2:54 pm , March 23, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সাথে ওজোপাডিকো’র বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো নাজুক পর্যায়ে। এখনো এক সময়ের গ্রামের পাঠশালার মত আকাশে মেঘ জমলেই ছুটি হয় বরিশালের বিদ্যুতের। অথচ সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও কোন বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই। ঘাটতি না থাকলেও সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থার ত্রুটির কারনেই ৩৩ কেভি ও১১ কেভি লাইন সহ পুরনো ও দুর্বল বিদ্যুৎ সরঞ্জামের সাথে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই গ্রাহকদের দূর্ভোগ বাড়ছে। তবে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র ২১টি জেলার সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আরো দুটি প্রকল্পের কাজ অনুমোদন পর্যায়ে। বরিশাল মহানগরীর লক্ষাধিক গ্রাহককে দুটি বিতরন ও বিক্রয় বিভাগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ওজোপাডিকো। এ দুটি বিভাগে প্রায় সাড়ে ৬শ ১১/.০৪ কেভি ট্রান্সফর্মারের সাথে সংযুক্ত বিপুল পরিমাণ এলটি লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হলেও তার বেশীরভাগই প্রায় ৩০ বছরের পুরনো। বিতরন ট্রান্সফর্মারগুলোরও প্রায় অর্ধেকই লোডসীমায় চলছে। যা আসন্ন পূর্ণ গ্রীষ্ম মৌসুমে ওভারলোড হয়ে যেতে পারে। আরো অন্তত ২০ভাগ ট্রান্সফর্মার ওভারলোড হয়ে আছে। লো-টেনশন এবং হাই-টেনশন লাইনগুলোও পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এমনকি এ মহানগরীতে রূপাতলী, কাশিপুর ও পলাশপুর ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনগুলো থেকে সবগুলো ১১ কেভি লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও সে সব সাব-স্টেশনের অবস্থাও রাজুক। এর মধ্যে রূপাতলী সাব-স্টেশনের পূণর্বাসন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অপর দুটির কাজ আগামী শীত মৌসুমের আগে শুরু হচ্ছে না। এসব সাব-স্টেশনের ট্রান্সফর্মার থেকে ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনগুলো পর্যন্ত খুবই নাজুক পর্যায়ে।
এর মধ্যে কাশীপুর-রূপাতলী ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৩ কেভি লাইনের পূণর্বাসন কাজ শুরু হলেও গ্রীষ্ম মৌসুমের আগে তার অর্ধেকও শেষ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত মাত্র ৩ কিলোমিটার লাইনের তার ও পোল পরিবর্তন হয়েছে। নগরীর লোটেনশেন-এলটি লাইনগুলোর অবস্থাও খুব ভাল নয়। ১১/.০৪ কেভি ট্রান্সফর্মারগুলো নিরপত্তার জন্য যে ড্রপ আউট লাগানো রয়েছে তার সবই ত্রুটিপূর্ণ। কোন ট্রান্সফর্মারের বহির্গামী এলটি লাইনে এমসিপি নেই। এর সাথে বিভিন্ন কেবল অপারেটর সহ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের তার জড়িয়ে থাকায় এ নগরীর প্রতিটি বিদ্যুৎ খুটি এখন মরনফাঁদে পরিনত হয়েছে। প্রায়শই এসব অবৈধ তার দিয়ে আগুন ধরছে বিদ্যুৎ লাইনে। উপরন্তু গোটা নগরীতে মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে থাকা কেবল টিভি ও ইন্টারনেট লাইনের এমপ্লিফায়ারের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও তা নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও খুব একটা তৎপড় নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ নগরীর বিতরণ ট্রান্সফর্মারগুলোর তেল পরিবর্তন সহ এর সংযোগ এবং এলটি লাইনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছেনা। ফলে বিতরনগত ত্রুটি এ নগরীর একটি নিয়মিত ঘটনা। এমনকি ৩৩ কেভি লাইনে পর্যন্ত ত্রুটি লেগে থাকছে। এসব লাইনের বাসবার, ব্রেকার, ইনসুলেট ও পিন সহ বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ সরঞ্জামের বেশীরভাগই ত্রুটিপূর্ণ ও দীর্ঘদিনের পুরানো।
গলদ রয়েছে বরিশাল-বাগেরহাট-খুলনা ১৩২ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট ও বরিশাল-ফরিদপুর-ভেড়ামাড়া ১৩২ কেভি ডবল সার্কিট লাইনগুলোতেও। প্রায় তিন যুগের পুরনো এসব সঞ্চালন লাইনের ওপরই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরন ব্যবস্থা নির্ভরশীল। গত রবিবার রাতে মাত্র ২০ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়ায় বরিশাল-ফরিদপুর-ভেড়ামাড়া সঞ্চালন লাইনটি ট্রিপ করে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পরে। এরই রেশ ধরে বরিশালে ১১০ মেগাওয়াট ও ভোলাতে ২২৫ মেগাওয়াটের দুটি পাওয়ার স্টেশনও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রাতভরই সমগ্র বিদ্যুৎ নিয়ে চরম দূর্ভোগে ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ। একই সাথে নগরীর কাশীপুর ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনের সাথে সংযুক্ত হাতেম আলী কলেজ ফিডারটিতেও রাতভর গোলযোগ অব্যাহত ছিল। শুক্রবার রাতেও মাত্র ১৫কিলোমিটার বেড়ের ঝড়ো হাওয়ায় মহানগরীরর কাশীপুর ও পলাশপুর ৩৩কেভী সঞ্চালন দুটি ট্রিপ করে। কিন্তু ঝড় থামলেও এক অজ্ঞাত কারেন রাত ১০টা পর্যন্ত এ দুটি সঞ্চালন লাইন চালু করে নগরীতে বিদ্যুৎ সরবারহ পূণর্বহাল করা হয়নি।
জনবল সংকটও বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হয়ে আছে। বরিশাল মহানগরীর প্রায় ২২টি ১১/.০৪ কেভি ফিডারের জন্য সম পরিমান উপ-সহকারী প্রকৌশলী মর্যাদার ফিডার ইনচার্জ থাকার কথা থাকলেও তার প্রায় ৪০ ভাগ পদ শূণ্য।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র বরিশাল-এর বিতরন ও বিক্রয় বিভাগ এবং সার্কেলের উর্ধতন প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করা হলে তারা সকলেই দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন।