও সার্কিট হাউস চত্ত্বরে ‘ভি’ প্রতীক দেখিয়ে উল্লাস করেন। বেলা ১১টায় থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রুদ্ধদার সমঝোতা বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২৬ জন প্রতিনিধি ছাড়াও পানি সম্পদ প্রতীমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন, বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, ডিজিএফআই’র কর্ণেল (জিএস) জিএম শরিফুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট এসএম ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আন্দোলন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেয়। এর প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো শিক্ষার্থীরা।
২৬ মার্চ থেকে তাদের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রধান, ডিসি অফিস ঘেরাও, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ, নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে লিখে ভিসি’র পদত্যাগ দাবী, ভিসি’র কুশপুত্তলিকা দাহ ও মশালমিছিল সহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এজন্য আন্দোলনের দু’দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ঘোষনা দিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।