মরণ নেশা ইয়াবার সাগরে ভাসছে নগরী মরণ নেশা ইয়াবার সাগরে ভাসছে নগরী - ajkerparibartan.com
মরণ নেশা ইয়াবার সাগরে ভাসছে নগরী

2:45 pm , March 16, 2019

রুবেল ॥ মরণ নেশা ইয়াবার সাগরে ভাসছে মহানগরী। এমন কোন পাড়া, মহল্লা কিংবা গলি নেই যেখানে পৌছায়নি এ নেশা দ্রব্য। চায়ের দোকান থেকে বেড রুম পর্যন্ত হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে এ মরণ ঘাতক। মদ, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ মাদকের বাজার দখল করে নিয়েছে ইয়াবা ট্যাবলেট। ফলে মাদকসেবীরা ইয়াবা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। ধ্বংস হচ্ছে কিশোর ও যুব সমাজ। এদিকে ইয়াবার সহজলভ্যতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও সাড়াসি অভিযান নেই প্রশাসনের। মাস কয়েক পূর্বে তাদের অভিযানের কারনে মাদকের প্রচলন কমে আসলেও তা আবার সাবেক স্থানে ফিরেছে। তাছাড়া পুলিশ এবং ডিবি’র অভিযানে মাঝে মধ্যে নামে মাত্র ইয়াবা উদ্ধার হলেও ধরা পড়ছে না মাদকের গড ফাদাররা। যদিও সম্প্রতি কয়েকটি অভিযানে নগরী সহ জেলার বিভিন্ন স্থান হতে ইয়াবা সহ মাদকের গড ফাদারদের গ্রেফতারে সক্ষম হয়ে র‌্যাব-৮। তবে এর পরেও থামানো যাচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ত।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মাত্র এক দেড় বছর আগেও নগরীর মাদক সা¤্রাজের কুইয়ুন ছিলো ফেন্সিডিল। নতুন বাজার, কাউনিয়া’র বিসিক, মনষাবাড়ির গলি, বাসের হাট, পলাশপুর, রূপাতলী, ভাটিখানা, নাজিরেরপুল, কাশিপুর ফিশারী রোড, রহমতপুর, গড়িয়ারপাড়, নবগ্রাম রোড, সাগরদী ব্রাঞ্চ রোড, রূপাতলী, কাগাসুরা, চরবাড়িয়া, রসুলপুর বস্তি, কেডিসি, ঈদগাহ ও স্টেডিয়াম কলোনী, রেডিওসেন্টার এবং কালিজিরা সহ চিহ্নিত মাদক স্টপ গুলোতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত গাঁজা এবং ফেন্সিডিল। কিন্তু এক দেড় বছরের ব্যবধানে এসব এলাকায় স্পট গুলোতে গাঁজা এবং ফেন্সিডিলের অবস্থান নেই বললেই চলে। এখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ধরণ পাল্টে নিয়েছে। গাঁজা ও ফেন্সিডিল রেখে তারা এখন ইয়াবা ব্যবসায় ঝুকছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফেন্সিডিল এবং গাঁজা ব্যবসায়ী ঝুঁকি বেশি। কেননা এগুলো বহন করতে ঝামেলা হয়। তবে ইয়াবার ব্যবহার খুবই সহজ। একটি দিয়াসলাইয়ের প্যাকেটে কম করে হলেও ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বহন করা যায়। যার মূল্য সর্বনি¤œ ৩শ টাকা করে হলেও ১৫ হাজার টাকা।
ওই মাদক ব্যবসায়ীরা বলেন, ইয়াবা বহনে ঝুঁকি কম। তার মধ্যে লাভও বেশি। ভ্রাম্যান ব্যবসায়ীরা দু’পিস ইয়াবা বিক্রি করলে ১০০ টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে এক পিস ইয়াবা বিক্রি করলেও ১০০ টাকা পেয়ে থাকে। তাছাড়া পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরতে এলে ইয়াবার প্যাকেট দুড়ে কোথাও ছুড়ে ফেলা যায়। ফলে পুলিশের হাত থেকেও খুব সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়। বিধায় অন্যান্য মাদক ছেড়ে এখন ইয়াবা ব্যবসার দিকেই ঝুকছে ব্যবসায়ীরা। আর অন্যান্য মাদকে ক্রেইসিস হওয়ায় সেবনকারিরাও বাধ্য হয়ে ইয়াবা ট্যাবলেটকেই নেশা দ্রব্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে নগরীর নথুল্লাবাদ, জিয়া সড়কের যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম রাজা, ফিশারী রোডের ফিশারী শাহীন, হারবাল কামাল, নতুন বাজারের হারুন ও বেবী দম্পতি। তাদের সন্তান আরিফ ও আকাশ, সদর উপজেলার কাগাসুরার ছত্তার সিকদার, কাউনিয়া বিসিকের তাঁত সোহেল, সোনা কাওসার, বাঁস রফিক, নাজিরের পুলের মুরাদ, বরিশাল নগরী ও ঝালকাঠি জেলার তালিকাভুক্ত মাদক স¤্রাট সান্টু ও তার সহোদর শাহ আলম, কেডিসি কলোনীর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নাসিমা, টুলু, তাদের মাদক ব্যবসার অন্যতম সহযোগী নাসির বেপারী ও রহমান, আলামীগর ওরফে ডাক্তার আলমগীর, জেলা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের স্ত্রী লাবনী ও মাদক স¤্রাজ্ঞি তাসলি। বালুর মাঠের মাসুম ওরফে লাম্বা মাসুম ও ফরহাদের ছেলে বাবুল। নগরীর রসুলপুর চর কলোনীর মৃত শামীম এর স্ত্রী শাহনাজ বেগম ও মনির হোসেন, রূপাতলীর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্নের বাসিন্দা সোহেল, উকিল বাড়ি সড়কের সহিদুল ও মনির ওরফে হাত কাটা মনির, বাংলাদেশ বেতার বরিশাল এলাকার মতিউর রহমান মতি তার সহযোগী মিজান মাঝি। উকিল বাড়ি সড়কের জুয়েল ও ২৫নং ওয়ার্ড বটতলা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আরিফ। নগরীর বগুরা রোড মুন্সি গ্যারেজের রায়হান, ফয়সাল, কাউনিয়ার ল্যাংরা জামাল, জালিয়াবাড়িরপুল এলাকার চাচা জামাল, পশ্চিম কাউনিয়ার দুলাল, পলাশপুরের হানিফ এর স্ত্রী মুন্নি, মোহাম্মদ পুরের জনি, পলাশপুরের বালা সুমন, মান্না সুমন, গগণ গলির আল আমিন ওরফে আক্কা আলামীন, নাগর হাওলাদার, পলাশপুর ২নং গলির শাহীন ও তার স্ত্রী মুন্নি, হাটখোলা হকার্স মার্কেট এলাকার মামুন, সাগরদী ব্র্যাঞ্চ রোডের রবী শীল সহ একাধিক মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ইতিপূর্বে ফেন্সিডিল ও গাঁজা বিক্রেতা ছিলেন। এরা সবাই এখন ইয়াবা বিক্রেতা। এদের মধ্যে কেউ মাদকের গড ফাদার আবার কেউ খুচরা বিক্রেতা হিসেবে রয়েছেন। যদিও এদের মধ্যে নারী মাদক ব্যবসায়ী সহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে বলে দাবী করেছে। তবে গোপন সূত্র বলছে, পুলিশের কাছে আত্মসমর্পনের নাটক সাতিয়ে গোপনে মাদক ব্যবসা করছে। র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে মাদক পাচারের রুট হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। সাগর পথে মায়ানমার থেকে আসছে ইয়াবার চালান। যা কুয়াকাটা হয়ে বরিশাল নগরী এমনকি রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে। তাছাড়া মাদক পাচারের অপর একটি রুট হিসেবে গোপালগঞ্জ সড়ক ও ভুরঘাটা সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি কালিজিরা সংলগ্ন নদী ও বাকেরগঞ্জ তুলাতলি নদী, কীর্তনখোলা নদীর রসুলপুর ও পরিত্যাক্ত সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, আদম আলী হাজী’র ইটের ভাটা সংলগ্ন বটতলা মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে এসব রুটে প্রতিদিনই মাদকের চালান আসছে। এসব রুটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদাবী বৃদ্ধি পেলে মরণ নেশা ইয়াবা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT