3:04 pm , March 27, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে উক্তি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকে গতকাল বুধবার দিনভর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় রাজাকারের বাচ্চা বলে করা ভিসি’র মন্তব্য প্রত্যাহার ও ভিসিকে স্বÑশরীরে এসে ক্ষমা চাওয়া সহ ৫ দফা দাবী তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। তাদের পাঁচ দফা দাবীর মধ্যে রয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সহ সকল জাতীয় দিবসগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক সবার উম্মুক্ত অংশগ্রহনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক পরিচালনা কমিটি শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত করা, সহশিক্ষা কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ শত টাকা করা এবং টিএ?স?সিবার সবার জন্য উম্মুক্ত রে?খে সেখা?নে ক্লাশ কার্যক্রম বন্ধ রাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্যাম্পাসে। কিন্তু ফুল দেয়া ছাড়া আর কোন অনুষ্ঠান (মধ্যাহ্ন ভোজ, চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) এ শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। বরঞ্চ এসব অনুষ্ঠানের বাইরে থেকে রাজনৈতিক নেতাদের দাওয়াত দিয়ে আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জহিরুল খান, শ?ফিকুল ইসলাম, লোকমান হো?সেন, আলীম সা?লেহীনসহ শিক্ষার্থীরা জানান, জাতীয় এই দিবসটিতে আমাদের ক্যাম্পাসে নানা আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু এটা সম্পর্কে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তারা ঘরোয়া ভাবে এই প্রোগ্রাম করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে হোস্টেলের খাবার সহ অন্য সকল কর্মসূচি বর্জন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করছিলোম। ঠিক তখন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিবেটিং ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে বক্ত দেয়ার সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাল থেকে ক্যাম্পাসে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এসময় ভিসিকে রাজাকার আখ্যায়িত করে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। যার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। তারা সকালে প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি ভিসি’র অপসারন দাবী জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে অপমান করেছে। এজন্য তাকে অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিব কেন। যারা আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতী-নাতনী। আমি যে অর্থে কথাটা বলেছি তার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এই আন্দোলন করা হচ্ছে দাবী করে ভিসি বলেন, ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে। তারাই শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। তাই বিভাগীয় প্রধানদের ডেকে এ বিষয়ে খোঁজ খবর সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন কর্মসূচিকে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ্য করে উপাচার্য বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে আমার আর দু’মাস বাকি আছে। পরবর্তীতে আমি আর যাতে এখানে উপাচার্য হয়ে না আসতে পারি সে জন্যই ষড়যন্ত্রমুলকভাবে এই আন্দোলন করা হচ্ছে বলে দাবী করেছেন তিনি।