3:23 pm , April 2, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোড। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ভঙ্গ করে একের পর এক বহুতল ভবন ভবন তৈরি হচ্ছে নগরীতে। অনেকেই আবার প্লানের বাইরে গিয়ে উপরে এবং পাশের অংশ বৃদ্ধি করছেন। নেই জরুরী বহির্গমন পথ ও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পর এ খাতে কিছুটা শৃঙ্খলা তৈরী হলেও পূর্বে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নির্মিত ভবন ঝুকিপূর্ন অবস্থায় চলছে কার্যক্রম। অগ্নিকান্ড কিংবা ভূমিকম্পসহ যে কোন দূর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল । নগরীর সচেতন বাসিন্দারা মনে করেন দূর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত অভিযানের মাধ্যমে ভবনগুলোতে প্রয়োনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। নগরী ঘুরে দেখা গেছে সিটি কর্পোরেশন থেকে ভবন নির্মাণের প্লান অনুযায়ী অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এক ধরণের প্লান পাশ করে পরবর্তীতে নির্মাণ করা হচ্ছে অন্যভাবে। বিশেষ করে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ অনুযায়ী যে কোন ভবনের তিন দিকে ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁকা জায়গা উম্মুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি সামনের দিকে অর্থাৎ সড়কের দিকে ৫ ফুট পরিমান উন্মুক্ত স্থান রাখতে হবে। আইনে বলা হয়েছে ভবনের সামনে যদি সরকারিসড়ক হয় তাহলে সেই সড়কের মধ্যবর্তী স্থান হতে ১৫ ফুট দূরত্বে ভবন নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু নগরীর অধিকাংশ ভবনেই এ ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না । স্বল্প যায়গায় সুউচ্চ এবং বেশী আয়তনের ভবন নির্মান করার প্রবনতায় প্রতিবেশীরা একে অন্যের সাথে সমোঝোতা করছে। কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না দেয়ায় বিষয়গুলো কতৃপক্ষের নজরে আসছে না। সাধরনভাবে দুইটি ভবনের মাঝখানে মোট ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উন্মুক্ত স্থান থাকার নিয়ম থাকলেও কোথাও এ নিয়ম মানতে দেখা যাচ্ছেনা। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে নির্ধারিত প্লানের অতিরিক্ত ভবনকে ঊর্ধ্বমুখী করার । সিটি কর্পোরেশনের প্লানিং সেলের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে জানা গেছে ৮, ৯ এবং ১০ তলা ভবনের সামনে বাধ্যতামূলক ২৫ ফুট সড়ক থাকতে হবে। কিন্তু নগরীতে প্রায় অর্ধশত এ ধরনের ভবন থাকলেও অধিকাংশ ভবনের সামনেই বৃহৎ সড়ক নেই। বিশেষ করে নগরীর জর্ডন রোড, সদর রোড, লাইন রোড, কলেজ এভিনিউ, এলাকায় একাধিক বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে । এমনকি সরু সড়কের পাশে সর্বোচ্চ ১৫ তলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । ঐ সময়ে প্লান পাশ করা ৭/৮ তলার অনেক ভবন রয়েছে সরু গলিতে। অপরদিকে ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তি পত্র প্রয়োজন হলেও শুধুমাত্র আবেদন করেই ভবন মালিকরা ভবন নির্মাণ এবং পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বহুতল ভবনে হোটেল, আবাসিক বাসা, মার্কেট ও হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মোঃ ফারুক হোসেন জানান, নগরীর বহুতল ভবনের মধ্যে মাত্র ৫/৬ টি ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিয়েছে। এছাড়া বাকি ভবনগুলো ৩/৪ বছর পূর্বে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত তারা অনুমোদন নেয়নি। শুধুমাত্র আবেদন করেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সকল ভবনে জরুরী নির্গমন বালুভর্তি বালতি, ষ্টিংগুইশার এবং ফায়ার ফাইটিং এর নিজস্ব ব্যবস্থা থাকার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। তিনি আরো জানান, বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে যে ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে তা দিয়ে ২০ ফুট পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ করতে সক্ষম। তবে এর পরেও আরো দুই এক তালা ঊর্ধ্বমুখী ভবনে অগ্নিনির্বাপণ করা সম্ভব । তবে সুউচ্চ ভবনে অবশ্যই নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং সিষ্টেম থাকতে হবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে যারা সরু সড়কের পাশে বহুতল ভবন পরিচালনা করছেন পাশাপাশি এ ধরনের ব্যবস্থা নিজস্ব ব্যবস্থা রাখছেন না অভিযানের মাধ্যমে তাদেরকে এ সকল অগ্নি নির্বাপক পদ্ধতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন । অন্যথায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া ১০/১২ তলা ভবনে অগ্নি নির্বাপনের জন্য সরকারিভাবেই খুব শীঘ্রই এলএলটি মেশিন বরিশালে আনা হবে। তাহলে সর্বোচ্চ ১৫ তলা পর্যন্ত ভবনে অগ্নিনির্বাপণ করা সম্ভব হবে বলেও জানান । এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নগরীতে যে সকল বহুতল ভবন রয়েছে তাদের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ সকল ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী কতৃপক্ষ অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি বহুতল ভবনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অতিরিক্ত দুই তালা ভেঙে দেয়া হয়েছে। এটিই অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে বরিশালে প্রথম কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের প্লানিং সেলে সিটি মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন যাতে কোনো ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে প্লান অনুমোদন না দেওয়া হয়। এ সকল ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের প্লানিং সেলের কর্মকর্তা হৈমন্তী শুক্লাকে মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে মহানগরীতে ইতিপূর্বে কোন ধরনের ভবন ধ্বসের ঘটনা না ঘটলেও দুইটি ভবন হেলে পড়েছে। ঐ ভবন দুইটিতে বাসিন্দারা এখনো বসবাস করছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন প্রায় অর্ধশত ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করলেও দীর্ঘদিনে ঐ সকল ভবন ভেঙ্গে ফেলার কোন উদ্যেগ গ্রহন করা হয়নি।