উদ্বোধনেই থমকে রয়েছে কীর্তনখোলার ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষা প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনেই থমকে রয়েছে কীর্তনখোলার ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষা প্রকল্পের কাজ - ajkerparibartan.com
উদ্বোধনেই থমকে রয়েছে কীর্তনখোলার ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষা প্রকল্পের কাজ

3:36 pm , March 13, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উদ্বোধনেই থমকে রয়েছে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেয়া প্রকল্পের কাজ। উদ্বোধনের প্রায় এক মাস পরেও তিন ভাগে বিভক্ত এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার উপক্রম হলেও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের কাজই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে নদীর পানি বেড়ে কাজ করার প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হলেও কোনো দেখভাল করছে না পাউবোর কর্মকর্তারা। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম’র ঠিকাদারদের কড়া নির্দেশ দিলেও মাঠ পর্যায়ে কাজের কোন বাস্তবায়ন নেই। দৈনিক আজকের পরিবর্তন এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম কাজের উদ্বোধন করেন। চরবাড়িয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্প শীর্ষক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এর দপ্তর বাংলাদেশ নৌ বাহিনী পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পেয়েছে। কিন্তু খুলনা শিপইয়ার্ড ঠিকাদার হিসেবে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স গ্রুপকে নিয়োগ দেয়। কনফিডেন্স গ্রুপ দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মোট ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্পটির প্রকল্প এলাকাকে তিনটি ভাগ করে। এই জন্য তারা তিনজন ঠিকাদারকে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়। এতিন প্রতিষ্ঠান হল ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার এফআর ট্রেডার্স, ফারিদি এন্টারপ্রাইজ এবং জেডিয়াক কনষ্ট্রাকশন। অনুসন্ধানে জানা গেছে এফআর ট্রেডার্সের শাজাহান জমাদ্দার নামক চাঁদপুরের এক ব্যক্তিকে পুনরায় সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। ফারিদি এন্টারপ্রাইজের জাকির খান সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে গুঠিয়ার এক ব্যক্তিকে। অপর প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত কার্য এলাকায় আসেনি। প্রকল্পের কার্য এলাকার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েক স্থানে একাধিকবার গিয়ে দেখা গেছে, জিও ব্যাগ তৈরীর জন্য এফআর ট্রেডার্স একটি বার্জ, কিছু বালু ও ইট এনেছেন। এছাড়াও তাদের একটি অফিস কক্ষ তৈরি করে বিদ্যুত সংযোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার মোহাম্মদ সজীব এবং মোহাম্মদ জসি জানান, ইতিমধ্যে শ্রমিক নেয়া এবং কাজ শুরু করার জন্য সাব কন্টাক্টর নিয়োগ করা হয়েছে। যে বার্জের উপরে জিও ব্যাগ ভরা হবে ওই বার্জটি সাইডে আনলেও মেরামত প্রয়োজন। এজন্য কিছুটা সময় লাগছে। তবে এফআর ট্রেডার্স প্রস্ততি নিলেও অপর সাব কন্ট্রাক্টর ফারিদি এন্টারপ্রাইজ এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করার জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারা যে ব্যক্তিকে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ করেছেন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তিনি এখন পর্যন্ত প্রকল্পের স্থানটিও চেনেন না। এমনকি তার কোন ধরনের লাইসেন্স কিংবা এ ধরনের কাজ করার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই।
এদিকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত জাহিদ ফারুক শামীমের কাজের উদ্বোধন করার জন্য জিও ব্যাগ তৈরি করে রাখা হয়। এরপর প্রতিমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আর সেখানে কোন কাজ হয়নি। এমনকি কোন ধরনের মালামালও সেখানে নেওয়া হয়নি। অপরদিকে মৌসুম পরিবর্তিত হয়ে নদীর পানি বৃদ্ধি আরম্ভ হওয়ায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের সময় সীমা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। নদী তীর পানিতে তলিয়ে গেলে যথাস্থানে কখনো জিওব্যাগ স্থাপন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন একাধিক ঠিকাদার। এছাড়া ব্লক তৈরির জন্য কোন ধরনের সরঞ্জাম এখন পর্যন্ত প্রকল্পের স্থানে আনা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে কংক্রিটের ব্লক তৈরির কোন সুযোগও নেই। এর ফলে আগামী মৌসুম পর্যন্ত ব্লক তৈরির জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে কাজ না হওয়ায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য নির্ধারিত স্থান পূর্বের অবস্থানে না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও তৈরি হতে পারে জটিলতা ।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সুরুজ জানান, যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে প্রকল্পের যে ইস্টিমেট তার তুলনায় বাজারে মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তখন ঠিকাদাররা কাজ উঠিয়ে নেয়ার জন্য যেনতেনভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়। এতে কাজের মান যেমন ঠিক হয়না পাশাপাশি এলাকাবাসীরও কোন উপকার হয়না। আমরা চাই বর্ষা মৌসুমের আগে অন্তত ভাঙ্গন থেকে যাতে এলাকা রক্ষা করা হয় এজন্য বালুর জিও ব্যাগ ফেলা হোক। অন্যথায় এত বড় প্রকল্পটির কোন সুফল এলাকাবাসী পাবে না। এ বিষয়ে কনফিডেন্স গ্রুওেপর প্রতিনিধি সমির পন্ডিত জানান, কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে আরো ৩ জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনোও কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যে ভাবেই হোক কাজটি সম্পন্ন করতে পারেবো। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পরিচালক রমজান আলী প্রামানিক জানিয়েছেন, আমরা ঠিকাদারদের বিভিন্নভাবে কাজটি যথাসময়ে শুরু করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছি। তবে আমরা আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT