জেলায় শতাধিক ইটভাটার মধ্যে বৈধ ১৭টি জেলায় শতাধিক ইটভাটার মধ্যে বৈধ ১৭টি - ajkerparibartan.com
জেলায় শতাধিক ইটভাটার মধ্যে বৈধ ১৭টি

3:32 pm , March 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জেলায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাঙ এর ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এসব অবৈধ ভাটা। কাগজে-কলমে জেলায় বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১১৬টি হলেও বাস্তবে তার সংখ্যা দুই শতাধিক বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। যেখানে ইট তৈরীতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ এবং কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতাও। এদিকে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠলেও সে বিষয়ে সুদৃষ্টি নেই পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। দুটি দপ্তরই মাঝে মধ্যে অভিযানে নেমে ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া সহ জেল জরিমানা করলেও পরবর্তীতে আর খোঁজ রাখছেন না। ফলে অভিযানের পর পরই বন্ধ করে দেয়া ইটভাটা গুলোতে পুনরায় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এমন অভিযোগের কয়েকটি বাস্তব প্রমানও মিলেছে। তবে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে রহস্যজনক কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বরিশাল জেলায় কাগজে কলমে বৈধ এবং অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১১৬টি। তবে এর মধ্যে মাত্র ১৭টি ইটভাটায় রয়েছে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স সহ অন্যান্য বৈধ কাগজপত্র। বাকি গুলোর কয়েকটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চললেও বেশিরভাগ ভাটাতেই নেই নেই কোন কাগজপত্র।
তাছাড়া ড্রাম চিমনীর বৈধ এবং অবৈধ প্রায় সকল ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটার পাশেই অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে স্ব-মিল। যেখানে গাছ কেটে লাকড়ী বানিয়ে তা পোড়া হচ্ছে ইট তৈরীর কাজে। তাছাড়া ইট তৈরীর মাটির জোগান দেয়া হচ্ছে ফসলী জমি থেকে। ফলে কমে যাচ্ছে ফসলী জমির উর্ভরতাও। ইটভাটার আশপাশের গাছপালার মৃত্যু হচ্ছে। এদিকে জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে জোড়ালো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের। রহস্যজনক কারনে তারা ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। আবার মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানে অবৈধ ইটভাটা নামে মাত্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অভিযান শেষ হওয়ার পরই বন্ধ করে দেয়া ইটভাটা পুনরায় চালু হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে সে দিকে সৃষ্টি দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এমন দায়সারা অভিযান শুধুমাত্র পরিবেশ অধিদপ্তরই করছে না। জেলা প্রশাসনের অভিযানও একইভাবে হচ্ছে। একবার অভিযান চালিয়ে ভাটা বন্ধ করে দেয়া ও জেল জরিমানার পরে সে দিকে আর খোঁজ নিচ্ছেন না জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের জুডিশিয়াল শাখার তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ১লা জানুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল সদর ও বাবুগঞ্জ উপজেলা সহ মোট ৭টি ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ অভিযানে মোট ১৫টি মামলা ও ১৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারী থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৩৫টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে তারা। এসময় বরিশাল জেলায় ছয়জন সহ মোট ৭ জনকে পৃথক মেয়াদে কারাদন্ড ও ১৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সরেজমিনে বরিশাল সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে এমএনবি ব্রিকস, টাটা ব্রিকস, বাবুগঞ্জের আরো চারটি ইটভাটা ঘুরে দেখাগেছে গত ফেব্রুয়ারীর মধ্যবর্তি সময়ে ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এর প্রতিটি ইটভাটাতেই পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম চলছে। স্ব-মিলে গাছ কেটে লাকড়ি বানিয়ে পোড়া হচ্ছে ড্রাম চিমনীর ইটভাটায়। অবৈধ ভাটায় ইট তৈরী করে আয় করে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এতে নিজেরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ এবং রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
যদিও এ পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ইটভাটায় ইট তৈরীর কার্যক্রম চলছে বলে দাবী সংশ্লিষ্ট ইটভাটার। ইটভাটা মালিক সমিতির মাধ্যমে তাদের ম্যানেজ করা হয় বলে গোপন সূত্র জানিয়েছে। এর বাইরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজসেও অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, আমাদের জনবল কম। তার ওপর আমাদের বিচারিক ক্ষমতা ছিলো না। বিধায় জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে নিয়ে তাদের সময় মত অভিযান করতে হয়েছে। ফলে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে আমি নিজেই তিনটি ইটভাটায় অভিযান করেছি। সেগুলো শুধুমাত্র বন্ধ করেই দেয়া হয়নি, তিনটি ইটভাটার সাত জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে। সে ইটভাটা গুলো এখন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে যে ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে সেগুলো এখনো কিভাবে চলছে তা বোধগম্য নয়।
অভিযানের পরে ফের ইটভাটার কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইটভাটাগুলো আমরা মনিটরিং করে দেখছি। পর্যায়ক্রমে সেগুলোতে আবারো অভিযান পরিচালনা করা হবে। কেননা এখন আর ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য বসে থাকতে হবে না। আমাদের (পরিচালক) বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাই আমি নিজেই এখন থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। অপরদিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, কিছু ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সামনেও হবে। তবে যে ইটভাটাগুলো একবার বন্ধ করে দেয়ার পরে পুনরায় চালু করা হয়েছে সে গুলোতে পুনরায় অভিযান করে মালিক পক্ষকে সাজা প্রদান করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কেননা যেসব এলাকায় এইটভাটা অবস্থিত সেগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় নিয়মিত খোঁজ মনিটরিং করাটা সম্ভব হচ্ছে না।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT